একজন নাগরিক যুক্তরাজ্য ও বিভিন্ন দেশের প্রধানমন্ত্রীসহ কয়েকজন ব্যক্তির আক্রান্তের খবর প্রকাশের উদাহরণ টেনে ফেসবুকে লিখেছেন, তাহলে বড়লেখায় কেন করোনা রোগীর নাম প্রকাশে লুকোচুরি। ওই নাগরিকের প্রতি সম্মান রেখে বলছি, আপনি-আমি কি যুক্তরাজ্যের নাগরিক? তাদের নাগরিক আর আমাদের মধ্যে আগে পার্থ্যকটা মেলান। তাদের সরকার লকডাউন ঘোষণা করেছে। সাথে সাথে লোকজন ঘরে প্রবেশ করেছে। আইন মানছে। আর আমাদের দেশে, নিজ এলাকা বড়লেখায় অযথা ঘোরাফেরা বন্ধে প্রশাসন মাঠে থেকেও নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না।

বড়লেখা দু’জন করোনা আক্রান্তের পর রোগীদের নাম প্রকাশ করা না করা নিয়ে অনেকে পোস্ট দিয়েছেন। অনেক দায়িত্বশীল পর্যায়ের মানুষরাও ফেসবুকে আক্রান্ত ব্যক্তির নাম ঠিকানা প্রকাশ করে লিখেছেন। এরকম কয়েকটা পোস্ট পড়েছি। কিন্তু করোনা রোগীর পরিচয় প্রকাশের বিষয়ে তাদের আরও সংবেদনশীল হওয়া দরকার ছিল।

এবার আসি মূল কথায়। গত দুদিনে বড়লেখায় দুজন ব্যক্তির করোনা পজেটিভ প্রতিবেদন আসে। গণমাধ্যমকর্মী হিসেবে সংবাদে আক্রান্ত ব্যক্তিদের কারো পরিচয় আমরা প্রকাশ করিনি। তাদের এলাকা ও বাসা লকডাউন করার পর এলাকার নাম উল্লেখ করা হয় সংবাদে। আক্রান্ত ব্যক্তি সামাজিকভাবে হেনস্তার শিকার হতে পারেন এ কারণে এটা করা হয়েছে।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি আইইডিসিআরের সংবাদ সম্মেলনে নাম-ঠিকানা এবং ছবি প্রকাশ না করার আহ্বান জানানো হয়। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা এ আহ্বান জানান। আক্রান্ত ব্যক্তি ছাড়াও যাদের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে তারা সামাজিকভাবে হেনস্তার শিকার হতে পারেন, এ জন্য গোপনীয়তা রক্ষা করতে বলা হয়। কিন্তু আমার এলাকার চিত্র ভিন্ন।

গণমাধ্যমকর্মীরা এ ক্ষেত্রে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিলেও অনেক দায়িত্বশীল পর্যায়ের মানুষরা নাম পরিচয় প্রকাশ করেছেন। অনেকে আক্রান্ত ব্যক্তির নাম না দিলেও স্বজনদের পরিচয় প্রকাশ করছেন। করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তির তো প্রথম দিকে ছবিসহ অনেকে পোস্ট দেন। যাই হোক উনার প্রতিবেদন নেগেটিভ এসেছে।

আবার অনেকে আক্রান্তদের পরিচয় প্রকাশ না করায় গণমাধ্যমকর্মীদের সমালোচনাও করেছেন। বিশেষ করে এক সরকারি চাকরিজীবীর স্ত্রীর নাম ও ঠিকানা প্রকাশ না করায় অনেক সমালোচনা হয়েছে। এখন আমি সমালোচনাকারী ও যারা আক্রান্তদের নাম প্রকাশ করছেন তাদের প্রতি সম্মান রেখে বলছি, সৃষ্টিকর্তা না করুক আপনাদের কোনো স্বজনের যদি এরকম কোনো ঘটনা ঘটে? তাহলে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়ে আমরা তাঁরও তো নাম ঠিকানা প্রকাশ করব না। তখন কি আমাদের সমালোনা করবেন? প্রশ্ন রাখলাম।

আবার ফেসবুকে সচেতনতা দেখানো এই মানুষরা যদি আপনাদের নাম-ঠিকানা ও ছবি প্রকাশ করেন। আপনাদের কেমন লাগবে? একবার চিন্তা করবেন। আমরা লুকোচুরি করি না। আক্রান্ত ব্যক্তি ও তাঁর পরিবারের মানসিক অবস্থা বিবেচনা করি। যেন তাঁরা সামাজিকভাবে হেনস্তার শিকার না হন।

হ্যা, অনেকে প্রশ্ন করতে পারেন, নাম-ঠিকানা প্রকাশ করলে মানুষ সচেতন হবেন। কথাটার যুক্তি আছে। কিন্তু গত দুমাসে আপনারা সচেতন হয়েছেন! প্রথম রোগী সনাক্তের পরও তো হাটবাজারে ভিড় করেছেন। কাউকে তো সচেতন হতে দেখলাম না। দিনভর অনেক এলাকায় জড়ো হয়ে গল্প করতে দেখেছি। আক্রান্ত ব্যক্তিদের বিষয়ে নানা আলোচনাও শোনেছি।

বড়লেখা প্রশাসনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান আপনারাও তাড়াহুড়ো করে আক্রান্তের নাম জানাবেন না। আক্রান্ত ব্যক্তির এলাকা লকডাউনের আগে ঠিকানা জানাবেন না। চা দোকানী ও সরকারি চাকরিজীবীর নাম ঠিকানা দ্রুত মানুষের কাছে পৌঁছালো কিভাবে? এটা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। আক্রান্তের বিষয়ে আপনাদেরকেও সংবেদনশীল হওয়া দরকার।

সকল ফেসবুক ব্যবহারকারিদের প্রতি অনুরোধ আক্রান্তের সংবাদ পেলে একটু অপেক্ষা করুন। স্থানীয় প্রশাসন লকডাউন করলে এলাকার নাম জানতে পারবেন। আমরাও জানিয়ে দেবো। কিন্তু প্রচার-প্রচারণার কারণে কেউ যেন সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন না হয়। এসব একটু খেয়াল করতে হবে। কারো নাম ও তাঁর স্বজনদের পরিচয় প্রকাশ করবেন না।

করোনাভাইরাস থেকে বাঁচতে ঘরে থাকুন। ঘরে থাকার বিকল্প নেই। সকলের জন্য ভালো কামনা।

লেখক- দৈনিক ইত্তেফাক, উপজেলা প্রতিনিধি, বড়লেখা।

‘এবি টিভি’র সর্বশেষ প্রতিবেদন-