‘দ্রুতই মানুষগুলো লাশ হয়ে যাচ্ছে,
লাশগুলোও হয়ে যাচ্ছে বেওয়ারিশ…।’

করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯), এক নীরব যুদ্ধ। পৃথিবী যখন মৃত্যুপুরী, লাশেরও বেঁচে থাকার স্বাদ হয়। তর্ক নয়, উপলব্ধি প্রয়োজন। এ মুহূর্তে বিশ্বযুদ্ধের চেয়েও বড় এক নীরব যুদ্ধ চলমান, যেখানে এক পক্ষ সমগ্র মানবজাতি আর অন্যপক্ষ অদৃশ্য প্রায় এক ক্ষুদ্র জীবাণু। মানুষ কি পারবে এ যুদ্ধ জয় করতে? হ্যা, অনেক ক্ষয়ক্ষতি হলেও আমরা সকলেই এ যুদ্ধের সৈনিক। আমরা অতীতেও ইতিহাসের পাতায় লড়াই করে ঠিকে থাকার প্রমাণ রেখেছি, আবারও সময় নতুন ইতিহাস লিপিবদ্ধ করার। লড়াই আমাদের করতে হবে শক্ত মনোবল নিয়ে ; সতর্কতার মাধ্যমে। মৃত্যু অবধারিত, বাংলাদেশকে ভালোবাসি। সাদা-কালো বা বাদামী, ছোটবড় কিংবা লম্বা ও সোজা বাংলাদেশ সবাইকে ভালোবাসে। প্রিয় মাতৃভূমিতে আজ নিরবতার যুদ্ধ, অস্ত্রবিহীন যুদ্ধ যেন। না ৭১’র মতো পাক সেনাদের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করার যুদ্ধ নয়, সচেতনতার যুদ্ধ। একটি পুরো দীর্ঘ দিন এবং এটি একটি দীর্ঘদিন। জীবনকে ভালোবাসো!

শিশু থেকে বৃদ্ধ সবার চোখেমুখে করোনা ভাইরাসের আতঙ্ক। চারিদিকে হাহাকার। ভয় ঘ্রাস করছে পুরো জাতিকে। নিশ্চিত করে বলতে পারি দুনিয়াতে এমন কোন বীরপুরুষ নাই, যার ভেতরে একবারের জন্য হলেও করোনার ভয় ঢুকে নি। ‘করোনা সংবাদ থেকে দূরে থাকুন’ (যা জানার তা আমরা ইতোমধ্যে জেনেছি)। সবাই সবার বিপদ বুঝে যার যার করণীয় ঠিক করি।

আইন না মানার জন্য আমাদের হাজার রকম অজুহাত রয়েছে। যারা চুরি-ডাকাতি কিংবা দুর্নীতির সাথে যুক্ত তাদের কাছেও তাদের কাজের পক্ষে যুক্তি থাকে। আমরা এমন এক জাতি, যারা রিকশা চড়াবস্থায় গাড়িওয়ালাকে, আবার গাড়ি চড়াবস্থায় রিকশাওয়ালাকে গালি দেই। অনেকেই হয়তো প্রয়োজনে বের হচ্ছে। কিন্তু অপ্রয়োজনে, কেবল ভাল্লাগছে না এমন অনুভূতির অজুহাত নিতান্তই কম নয়। এইযে কতশত মানুষ রাস্তায় আড্ডাবাজি করে নিজেকে বিপদে ফেলছে, অন্যকেও বিপদে ফেলছে তারও কোন ইয়ত্তা নেই। এর ভয়াবহতা আমাদের নিজেদের ঘাড়ে এসে পড়বে তখন আমরা ঠিকই উপলব্ধি করতে সক্ষম হবো। তবে তখন হয়তোবা অনেক দেরি হয়ে যাবে। এ যাত্রায় বাঁচতে পারবেন তো? আহ! কি নির্ভেজালই না চিল জীবন! প্রশান্তি ছিল নিঃশ্বাসে।

সুষম খাবার, পর্যাপ্ত ঘুম, মানসিক দৃঢ়তা ও শারীরিক ব্যায়ামের মাধ্যমে দেহ কাঠামোকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত রাখুন। আমরা কেউই আর কোন মৃত্যু চাই না। তবুও আতঙ্কিত মন খোঁজে চলে মৃত্যুর সংখ্যা রোজ। এ এক ভয়াবহ সময় পার করছি আমরা। হৃদয়ের হৃদ্যতা নেই, এই আমাদের আজকের নিষ্ঠুর প্রবাহমান সময়ের ধারা। আমরা লড়াই করি নিজের জন্য অধিকারের লড়াই, সাবলম্বী হওয়ার লড়াই করছি প্রতিনিয়ত। আজ সব লড়াইকে বৃথা মনে হচ্ছে। অদৃশ্য ভাইরাসকে যতটা ভয় করছেন, যদি অদৃশ্য সৃষ্টিকর্তাকে একটু ভয় করতেন তবে জীবন সুন্দর ও সহজতর হয়ে যাতো। একমাত্র তিনিই পারেন আমাদেরকে এই কঠিন বিপদ থেকে রক্ষা করতে।

সৃষ্টিকর্তার ওপর বিশ্বাস রেখে মনেপ্রাণে এখন একটাই আশা সুদিন ফিরবে। আবার মানুষ স্বাভাবিক হবে। উৎসবমুখর হবে পৃথিবী। আর তাই দু’হাত তুলি সৃষ্টিকর্তার দরবারে, সমস্ত পাপ, পঙ্কিলতা থেকে নিজেকে বাঁচাই। সব বিপদের অবসান হোক।

সর্বোপরি, মাস্ক ব্যবহার করুন। মাস্কের মত সস্তা ও সহজ সতর্কতা দ্বিতীয়টি নেই। ভাবনায় আনুন ইতিবাচকতা। বাড়িতে থাকুন, সুরক্ষিত থাকুন এবং অন্যদেরও রাখুন! করোনা ভাইরাস থেকে বেঁচে থাকুক বাংলাদেশ, ভালো থাকুক বাংলাদেশ।

লেখক- তরুণ সমাজকর্মী।

‘এবি টিভি’র সর্বশেষ প্রতিবেদন-