সিলেটের রাজনীতিতে প্রবাসী নেতাদের দাপট দিন দিন বাড়ছে। তাদের দাপটে দুই প্রধান দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির স্থানীয় শীর্ষ নেতারাও অনেক ক্ষেত্রে কোণঠাসা হয়ে পড়ছেন। তরুণদের দলে বেড়াতেও তারা নানাভাবে প্রলুব্ধ করে যাচ্ছেন। বিশেষ করে ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের কাছে টানতে তারা নানা কৌশল নিচ্ছেন। আগামী সংসদ নির্বাচন ঘিরে নির্বাচনী এলাকায় ব্যস্ত সময় পার করছেন সম্ভাব্য প্রবাসী প্রার্থীরা। আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির সাবেক ছাত্রনেতাদের পাশাপাশি বিভিন্ন পেশাজীবী প্রবাসী নেতারাও একাদশ জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন পুরোদমে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রবাসীদের অনেকেই অতীতে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ এসব দলের অঙ্গ সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। প্রবাস জীবনেও তারা নিজ নিজ দলের হয়ে রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী বেশ কিছু নাম সামনে আসছে। সিলেটের ১৯টি আসনে অর্ধশতাধিক প্রবাসী নেতা মনোনয়নযুদ্ধে অবতীর্ণ হতে পারেন। এরই মধ্যে তাদের অনেকে নিজ নিজ এলাকায় গণসংযোগসহ দলীয় কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছেন। সেই সঙ্গে চলছে লবিং-তদবিরও।

আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির কয়েকজন সিনিয়র নেতার সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, দলের বহু নেতা-কর্মী নানা কারণে প্রবাস জীবনযাপন করছেন। তাদের কেউ কেউ আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচনে নৌকা, ধানের শীষ ও লাঙ্গল প্রতীকে মনোনয়ন চাইতে পারেন। তবে এ সংখ্যা খুব একটা বেশি হবে না।

সিলেট-২ আসনে (বিশ্বনাথ-বালাগঞ্জ-ওসমানীনগর) বর্তমান সংসদ সদস্য যুক্তরাজ্য জাপা নেতা ইয়াহিয়া চৌধুরী ইয়াহিয়া। তিনি গত নির্বাচনে যুক্তরাজ্যের নাগরিকত্ব ছেড়ে নির্বাচনে অংশ নেন। এর আগে ওই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে বিজয়ী হন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী। তিনিও যুক্তরাজ্যের নাগরিকত্ব ছেড়ে নির্বাচনে অংশ নেন। বর্তমানে ওই আসনে প্রার্থী হওয়ার জন্য জোর লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও যুক্তরাজ্য যুবলীগের সাবেক সভাপতি আনোয়ারুজ্জান চৌধুরী।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইতিমধ্যে সিলেটের রাজনীতিতে তিনি একটি বলয় সৃষ্টি করে নিয়েছেন। নিজের একটি গ্রুপও তৈরি হয়ে গেছে। বিশেষ করে ছাত্রলীগের সুরমা গ্রুপ নামে নতুন একটি গ্রুপের সৃষ্টি হয়েছে। ১৪ সেপ্টেম্বর ছাত্রলীগের দুটি গ্রুপের দ্বন্দ্বে নগরীর শিবগঞ্জে খুন হন সুরমা গ্রুপের জাকারিয়া মোহাম্মদ মাসুম নামে এক ছাত্রলীগ কর্মী। আগামী সোমবার আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী সিলেট আসছেন বলে তার একটি ঘনিষ্ঠ সূত্র নিশ্চিত করেছে। তাকে বিমানবন্দর থেকে শোডাউন দিয়ে নেওয়ার জন্য ব্যাপক প্রস্তুতিও চলছে। ১১ সেপ্টেম্বর ইস্ট লন্ডনের ইমপ্রেশন ইভেন্ট হলে প্রবাসী বালাগঞ্জ-বিশ্বনাথ ও ওসমানীনগরবাসী আয়োজিত জনসভায় সিলেট-২ আসন থেকে তাকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ঘোষণার দাবি জানান লন্ডনে বসবাসরত প্রবাসীরা। ওই আসনে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ‘নিখোঁজ’ ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনা প্রার্থী হলে দলের আর কেউ মনোনয়ন চাইবেন না বলে জানা গেছে।

সিলেট-৩ আসন (দক্ষিণ সুরমা-ফেঞ্চুগঞ্জ) যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান। ছাত্রলীগের সাবেক এই নেতা প্রায়ই লন্ডন থেকে দেশে আসেন। আগামী ১৭ অক্টোবর তার দেশে আসার কথা রয়েছে। ওই আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী কয়েস। ওই আসনে বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার আবদুস সালাম মনোনয়নপ্রত্যাশী। স্থানীয় বিএনপির নেতা মোর্শেদ আহমদ জানান, বিগত সময়ে তাকে ওই আসনে মনোয়ন দেওয়ার জন্য জোর দাবি জানানো হয়েছিল। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব তারেক রহমান যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন। সেখানে তারেক রহমানের আইনি বিষয়গুলো তিনিসহ অনেকেই দেখভাল করছেন। এ কারণে তাকে ওই আসনে মনোনয়ন দেওয়ার সম্ভাবনা বেশি বলে তিনি জানান। এ ছাড়া লন্ডন বিএনপি সভাপতি এমএ মালেকও রয়েছেন আলোচনায়।

সিলেট-৫ (জকিগঞ্জ-কানাইঘাট) আসনে জাতীয় পার্টির মনোনয়নপ্রত্যাশী দুই নেতা। তারা হলেন- ফ্রান্স জাতীয় পার্টির সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শাব্বির আহমদ এবং কাতার প্রবাসী জাকির হোসেন। যুক্তরাজ্যের নাগরিকত্ব ছেড়ে ওই আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন বিরোধী দলের (জাতীয় পার্টি) হুইপ সেলিম উদ্দিন।

সিলেট-৬ আসনে (গোলাপগঞ্জ-বিয়ানীবাজার) মনোনয়নপ্রত্যাশী সাবেক ছাত্রনেতা লন্ডন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আফসার খান সাদেক। তিনি প্রায়ই লন্ডন থেকে সিলেট এসে এলাকার লোকদের সঙ্গে মতবিনিময় করে যাচ্ছেন। লন্ডনে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপন করে আলোচনায় আসেন এই নেতা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও তিনি সক্রিয়। ওই আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। ওই আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সভাপতি শামস উদ্দিন খান ও কানাডা আওয়ামী লীগ সভাপতি সরওয়ার হোসেন। আর বিএনপি থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছাত্রদলের সাবেক আহ্বায়ক ফয়সল আহমদ চৌধুরী। জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন চাইতে পারেন হুইপ সেলিম উদ্দিন এবং প্রেসিডিয়াম সদস্য এটিউ তাজ রহমান। তারা দু’জনই যুক্তরাজ্য প্রবাসী। এ দুই নেতার মধ্যে কয়েক মাস ধরে চলছে স্নায়ুযুদ্ধ। সম্প্রতি একে অপরের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষোদ্গার করা হয়। এ নিয়ে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে মামলা করেন সেলিম উদ্দিন।

উৎস- দৈনিক সমকাল।