সিলেটের বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে ‘পুলিশের নির্যাতনে’ মৃত্যু হওয়া রায়হান আহমদের মরদেহ কবর থেকে উত্তোলন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এর একটি দল।

বুধবার (১৫ অক্টোবর) সকাল ৯ টার দিকে আখালিয়াস্থ এলাকার নবাবী মসজিদের পঞ্চায়েতের গোরস্থান থেকে মরদেহটি কবর থেকে উত্তোলন করেন তারা।

প্রায় ২ঘণ্টা পর সকাল ১১টার দিকে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সজিব আহমেদ ও মেজবাহ উদ্দিনের উপস্থিতিতে লাশ উত্তোলনের পর তা পুনরায় ময়নাতদন্তের জন্য সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।

এসময় উপস্থিত ছিলেন, পিবিআই তদন্ত কর্মকর্তা মাহিদুল হাসান, ৯ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মখলিছুর রহমান কামরান।

পিবিআই তদন্ত কর্মকর্তা মাহিদুল হাসান জানান, পুনরায় ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহটি কবর থেকে উত্তোলনের পর সুরতহাল প্রতিবেন্দন তৈরির পর মরদেহটি সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।

এর আগে গতকাল মঙ্গলবার সকালে রায়হান আহমদের মারা যাওয়া ঘটনায় হওয়া মামলা পিবিআইতে স্থানান্তরের নির্দেশ দেয় পুলিশ সদর দপ্তর। পরে এদিন রাতেই মামলার নথি আনুষ্ঠানিকভাবে পিবিআইতে হস্তান্তর মহানগর পুলিশ। পরে বুধবার দুপুরে পিবিআইয়ের একটি দল সিলেটের বন্দর বাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতনে মারা যাওয়া রায়হান আহমদের মৃত্যুতে হওয়া হত্যা মামলার তদন্তে নামেন।

উল্লেখ্য, গত ১১ অক্টোবর (রোববার) ভোরে রায়হান আহমদ (৩৩) নামে সিলেট নগরের আখালিয়ার এক যুবক নিহত হন। পুলিশের পক্ষ থেকে প্রথমে প্রচার করা হয়, ছিনতাইয়ের দায়ে নগরের কাষ্টঘর এলাকায় গণপিটুনিতে নিহত হন রায়হান। তবে বিকেলে পরিবারের বক্তব্য পাওয়ার পর ঘটনা মোড় নিতে থাকে অন্যদিনে। পরিবার দাবি করেন সিলেট মহানগর পুলিশের বন্দর বাজার ফাঁড়িতে পুলিশের নির্যাতনে প্রাণ হারায় রায়হান।

পরে একইদিন রাত আড়াইটার দিকে পুলিশকে অভিযুক্ত করে সিলেটের কোতোয়ালি থানায় আসামিদের অজ্ঞাত রেখে মামলা করেন নিহতের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার তান্নি। পরদিন রায়হানের মৃত্যুর ঘটনায় সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (উত্তর) শাহরিয়ার আল মামুনকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে সিলেট মহানগর পুলিশ।

কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- কোতোয়ালি থানার সহকারি কমিশনার নির্মল চক্রবর্তী ও বিমানবন্দর থানার সহকারী কমিশনার প্রবাস কুমার সিংহ।

এদিকে তদন্তে নেমে পুলিশ হেফাজতে রায়হান উদ্দিনের মৃত্যু ও নির্যাতনের প্রাথমিক সত্যতাও পায় তদন্ত কমিটি। তদন্ত কমিটি জানতে পারে রোববার ভোর ৩টার দিকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে রায়হান আহমদকে আনা হয় বন্দরবাজার ফাঁড়িতে। সেখানে ফাঁড়ি ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়ার নেতৃত্বেই তার ওপর নির্যাতন চালানো হয়। নির্যাতনে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে সকাল সাড়ে ৬টার দিকে রায়হানকে ওসমানী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে সকাল ৭টার দিকে মারা যান তিনি।

প্রসঙ্গত, রায়হান নগরের আখালিয়ার নেহারিপাড়া এলাকার মৃত রফিকুল ইসলামের ছেলে। তিনি স্টেডিয়াম মার্কেট এলাকায় এক চিকিৎসকের চেম্বারে সহকারি হিসেবে কাজ করতেন।