বিয়ানীবাজার উপজেলার খাড়াভরা গ্রামে ব্যক্তি মালিকানাধীন সড়কের নির্মাণাধীন গাইড ওয়ালের পাশে রাতের আঁধারে উন্নয়ন কাজের ভিত্তিফলক স্থাপন এবং প্রতিবাদের মুখে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তা অপসারণের ঘটনায় এলাকাজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। এলজিএসপি প্রকল্প-৩-এর অর্থায়নে গাইড ওয়াল নির্মাণকাজ না করেই ভিত্তিফলক স্থাপন করে অভিনব কায়দায় সরকারি টাকা আত্মসাৎ করার কৌশল নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন স্থানীয়রা।

সাবেক ইউপি সদস্য ও ব্যক্তিগত সড়কে গাইড ওয়াল নির্মাণে অর্থায়নকারী সাহাব উদ্দিন তেরা অনিয়ম, দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ তুলে গতকাল রোববার সকালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং দুপুরে সিলেটের জেলা প্রশাসক বরাবর পৃথক অভিযোগ দায়ের করেন। এর আগে শনিবার দুপুরে গ্রামবাসী কাজ বাস্তবায়ন না করে অন্যের বাস্তবায়িত কাজের স্থলে ফলক স্থাপন করে সরকারি টাকা আত্মসাৎ করার পরিকল্পনার প্রতিবাদ জানান।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত শুক্রবার ভোরে খাড়াভরা গ্রামের পাকা সড়ক থেকে নিজ বাড়ির ব্যক্তিগত সড়কের সংযোগস্থলের গাইড ওয়ালের পাশে উন্নয়ন ফলক দেখতে পান সাহাব উদ্দিন। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সুজন এন্টারপ্রাইজের উন্নয়ন ফলকে লেখা রয়েছে, ‘অর্থায়ন ২০১৯-২০ সন, বাস্তবায়ন ২০২০-২১ এবং খাড়াভরা সড়কের পিচ থেকে তেরা মিয়ার বাড়ি পর্যন্ত গাইড ওয়াল নির্মাণ।’ এ ঘটনাটি সাহাব উদ্দিন তেরা তাৎক্ষণিক গ্রামবাসীকে জানালে এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়। শুক্রবার রাতে স্থাপন করা উন্নয়ন ফলকটি দেখতে শনিবার দুপুরে গ্রামের লোকজন জড়ো হন। এ সময় গ্রামবাসীর সামনে ফলক ভেঙে নিয়ে যায় খাড়াভরা গ্রামের সুনু মিয়ার ছেলে রহিম উদ্দিন।

অভিযোগকারী সাহাব উদ্দিন বলেন, ‘গাইড ওয়াল নির্মাণে আট লাখ টাকা ব্যয় করেছি। কিন্তু শুক্রবার ভোরে হাঁটতে বের হয়ে দেখি সড়কের প্রবেশমুখে উন্নয়ন ফলক স্থাপন করা হয়েছে। টাকা ব্যয় করলাম আমি, আর ফলকে অর্থায়ন লেখা এলজিএসপি-৩ প্রকল্প।’ তিনি এ অভিনব প্রতারণার সুষ্ঠু তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সিলেটের জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে দাবি জানান।

গ্রামের বাসিন্দা ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পলাশ আফজল বলেন, ‘সরকারি টাকা আত্মসাৎ করতেই এ রকম প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও ইউনিয়ন পরিষদের দায়িত্বশীলরা। এ রকম দুর্নীতি-অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।’

প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সচিব দাবি করে ইউপি (সংরক্ষিত) সদস্য শেফা বেগম বলেন, ‘এ প্রকল্প বাস্তবায়নে আমাকে সচিব রাখা হলেও আমি কিছুই জানি না।’

উপজেলা প্রকৌশলী হাসানুজ্জামান বলেন, এলজিএসপি প্রকল্পের সব কাজ বাস্তবায়ন করে সংশ্নিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ। তাই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সুজন এন্টারপ্রাইজ বিষয়ে আমাদের কোনো ধারণা নেই। উপজেলা প্রকৌশল অফিসের তালিকায় এ নামের কোনো ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান নেই।

দুবাগ ইউনিয়ন পরিষদ সচিব আলাউদ্দিন বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সুজন এন্টারপ্রাইজের পরিচালক সুজন আহমদ। তবে তিনি এ প্রতিষ্ঠানের কার্যালয়ের ঠিকানা কিংবা মুঠোফোন নম্বর দিতে পারেননি। তিনি বলেন, তেরা মিয়ার মৌখিক আবেদনের ভিত্তিতে পরিষদের সভায় এ কাজের অনুমোদন দেওয়া হয় এবং সিদ্ধান্ত হয় তেরা মিয়া নিজে কাজ বাস্তবায়ন করবেন।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে দুবাগ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম বলেন, তেরা মিয়ার বাড়ির যাতায়াত রাস্তায় গাইড ওয়াল নির্মাণের জন্য মৌখিক আবেদন করেছিলেন। আমরা তাকে একটি প্রকল্প থেকে দুই লাখ টাকা দেওয়ার আশ্বাস দিই। কাজ তিনি নিজে বাস্তবায়ন করবেন। সে জন্য আমরা গাইড ওয়াল নির্মাণ হলে এখানে উন্নয়ন ফলক স্থাপন করি। কিন্তু তার পরিবার আপত্তি তুললে তিনি সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন। বিষয়টি আমাকে জানালে স্থানীয় ইউপি সদস্য সুলতান মাহমুদ চৌধুরীকে দিয়ে ফলকটি উঠিয়ে নিয়ে আসি। আমরা ইউনিয়নের অন্য জায়গায় এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করব।

বিয়ানীবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মৌসুমী মাহবুব বলেন, অভিযোগটি তদন্ত করা হবে। ঘটনার সত্যতা পেলে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিয়ানীবাজারে মোবাইলের দোকানে ক্রেতা সেজে চুরি