বিয়ানীবাজার উপজেলা ছাত্রলীগ গত এক দশক থেকে নেতৃত্ব ছাড়া রয়েছে। গত ১৭ জুলাই বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজে ছাত্রলীগ কর্মী লিটু হত্যার পর জেলা ছাত্রলীগের বিবৃতি সংগঠনের ভেতরে বাইরে সমালোচিত হয়। এ বিবৃতি দেয়ার তিন দিনের মাথায় জেলা ছাত্রলীগ উপজেলা, সরকারি কলেজ ও পৌরসভা ছাত্রলীগের কমিটি গঠনের জন্য আহবান করেন। এ তিন ইউনিটের জন্য শতাধিক ছাত্রলীগ নেতাকর্মী এরই মধ্যে সিভি জমা দেন। বর্তমানে বিয়ানীবাজার ছাত্রলীগের তিন ইউনিটের কমিটি গঠন নিয়ে তোলপাড় চলছে। এতে কলকাটি নাড়ছেন ছাত্রলীগের বিবদমান গ্রুপের নেপথ্যে থাকা আওয়ামী লীগ নেতারা। উদ্দেশ্য একটাই- নিজ বলয়ের ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের কমিটির বেশি পদে দায়িত্বশীল করা।

উপজেলা ছাত্রলীগের বিবদমান গ্রুপের সাথে সম্পর্ক নেই উল্লেখ্য করে এক প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা বিয়ানীবাজার ছাত্রলীগের তিন ইউনিটের জন্য নিজের পছন্দের তিনজনকে পেতে চাপ দিচ্ছেন জেলা ছাত্রলীগের দায়িত্বশীলদের। শেষ পর্যন্ত তার আবদার কতটুকু জেলা ছাত্রলীগ রাখে সেটাই এখন দেখার বিষয়।

দীর্ঘদিন উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি না থাকায় ছাত্রলীগের বিবদমান ছয়টি গ্রুপে ছাত্রলীগের সকল কার্যক্রম চলছে। এসব গ্রুপের অর্ধেকের বিস্তৃতি বা অবস্থান পুরো উপজেলায় নেই। বিয়ানীবাজার ছাত্রলীগের বিবদমান গ্রুপগুলোর নেপথ্যে জেলা, উপজেলা ও প্রবাসী আওয়ামী লীগের একাধিক দায়িত্বশীল নেতা রয়েছেন বলে স্থানীয়ভাবে উঠে আসে। এসব আওয়ামী লীগ নেতার ইশারায় চলে উপজেলা ছাত্রলীগের বিবদমান ছয় পক্ষ বলে মনে উপজেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মী।

বিয়ানীবাজার উপজেলা ছাত্রলীগ সূত্রে জানা যায়, সর্বশেষ ২০০৩ সালে উপজেলা ছাত্রলীগ প্রপার গ্রুপের জামাল হোসেনকে আহবায়ক এবং পল্লব গ্রুপের আবুল কাশেম পল্লব ও রিভারবেল্ট গ্রুপের জাকির হোসেনকে যুগ্ম আহবায়ক করে ছাত্রলীগের সর্বশেষ কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটি নব্বই দিনের মধ্যে পূর্নাঙ্গ কমিটি গঠন করার কথা থাকলেও ২০০৬ সাল পর্যন্ত আহবায়ক কমিটি দায়িত্ব পালন করে। ২০০৭ সালে যুগ্ম আহবায়ক জাকির হোসেন উপজেলা ছাত্রলীগের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিয়ে ইংল্যান্ড পাড়ি জমান। একই বছর যুগ্ম আহবায়কের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নেন আবুল কাশেম পল্লব। বর্তমানে তিনি উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।

উপজেলা ছাত্রলীগের দীর্ঘ রাজনৈতিক সময়ে ছাত্রলীগ রিভারবেল্ট ও ছাত্রলীগ প্রপারগুপের বিভক্ত হয়ে সংগঠনের কার্যক্রম চালিয়ে আসছিলো। ২০০৩ সালে ছাত্রলীগ প্রপারগ্রুপ ভেঙ্গে ছাত্রলীগ পল্লব গ্রুপের আর্বিভাব ঘটে। গত ছয় বছরে প্রপার গ্রুপের অবশিষ্টাংশ থেকে ছাত্রলীগ জামাল গ্রুপ, পাভেল গ্রুপ এবং ছাত্রলীগ স্বাধীন গ্রুপের অস্থিত্ব প্রকাশ পায়। উপজেলা ছাত্রলীগের অপর অংশ রিভারবেল্টে কোন ভাঙ্গন না থাকায় সংগঠনের কার্যক্রমে তারা স্বক্রীয়তা ধরে রেখেছে।

