কানাইঘাটে গণঅধিকার পরিষদের মিছিল ও পথসভা পণ্ড করে দিয়েছে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। অবরুদ্ধ অবস্থায় গণঅধিকার পরিষদের ১৭ নেতাকর্মীকে পুলিশ হেফাজতে থানায় নিয়ে আসার পর বুধবার (১ জুন) রাত নয়টার দিকে মুচলেকার মাধ্যমে তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হয়।

জানা যায়, বুধবার বিকেল ৩টার দিকে ২৫-৩০ জন নেতাকর্মী নিয়ে প্রথমবারের মতো কানাইঘাট বাজারে গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা সরকারবিরোধী বিভিন্ন প্লেকার্ড নিয়ে দক্ষিণ বাজার থেকে মিছিল বের করে। পরে উত্তর বাজারে পথসভা করার সময় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাদের উপর চড়াও হয়। এসময় গণঅধিকার পরিষদের কর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে আন্-নুর টাওয়ার সহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে আশ্রয় নিলে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা তাদের অবরুদ্ধ করে রাখেন। হামলায় গণঅধিকার পরিষদের দুই কর্মীর মাথা ফেটে গিয়ে জখম হয়, আহত হন আরও কয়েকজন ।

একপর্যায়ে থানা পুলিশ আন-নুর টাওয়ারে গিয়ে আওয়ামী লীগের কয়েকজন সিনিয়র নেতা, বাজার বণিক সমিতির নেতৃবৃন্দ ও ছাত্রলীগের দায়িত্বশীল নেতাকর্মীদের শান্ত করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনে অবরুদ্ধ গণঅধিকার পরিষদের ১৭ নেতাকর্মীকে থানায় নিয়ে আসে পুলিশ।

থানা থেকে যাদের ছেড়ে দেওয়া হয়, তাদের মধ্যে গণঅধিকার কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সদস্য সচিব আব্দুল্লাহ আল-মামুন, সিলেট জেলা ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি রাহাত নেওয়াজ চৌধুরী, সিলেট জেলা যুব অধিকার পরিষদের সদস্য সচিব জুবায়ের আহমদ তোফায়েল সহ গণঅধিকার পরিষদ, যুব অধিকার পরিষদ ও ছাত্র অধিকার পরিষদের কানাইঘাট ও জকিগঞ্জ উপজেলার নেতৃবৃন্দ রয়েছেন।

তবে প্রথমবারের মতো ভিপি নুরের দল গণঅধিকার পরিষদের মিছিল নিয়ে পরস্পর বিরোধী খবর পাওয়া গেছে। প্রত্যক্ষদর্শী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বাজার বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হেকিম শামীম, পৌর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক খাজা শামীম আহমদ শাহিন, উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক এনামুল হক, ছাত্রলীগ নেতা আশরাফ চৌধুরী, শাহেদ আহমদ, কানাইঘাট সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আব্দুর রহমান, পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি রোমান আহমদ নোমান জানান, গনঅধিকার পরিষদের কয়েকজন নেতাকর্মী বাজারের সরকারবিরোধী নানা ধরনের স্লোগান দিয়ে প্লেকার্ড বহন করে উত্তর বাজারে পথসভা চলাকালে গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দকে নিয়ে চরম কটুক্তিমূলক বক্তব্য দিচ্ছিল। এ সময় সাধারণ জনতা তাদের প্রতিহত করে তাড়িয়ে দিলে তারা আন-নূর টাওয়ারে গিয়ে আশ্রয় নেয়। প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কটুক্তির সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে আওয়ামীলীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পরে দলের দায়িত্বশীল নেতাকর্মীরা জনতার হাত থেকে তাদেরকে বাঁচাতে পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হয়।

অপরদিকে পুলিশ হেফাজতে থাকা গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা জানান, গত কয়েকদিন থেকে কানাইঘাটের বন্যা দুর্গত বিভিন্ন এলাকায় গণঅধিকার পরিষদের উদ্যোগে বন্যার্তদের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ অব্যাহত ছিল। গত মঙ্গলবার (৩১ মে) সুরইঘাট এলাকায় তাদের এক কর্মীকে ক্ষমতাসীন দলের কয়েকজন কর্মী মারধর করে ফেসবুকে তার কানধরে উটাবসার ছবি ছড়িয়ে দিলে এ ঘটনার প্রতিবাদে কানাইঘাট বাজারে তারা শান্তিপূর্ণ মিছিল বের করেন। মিছিল শেষে উত্তর বাজারে পথসভা চলাকালে আওয়ামীলীগ-ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাদের উপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে তাদের সংগঠনের ৫-৬ জন নেতাকর্মীকে গুরুতর আহত করে। তাদের মধ্যে ছাব্বির আহমদ নামে একজন এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাদের অবরুদ্ধ করে রাখলে পুলিশ এসে তাদের সেখান থেকে থানায় নিয়ে আসে।

এ ব্যাপারে কানাইঘাট সার্কেলের এএসপি আব্দুল করিম স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেন, গণঅধিকার পরিষদের ২০ জনের নেতাকর্মী কানাইঘাট বাজারে মিছিল বের করলে মিছিল থেকে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে স্লোগান দিলে আওয়ামীলীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে মারাত্মক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় গণঅধিকার পরিষদের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী আন-নূর টাওয়ারে অবরুদ্ধ অবস্থায় থানা পুলিশ তাদের উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। জিডি মূলে মুচলেকার মাধ্যমে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়েছে।