সৎ, যোগ্য ও পরীক্ষিত ৩ প্রবাসী বাংলাদেশী প্রার্থীর জন্য ভোট চাই।

আর মাত্র কয়েক দিন পরেই বহুল প্রতীক্ষিত বাংলাদেশের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচনে ৩০০ আসনের বিপরীতে সবকটি দল ছাড়াও স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ প্রায় দুই হাজারেরও অধিক প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নানা জল্পনা-কল্পনা আর নাটকীয়তার পর সব কয়টি দলই এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার জন্য এটি একটি শুভ লক্ষণ। গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে নির্বাচন সুষ্ঠু, সুন্দর এবং নিরপেক্ষ হোক- এই কামনা আমাদের সবার। তবে নির্বাচন কতটুকু সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে সেটা সময়ই বলে দেবে।

এবারের নির্বাচনে অনেক প্রার্থীর পাশাপাশি প্রবাসীদের আপনজন এবং সমাজকর্মে পরীক্ষিত ৩জন প্রবাসী প্রার্থী সিলেট অঞ্চল থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। যারা দীর্ঘদিন যাবৎ প্রবাস থেকে দেশের জন্য, মানুষের জন্য- তথা প্রবাসীদের কল্যাণে তাদের সর্বস্ব উজাড় করে দিয়েছেন। তাদের সবাইকে খুব কাছ থেকে দেখার এবং একসাথে কাজ করার সৌভাগ্য হয়েছে বিধায় বলতে পারি; নিঃসন্দেহে তারা পরীক্ষিত, সৎ, যোগ্য ও কাজের মানুষ।

সিলেট-৫ (কানাইঘাট-জকিগঞ্জ) আসন থেকে আবারো প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বর্তমানে এ আসনের এমপি ও বিরোধীদলীয় হুইপ যুক্তরাজ্য প্রবাসী আলহাজ্ব সেলিম উদ্দিন এমপি। তিনি জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। পারিবারিক সম্পর্ক থাকায় তার সাথে দীর্ঘদিনের পরিচয়। গত ৫ বছর তাকে খুব কাছ থেকে দেখেছি। অন্তত বছরে একবার যুক্তরাষ্ট্রে উনি প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হয়ে আসতেন জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে। এ সময় তাকে দেখেছি এবং জেনেছি- তিনি কিভাবে সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষের সহযোগিতায় নিজেকে উজাড় করে দিতে চান। তাদের পাশে দাঁড়াতে চান। কিভাবে তার সংসদীয় আসনের সর্বস্তরের মানুষের কল্যাণে নিরলসভাবে কাজ করে গেছেন তা বাংলাদেশ সফরের সময় খুব কাছে থেকেও দেখার সুযোগ হয়েছে। নিউইয়র্কে আসার পর যে কয়দিন থাকতেন শত ব্যস্ততার মধ্যেও সবসময় খোঁজ নিতেন তার এলাকার মানুষের এবং জনকল্যাণমূলক যে কাজগুলো চলছে সেগুলোর অগ্রগতি সম্পর্কে। তার আমলে জকিগঞ্জ কানাইঘাট এলাকার মানুষের জীবন মানের আমূল পরিবর্তন ঘটেছে। যে উন্নয়ন গত প্রায় ত্রিশ বছরে হয়নি তা এই সরকারের আমলে তার হাত ধরে হয়েছে। এলাকার মানুষ গত পাঁচ বছরের আগে কখনো কোন এমপিকে এই এলাকায় বিশেষ বিশেষ অনুষ্ঠান বা কারণ ছাড়া দেখতেন না, সেলিম উদ্দিন সেই প্রথা ভেঙ্গে মাসে প্রায় সপ্তাহেরও বেশি সময় ব্যয় করেছেন।

যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত প্রবাসী জকিগঞ্জ কানাইঘাটবাসী এক বাক্যে তার সময়ে উন্নয়নের কথা স্বীকার করেন। সেলিম উদ্দিন একজন সৎ ও যোগ্য মানুষ। তার উপরে কারো কোনো অভিযোগ নেই শুধু অনুযোগ তিনি এই এলাকার লোক নন। আমি বলতে চাই, এলাকার লোক না হয়েও সংসদীয় আসনের মানুষকে যিনি আপন করে নিয়েছেন, যে উন্নয়ন সাধিত হয়েছে গত পাঁচ বছরে- যেটা আগের কোনো সাংসদ করতে পারেনি তাহলে কি আপনার একটি ভোট তিনি এ নির্বাচনে পেতে পারেন না?

