ষোলো বছর ধরে একটা চক্র চলছে। অদ্ভুত সেই চক্রে পড়ে বিশ্বকাপ ট্রফিটা ইউরোপিয়ানদের হাতেই ঘোরাঘুরি করছে। সেই চক্র পূর্ণতা পাবে এবার যদি ইংল্যান্ডে, অর্থাৎ আঁতুড়ঘরে ট্রফি ফিরে যায়। ইউরোপিয়ান এই চক্র কি কাতারে পূর্ণতা পাবে! নাকি লাতিন আমেরিকানদের কুড়ি বছরের অপেক্ষা ঘুচবে মরুতে? এর মধ্যে ব্রাজিল আবার এই কুড়ি বছর ধরেই ‘হেক্সা হেক্সা’ রব জপে যাচ্ছে। নেইমারের নেতৃত্বে তারকা ঠাসা এক দল নিয়ে এসেছে সেলেকাওরা। আর্জেন্টিনার কথা তো বলা বাহুল্য। প্রতি আসরে হট ফেভারিট হয়েও ৩৬ বছর ধরে তাদের ভাঁড়ার শূন্য। এবার আবার লিওনেল মেসির সম্ভাব্য শেষ বিশ্বকাপ। সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলার কি সোনালি ট্রফি না ছুঁয়েই বিদায় নেবেন গ্রিক ট্র্যাডেজির নায়কের মতো! এতটাই নিষ্ঠুর হবেন ফুটবল-ঈশ্বর! ইতিহাসের আরেক সেরা ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোও শেষ বিশ্বকাপ খেলছেন। তিনি কি পারবেন পর্তুগালকে বিশ্বকাপ জিতিয়ে অমর হতে?

অনেকেই হয়তো প্রশ্ন তুলতে পারেন, এ দুই মহাদেশের বাইরে কি ট্রফি যেতে পারে না? ফুটবল-ঈশ্বর কি বাকি পৃথিবীর ওপর নাখোশ? সম্ভাবনার তো কোনো শেষ নেই। কত কিছুই তো হতে পারে। ক্যামেরুনের সাবেক স্ট্রাইকার স্যামুয়েল ইতো তো কাতারে অল-আফ্রিকান ফাইনালের ভবিষ্যদ্বাণীও করে বসে আছেন। তবে আগের ২১ আসরে ট্রফি এ দুই মহাদেশের বাইরে যায়নি। ধারে-ভারে কাতারের ২২তম আসরেও এ দুই মহাদেশের সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার মতো কেউ নেই। বাকি বিশ্ব এই অমোঘ নিয়তি মেনেও নিয়েছে।

এবার আসি ইউরোপিয়ান চক্রে। মেসি, রোনালদো, নেইমার, সালাহ, মানে, হিউয়েন সানদের মতো পৃথিবীর নামি সব ফুটবলারের ঠিকানা ইউরোপের সেরা পাঁচ লিগে। সারাবছর পৃথিবীর ফুটবলপ্রেমীদের মাতিয়ে রাখেন তাঁরা। কাকতালীয়ভাবে গত চার বিশ্বকাপ গেছে ইউরোপের সেরা পাঁচ লিগ আয়োজনকারীর মধ্যে চার দেশের ঘরে। ২০০৬ সালে জার্মানিতে শিরোপা জিতেছিল সিরি ‘এ’ আয়োজক ইতালি। ২০১০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় ট্রফি জিতে ‘লা লিগা’ আয়োজক তিকিতাকার স্পেন। ২০১৪ সালে ব্রাজিল থেকে শিরোপা ছিনিয়ে নিয়ে আসে ‘বুন্দেসলিগা’ আয়োজক জার্মানি। সর্বশেষ রাশিয়ায় ট্রফি জিতে ‘লিগ ওয়ান’-এর দেশ ফ্রান্স। ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে বিশ্বকাপ ট্রফি কি এবার বিশ্বের সবচেয়ে জমজমাট ‘প্রিমিয়ার লিগ’ আয়োজক ইংল্যান্ডের ঘরে যাবে! নাকি মরুর তপ্ত বালুতে আটকে যাবে ইউরোপিয়ান সেরা পাঁচ লিগ আয়োজকদের বৃত্ত পূরণ!

বিশ্বব্যাপী ফুটবলবোদ্ধাদের বিশ্নেষণ ও বিভিন্ন সংস্থার জরিপে যদিও ইংল্যান্ডের সম্ভাবনা কিছুটা ক্ষীণ। সে হিসেবে ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, ফ্রান্স ও পর্তুগাল এগিয়ে। তবে বোদ্ধাদের বিশ্নেষণ মেনে তো সবকিছু হয় না। মাঠের খেলায় অনেক কিছুই পাল্টে যায়। ইংল্যান্ড তো বটেই, তারুণ্যনির্ভর দল নিয়ে আসা জার্মানি-স্পেনও চমক দিতে পারে সবাইকে। ইতিহাস যদিও লাতিনদের পক্ষে কথা বলছে। এর আগে এশিয়ার মাটিতে একবারই বিশ্বকাপ আয়োজিত হয়েছে। ২০০২ সালে জাপান-কোরিয়ার আসরে বাজিমাত করেছিলেন রোনালদো-রোনালদিনহোরা। এবার কি সেই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি করতে পারবেন নেইমার-ভিনিসিয়ুস-রিচার্লিসনরা! নাকি ১৬ বছর ধরে চলা মেসি-রোনালদো দ্বৈরথের চূড়ান্ত পরিণতির মঞ্চ হয়ে উঠবে কাতার? রোমাঞ্চ-উত্তেজনায় সেই উত্তরের অপেক্ষায় ফুটবলপ্রেমীরা।

‌ বিএনপির সমাবেশের উত্তাপ সবজি বাজারে! ডিম মোরগের দাম কম