প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে চা শিল্প মালিকদের বৈঠকে দৈনিক মজুরি ১৭০ টাকা নির্ধারণের পর চা শ্রমিকরা কাজে যোগ দিয়েছেন। রবিবার (২৮ আগস্ট) সকালে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার ভাড়াউড়া, ভুরভুরিয়া ও খাইছড়া চা বাগানে শ্রমিকদের কাজ করতে দেখা গেছে। তবে সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় অনেক বাগানের শ্রমিক কাজে যাননি। শুধু মৌলভীবাজার নয়, সিলেট, হবিগঞ্জ ও চট্টগ্রামের চা শ্রমিকরা কাজে ফিরেছেন বলে জানা গেছে। কিছু কিছু চা বাগানে রবিবার সাপ্তাহিক বন্ধ থাকার পরেও চা শ্রমিকরা নগদে কাজ করছেন বলেও জানা যায়।

চট্টগ্রাম ভ্যালীর সাধারণ সম্পাদক যতন কর্মকার জানান, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মজুরি নির্ধারণ করে দেওয়ায় চা শ্রমিকদের বাগানে পাঠিয়েছি। তারা আজ সকাল থেকে বাগানে কাজ করছেন। আমাদের ভ্যালীর ২৬ চা বাগানের প্রায় সকল চা বাগানের শ্রমিকরা কাজে ফিরেছেন।’

তিনি জানান, ‘চট্টগ্রাম ভ্যালীর মধ্যে রাঙ্গাপানি চা বাগান, হালদা ভ্যালী চা বাগান, খইয়াছড়া চা বাগান এবং আফিয়া ছড়া চা বাগান এই ৪টি চা বাগানে সাপ্তাহিক ছুটি রবিবার। বাকি ২২ টি চা বাগানেই সাপ্তাহিক ছুটি শুক্রবার। যার কারণে আমাদের এদিকে সবাই কাজে ফিরেছেন। ওই ৪ টি বাগানের চা শ্রমিকরা আজ ছুটির দিনে নগদে কাজ করছে।’

লস্করপুর ভ্যালীর আওয়তাধীন চাঁনপুর চা বাগানের চা শ্রমিক নেত্রী খায়রুন আক্তার জানান, ‘আজ রবিবার থাকায় আমাদের ভ্যালীর অধিকাংশ চা বাগানের শ্রমিকরা কাজে যাননি। তবে আগামীকাল থেকে সবাই কাজে যাবেন।

চা শ্রমিকদের আন্দোলনে নিজেদের কষ্টের কথা জোড়ালোভাবে তুলে ধরা এই নারীনেত্রী জানান, আমি নিজেও একজন চা শ্রমিক। টানা দীর্ঘদিনের আন্দোলনের মাঠে অংশগ্রহণ করায় আমি কিছুটা অসুস্থ হয়ে পড়েছি। সেজন্য আমি ভাল করে কথা বলতে পারছিনা। সুস্থ হলে আমিও কাজে ফিরবো।’

বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক বিজয় হাজরা বলেন, ‘মালিকপক্ষের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা আলোচনা করেছেন। চা শ্রমিকদের মজুরি ১৭০ টাকা নির্ধারণ করেছেন তিনি। আমরা তা মেনে নিয়ে ধর্মঘট প্রত্যাহার করেছি। প্রত্যেক বাগানের শ্রমিকদের কাজে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছি।’

তিনি জানান, ‘৫০% চা বাগানের শ্রমিকরা কাজে ফিরেছেন। যে সকল চা বাগানে সাপ্তাহিক ছুটি আজ (রবিবার) সে সকল চা বাগানে আগামীকাল (সোমবার) থেকে শ্রমিকরা কাজে ফিরবেন। তবে সকল চা বাগানের ফ্যাক্টরী খুলে গেছে। সেজন্য ফ্যাক্টরীতে কর্মরত চা শ্রমিকরা কিন্তু আজ থেকেই কাজে ফিরেছেন।’

প্রসঙ্গত, ৩০০ টাকা দৈনিক মজুরির দাবিতে গত ৯ আগস্ট থেকে চার দিন দুই ঘণ্টা করে কর্মবিরতি ও ১৩ আগস্ট থেকে সারাদেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট পালন করে আসছিলেন চা শ্রমিকরা। প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটি ধর্মঘট প্রত্যাহার করলেও সেটা মানছিলেন না অনেকে।

চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি নির্ধারণে শনিবার (২৭ আগস্ট) গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ১৩ জন চা শিল্প মালিকের বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে গণভবনের গেটে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস গণমাধ্যমকে বলেন, চা শ্রমিকদের আশা প্রধানমন্ত্রী শ্রমিকদের পক্ষ হয়ে মালিকদের সঙ্গে কথা বলে মজুরি বাড়াবেন। সেটাই তিনি করেছেন। প্রধানমন্ত্রী রবিবার থেকে সবাইকে কাজে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি শিগগিরই চা শ্রমিকদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে আলোচনা করবেন।

‌সাপ্তাহিক বাজার দর।। পর্ব#১৪৩।। বেড়েছে আটা-ভোজ্যতেলের দাম, কমেছে সবজি-কাঁচামরিচের