সিলেট-১ (সিটি কর্পোরেশন-সদর) মর্যাদাপূর্ণ এ আসনে এবারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন প্রবাসীদের পরম আত্মীয়, সাবেক কূটনীতিক জাতিসংঘের বাংলাদেশ মিশনের সফল রাষ্ট্রদূত, শিক্ষাবিদ ডক্টর এ কে আব্দুল মোমেন। উনার কাজ এবং উনাকে দেখার সুযোগ হয়েছিল খুব কাছ থেকে দীর্ঘ প্রায় এক যুগেরও বেশি সময়। উনার সাথে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। দেশ থেকে অনেক দুরে এই প্রবাসে উনার কাছেই শিখেছি কিভাবে দেশকে ভালবাসতে হয়, কিভাবে দেশ সবার উপরে এবং দেশই প্রথম। কিভাবে সব মানুষকে মানুষ হিসেবে দেখতে হয় দল মত সব কিছুর উর্ধে উঠে। তিনি সকলের কাছে ছিলেন প্রিয় মোমেন ভাই। যদিও এবার একটি দলের মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচন করছেন। দীর্ঘদিন কূটনীতিক থাকাকালে প্রবাসে সকল প্রবাসীদের কাছে ছিলেন তিনি একান্ত আপনজন। বিপদে আপদে সবার পাশে সবার আগে তিনি এসে দাঁড়াতেন। কখনো জানতে চাইতেন না বিপদে পড়া লোকটি কোন দলের বা কোন মতের। কূটনৈতিক ভাবে একজন সফল কূটনীতিক জাতিসংঘে স্থায়ী প্রতিনিধি থাকাকালে তিনি সব সময় বাংলাদেশের পজেটিভ ব্র্যান্ডিং করেছেন বিশ্বব্যাপী। তার সময় জাতিসংঘের শান্তি মিশনে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের সংখ্যা বেড়েছে কয়েক গুণ। শুধু তাই নয়, এর পাশাপাশি প্রথমবারের মতো জাতিসংঘে শান্তিরক্ষায় ব্যবহৃত হয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিভিন্ন যন্ত্রপাতি। এতে বাংলাদেশ সরকার আয় করেছে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা। বিভিন্ন দেশের সাথে পারস্পরিক সম্পর্ক বৃদ্ধি পেয়েছে কয়েকগুণ। এরকম অনেক সফলতা এসেছে বাংলাদেশের জন্য তার হাত ধরে। তবে একটি বিষয়ে সবকিছুকে ছাড়িয়ে গেছে বলে আমি মনে করি।আর তা হলো- বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার প্রায় ৪১ বছর পর তার উদ্যোগে বিশ্বের রাজধানী খ্যাত নিউইয়র্কে জাতিসংঘে বাংলাদেশ মিশন পেয়েছে নিজস্ব ভবন এবং জাতিসংঘের স্থায়ী প্রতিনিধির নিজস্ব আবাসস্থল। এ বিষয়টি আগের কোনো স্থায়ী প্রতিনিধি কখনো কোনো সরকারের আমলেই পারেননি। তিনি বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে সর্বোচ্চ মেধা ও প্রজ্ঞা কাজে লাগিয়ে সে ব্যবস্থা করেছেন।

ডক্টর মোমেনের দায়িত্ব পালনের শেষ পর্যায়ে প্রবাসীরা চাচ্ছিল তাকে যেন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত বা এরকম কোন একটি পদবী দিয়ে সেখানেই থাকার সুযোগ দিতে। অনেকে বিষয়টি নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধও করেছেন। কিন্তু সেদিন সেই সভায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, মোমেন সাহেবকে নিয়ে গেলাম। বাংলাদেশের তার মতো কাজের লোকের অনেক বেশি প্রয়োজন। প্রধানমন্ত্রী আজ তার সেই প্রতিদান দিলেন বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সংসদীয় আসন সিলেটে ১ থেকে নমিনেশন দিয়ে। এখন আপনার আমার সকলের দ্বায়িত্ব এরকম একজন সৎ ও নিষ্ঠাবান কাজের লোককে আমাদের প্রিয় সিলেটের উন্নয়নের স্বার্থে নির্বাচিত করে কাজ করার সুযোগ দেয়ার।

