বিয়ানীবাজার পৌরশহরের প্রাণকেন্দ্রে নির্মিত মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন উদ্বোধনের এক বছর অতিবাহিত হয়েছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এ ভবনের আনুষ্টানিক উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনের পর মাত্র একদিন একটি সংর্বধনা অনুষ্ঠান কেন্দ্র করে ভবনের মিলনায়তন কেন্দ্র (হলরুম) খুলে দেয়া হয়। এরপর থেকে অদ্যাবধি তালাবদ্ধ মুক্তিযোদ্ধাদের প্রাণের এই ভবনটি।

স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা জানান, নব-নির্মিত কমপ্লেক্সটি তালাবদ্ধ থাকায় আমরা যেখানে-সেখানে বসে থাকি। পৌরশহরে আমাদের বসার নির্দিষ্ট জায়গা নেই। তাছাড়া আমাদের সরকারী-বেসরকারী বিভিন্ন কার্যক্রম বাঁধাগ্রস্থ হচ্ছে। এমনকি আমরা সভা-সমাবেশও করতে পারছিনা। ভবনটি তালাবদ্ধ থাকায় এর পরিবেশ নোংরা-আবর্জনাময় হয়ে পড়েছে।

কার্যালয় বন্ধ থাকার বিষয়টি শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এবং সিলেটের জেলা প্রশাসককে অবহিত করা হয়েছে।

বিয়ানীবাজার উপজেলা প্রকৌশলী রামেন্দ্র হোম চৌধুরী জানান, সাড়ে ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে এ কমপ্লেক্সটি নির্মাণ করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর। চারতলা বিশিষ্ট এ ভবনের নীচতলায় ৮টি দোকান কোঠা, ২য় ও ৩য় তলায় মুক্তিযোদ্ধা কার্যালয় এবং ৪র্থ তলায় মিলনায়তন কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। প্রায় এক বছর পূর্বে এ ভবনটি ব্যবহার উপযোগী করে আমরা সংশ্লিষ্টদের কাছে হস্তান্তর করি। তবে এটি কেন মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে বুঝিয়ে দেয়া হচ্ছেনা তা আমি বলতে পারবো না। বর্তমানে এই ভবনটির চাবি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে আছে।

পৌর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার সহিদ আলী অভিযোগ করেন, মুক্তিযোদ্ধা কার্যালয় খুলে দেয়ার বিষয়ে অনেকবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অনুরোধ করা হয়েছে। স্থানীয় এমপি এবং জেলা প্রশাসককেও অবহিত করা হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা বাবুল আখতার জানান, মূলত: ১৮শতক জমির উপর এ কমপ্লেক্সটি নির্মাণ করার কথা থাকলেও মাত্র ৮শতক জমির উপর তা নির্মাণ করা হয়েছে। বাকী জায়গা ক্ষমতাসীন দলের এক নেতাকে বন্দোবস্থ দেয়ার পাঁয়তারা চলছে। আমরা অবশিষ্ট জায়গা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নামে বন্দোবস্তের জন্য আবেদন করলেও সেটি ফাইলচাপা পড়ে আছে।

তিনি জানান, আমাদের নামে বন্দোবস্তের জন্য আবেদন করা জমি জনৈক ব্যক্তি দখল করে নিয়েছেন।
প্রশাসন থেকে এটি উদ্ধারের প্রতিশ্রুতি দেয়া হলেও এখনো সে কার্যক্রম শুরু হয়নি। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে আমাদের ভবন খুলে দেয়া এবং বন্দোবস্তের জন্য প্রস্তাবিত জমি উদ্ধার করা না হলে আমরা ওই কমপ্লেক্সে যাবোনা।

এদিকে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার আতাউর রহমান খান জানান, এখানে মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে বিভক্তি আছে। এটা দূর না হলে ভবন খুলে দেয়া ঠিক হবেনা। তাছাড়া নির্বাচিত কমান্ড গঠন না হলে কারা এই ভবনের দেখাশোনা করবে-এই প্রশ্ন রাখেন তিনি।

বিয়ানীবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাজি আরিফুর রহমান বলেন, সারাদেশে মুক্তিযোদ্ধাদের কোন নির্বাচিত কমান্ড নেই। সে কারণে উপজেলা পর্যায়ে ইউএনও’রা কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। আর কমান্ডার হিসেবে এই ভবনের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব আমার উপর বর্তায়। তাই মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের চাবি আমার কাছে রয়েছে। নির্বাচিত কমান্ড গঠন করা হলে কিংবা সরকারী নির্দেশনা পেলে আমি দায়িত্ব হস্তান্তর করবো। তবে এক বছর থেকে এই ভবনটি একেবারে বন্ধ রয়েছে, তা মানতে রাজি নয় তিনি।