সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে কর্মরত ৫ সিনিয়র স্টাফ নার্স করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। শুক্রবার ওসমানী মেডিকেল কলেজের করোনা পরীক্ষার ল্যাবে পজেটিভ আসা ১৩ জনের মধ্যে এই ৫ জন রয়েছেন। ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

সূত্র জানিয়েছে, আক্রান্ত ৫ নার্সই হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়া প্রখ্যাত চিকিৎসক মীর মাহবুব আলমের সেবায় নিয়োজিত ছিলেন।

জানা গেছে, ডা. মীর মাহবুব আলম লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করলেও তাঁর শরীরে করোনার উপসর্গ ছিল। তবে চার বার তাঁর নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করেও রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। মঙ্গলবার (১২ মে) ভোরে তিনি মারা গেলে ওইদিন সকালেই সিলেটের হজরত মানিকপীর (রহ.) কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। ডা. মীর মাহবুব আলমের মৃত্যুর দুইদিন পর, শুক্রবার (১৫ মে) ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে কর্মরত ৫ সিনিয়র স্টাফ নার্স করোনায় আক্রান্ত হলেন। এরকম অবস্থায় মীর মাহবুবের করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট (প্রতিবেদন বা ফলাফল) নিয়ে ওঠছে প্রশ্ন।

সচেতনমহল বলছেন, মীর মাহবুবের শরীরে করোনার উপসর্গ ছিল বলেই চার বার তার করোনা পরীক্ষা করা হয়। কিন্তু করোনার উপসর্গ কারো মধ্যে থাকলে, তাকে শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে ভর্তি করার কথা। তাহলে মীর মাহবুবকে কেন ওসমানীর আইসিইউতে ভর্তি করা হলো? মীর মাহবুবের শরীরে করোনার শক্ত উপসর্গ ছিল বলেই চারবার নমুনা পরীক্ষা করা হয়। অন্যথায় তো এভাবে বার বার পরীক্ষা করার কথা না।

৫ জন আইসিইউর নার্স আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. ইউনুছুর রহমান। ডা. মাহবুবের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ডা. মীর মাহবুবুল আলম সিলেটের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় করোনার উপসর্গ দেখে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হয় এবং রিপোর্ট আসে নেগেটিভ। রিপোর্ট নেগেটিভ আসায় তাকে ওসমানী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরবর্তীতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা তাঁকে দেখে আবারো করোনা পরীক্ষার জন্য বললে আরো তিনবার তাঁর নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হয় এবং প্রত্যেক বারই রিপোর্ট নেগেটিভ আসে।

তবে ওসমানী হাসপাতালে কর্মরত অনেক চিকিৎসক ও নার্স বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ। তারা বলছেন, মীর মাহবুবকে ওসমানীর আইসিইউতে ভর্তি করে গোটা আইসিইউ ব্যবস্থাকেই ঝুঁকির মধ্যে ফেলা হয়েছে। যার ফলস্বরূপ ৫ নার্স আক্রান্ত হয়েছেন।

এ ব্যাপারে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাবেক চিকিৎসক, বর্তমানে নর্থ ইস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কর্মরত অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ এ মনাফ নিজের ফেসবুক আইডিতে মীর মাহবুুবের মৃত্যুর খবর দিয়ে লিখেছেন, ‘….আপনারা আমাকে অন্য দৃষ্টিভঙ্গিতে না দেখলে কৃতার্থ হবো। প্রফেসর মীর মাহবুব করোনা আক্রান্ত রোগী এবং টেস্ট নেগেটিভ আসতে পারে, কিন্তু (তাঁর) ব্লাড কাউন্ট, চেস্ট এক্সরে সবই করোনা পজিটিভ। আমাদের শত শত ছাত্র, আইসিইউয়ের ডাক্তারগণের প্রতি কি অন্যায় করা হয়নি। সমস্ত আইসিইউ ডিপার্টমেন্ট ইনফেক্টেড (আক্রান্ত) করে ফেললেন। আশা করি অথরিটি (কর্তৃপক্ষ) একটু চিন্তা-গবেষণা করবেন।’

এই চিকিৎসকের পোস্টই বলছে, মীর মাহবুব করোনাক্রান্ত ছিলেন এবং তাঁকে ওসমানীর আইসিইউতে রেখে ঝুঁকি বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তার প্রমাণও ঐ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পর্যবেক্ষণ সত্য হয়েছে ৫ জন নার্স আক্রান্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে, এমনটা মনে করছেন স্বাস্থ্যসেবার সাথে নিয়োজিত অনেকেই।

এক্ষেত্রে সচেতনমহল আরেকটি প্রশ্ন তুলছেন, মীর মাহবুব যদি করোনাক্রান্ত হয়েই থাকেন, তবে কেন ওসমানীর ল্যাবে পরীক্ষায় ধরা পড়লো না?

সুত্র জানিয়েছে, ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউ লকডাউন করতে একটি মহলবিশেষ নানা ষড়যন্ত্র করছে। বেসরকারি হাসপাতালগুলোর আইসিইউ ব্যবসা চাঙা করতেই এই ষড়যন্ত্র চলছে। তবে, ওসমানীর পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. ইউনুছুর রহমান, এমন কোন ষড়যন্ত্রের খবর তার কাছে নেই। তবে কেউ এমনটি করলে সফল হবেন না।

উল্লেখ্য, দেশের প্রখ্যাত চিকিৎসক, ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের সাবেক প্রধান অধ্যাপক ডা. মীর মাহবুবুল আলম অসুস্থ হয়ে পড়লে ৬ মে তাঁকে নগরীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেয়া হয়। কিন্তু তাঁর শরীরে করোনার উপসর্গ থাকায় নমুনা পরীক্ষা করা হয় এবং রিপোর্ট নেগেটিভ আসায় ওসমানী হাসপাতোলে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে নিয়েও তার করোনা পরীক্ষা করানো হয় একাধিকবার। কিন্তু প্রতিবারই ফলাফল আসে নেগেটিভ। পরবর্তীতে তাঁর অবস্থার অবনতি হলে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নেয়া হয়।

তথ্যসূত্র- সিলেটভিউ২৪।

এবিটিভির সর্বশেষ প্রতিবেদন-