গত পাঁচ বছর থেকে ছাত্রলীগ প্রপারগ্রুপ নাম পাল্টিয়ে মূলধারা গ্রুপ হিসাবে ছাত্র সংগঠনের কার্যক্রম চালাচ্ছে। এ গ্রুপের নেপথ্যে পৌর মেয়র আব্দুস শুকুর, পৌরসভা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবাদ আহমদ ও উপজেলা যুবলীগ নেতা আতিক উদ্দিনসহ বেশ কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা জড়িত রয়েছেন। ছাত্রলীগ রিভারবেল্ট গ্রুপের নেপথ্যে রয়েছে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আতাউর রহমান খান, আওয়ামী লীগ নেতা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সিহাব উদ্দিন ও কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য এড আব্বাছ উদ্দিন। ছাত্রলীগ জামাল গ্রুপের নেপথ্যে শিক্ষামন্ত্রী এপিএস ও উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহবায়ক দেওয়ান মাকসুদুল ইসলাম আউয়াল, পাভেল গ্রুপের নেপথ্যে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাকির হোসেন, ছাত্রলীগ পল্লব গ্রুপের নেপথ্যে রয়েছে কানাডা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছরওয়ার হোসেন এবং ছাত্রলীগ স্বাধীন গ্রুপের নেপথ্যে রয়েছেন উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক আব্দুল কুদ্দুছ টিটু, উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা নোমান আহমদ ও আমান উদ্দিন।

এদিকে জেলা ছাত্রলীগ একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে গত ২২ জুলাই থেকে ২৬ জুলাই পর্যন্ত বিয়ানীবাজার উপজেলা, সরকারি কলেজ ও পৌরসভা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে পদ প্রত্যাশিদের কাছ থেকে সিভি আহবান করে। জেলা ছাত্রলীগের এ আহবানে সাড়া দিয়ে ছাত্রলীগের বিবদমান ছয়গ্রুপের শতাধিক নেতাকর্মী সিভি জমা দিয়েছেন।

বিয়ানীবাজার ছাত্রলীগের তিন ইউনিটের কমিটি গঠন নিয়ে আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীলরা কলকাটি নাড়ছেন বলে জানা গেছে। জেলা ছাত্রলীগের দায়িত্বশীলদের কাছে তাদের অবস্থান ও পছন্দ জানিয়েও দিয়েছেন। আওয়ামী লীগের এক প্রভাবশালী নেতা সরাসরি তিন ইউনিটে দায়িত্বশীল তিনটি পদ চেয়েছেন জেলা ছাত্রলীগের কাছে। তবে তার এ চাওয়ার বিষয়টি প্রকাশ পেলে জেলা আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল পর্যায়ে উষ্মা দেখা দেয়। অনেকেই বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা করেন।

বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জ ছাত্রলীগের কমিটি গঠনের রূপরেখা প্রণয়ন করতে জেলা ছাত্রলীগের দায়িত্বশীলরা এরই মধ্যে আলোচনা শুরু করেছেন। আগামী কাল রবিবার কিংবা সোমবারের মধ্যে কমিটি প্রকাশ পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে আওয়ামী লীগ নেতাদের চাপাচাপির কারণে হয়তো ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা পিছিয়ে যেতে পারে। কমিটি ঘোষণা পেছানো হলে সেটা সেপ্টেম্বর মাসের দিকে কমিটি প্রকাশ করতে পারে জেলা ছাত্রলীগ।

জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শাহরিয়ার সামাদ এবং সাধারণ সম্পাদক এম রায়হান চৌধুরীর সাথে কথা বলতে মোবাইল ফোনে কল দিয়েও তাদের পাওয়া যায়নি। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা ছাত্রলীগের এক দায়িত্বশীল বলেন, কমিটি গঠন নিয়ে জেলা ছাত্রলীগের দায়িত্বশীল অনেক চাপে রয়েছেন। অনেক আওয়ামী লীগ নেতা সুযোগ নিতে চেষ্টা করছেন। তবে জেলা ছাত্রলীগ যোগ্যতর ও মেধাবীদেরই তিন ইউনিটের দায়িত্বশীল পদে আসীন করবে। তিনি বলেন, যে যােই বুলক জেলা ছাত্রলীগ বিয়ানীবাজার ছাত্রলীগ সম্পর্কে বিস্তর ধারণা রয়েছে। ঘোষিত কমিটিতে ছাত্রলীগের বিবদমান গ্রুপগুলো অবস্থান বিবেচনা করা হয়েছে।