মৌলভীবাজার-২ (কমলগঞ্জ-কুলাউড়া) এ আসন থেকে নির্বাচন করছেন সাবেক সাংসদ এম এম শাহীন। প্রবাসীদের বন্ধু , সুখ দুঃখের সাথী এম এম শাহীন একটি নাম নয়- একটি প্রতিষ্ঠান। যুক্তরাষ্ট্রে সমাজকর্মে যে কজন মানুষ নিজেদের বিলিয়ে দিয়েছেন তাদের মধ্যে তিনি অন্যতম। নর্থ আমেরিকায় সবচেয়ে বেশি প্রচারিত বাংলা সংবাদপত্র ঠিকানা’র প্রতিষ্ঠাতা ও বর্তমান চেয়ারম্যান তিনি। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে প্রবাসী সিলেটবাসীর একমাত্র সংগঠন এ প্রবাসের সর্ববৃহৎ আঞ্চলিক সংগঠন জালালাবাদ এসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক। প্রবাস জীবনের পুরোটাই বিলিয়ে দিয়েছেন সমাজকর্মে আর মানুষের সহযোগিতায় পাশে থেকে। এম এম শাহীন যখন উপলব্ধি করলেন শুধু প্রবাসে সমাজকর্ম করলেই শেষ নয়। তার দায়িত্ব আছে তার এলাকার প্রতি। দেশের মানুষের প্রতি। তিনি ছুটে গেলেন বাংলাদেশ তার জন্মভূমিতে। এর আগে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে এমপি নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে এই এলাকার মানুষের জীবন মান উন্নয়নে কাজ করেছেন নিরলসভাবে। দীর্ঘ পাঁচ বছরে কাজ করে তার নির্বাচনী এলাকার মানুষের বিশ্বাস অর্জন করেছেন। এম এম শাহীন এবারও এ আসন থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আমাদের অনুরোধ তাকে নির্বাচিত করে আপনাদের সেবা করার সুযোগ দিন এবং মহান জাতীয় সংসদে প্রবাসীদের নানা দাবি দাওয়া পূরণে তাকে সহায়তা করুন।

প্রবাসীদের রক্ত আর ঘামে ভেজা টাকায় আজ বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা সচল আর রিজার্ভ সর্বকালের সর্বোচ্চ পর্যায়ে। সকল সরকারই প্রবাসীদের এই অবদানের কথা স্বীকার করে। তবে সে অর্থে প্রবাসীদের জন্য কোন সরকারই বিশেষ কোনো পদক্ষেপ নেয় না বা বিশেষ কোনো সুযোগ সুবিধাও আমরা প্রবাসীরা পাইনা। তারপরেও আমরা দিয়ে যাচ্ছি দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ভালবেসে। জাতীয় সংসদে আমাদের কোন প্রতিনিধিত্বকারী নেই। প্রবাসীদের জন্য সংসদে কোনো কোটা বরাদ্দ নাই। আমাদের সুখ-দুঃখ শোনার বা বলার কেউ নেই।

তাই এ নির্বাচনে প্রবাসীদের হয়ে আমার অনুরোধ- এই তিন জন সুযোগ্য প্রবাসীকে আপনারা নির্বাচিত করুন। এছাড়া আর অন্য কোন এলাকায় যদি কোন প্রবাসী যোগ্যপ্রার্থী থাকেন, তাদেরকেও নির্বাচিত করুন- যাতে আমরা প্রবাসীরা আমাদের সুখ দুঃখের কথা তাদের মাধ্যমে সরকারকে জানাতে পারি। এই প্রবাসী প্রার্থীরা আপনাদের পাশাপাশি প্রবাসের ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা প্রায় ৩০ লক্ষ বাংলাদেশীদের সুখ-দুঃখে পাশে থাকবেন এবং মহান জাতীয় সংসদে আমাদের প্রতিনিধিত্ব করবেন। তাই আসুন এবারের নির্বাচনে তাদের নির্বাচিত করার মাধ্যমে প্রবাসীদের ঋণ একটু হলেও শোধ করার চেষ্টা করি।

লেখক- প্রকাশক, বিয়ানীবাজারনিউজ২৪ ও যুগ্ম সম্পাদক, আমেরিকা-বাংলাদেশ প্রেস ক্লাব।