সড়ক দুর্ঘটনায় বাংলা একাডেমী পুরস্কারপ্রাপ্ত ভ্রমণ সাহিত্যিক, নাট্যকার ও স্থপতি শাকুর মজিদের ছোট ছেলে ইবন আহত হয়েছে। কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রাম আসার পথে ইয়ার-৭১ বাস দুর্ঘটনায় পড়লে বন্ধুদের সাথে ইবন আহত হয়। তবে অন্যদের চেয়ে ইবনের শারিরীক অবস্থা ছিল মারাত্মক। তাকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়। তারপর বিমানযোগে আনা হয় ঢাকায়। পিতা ও মাতার অবর্তমানে আহত পুত্রে চিকিৎসা এবং একজন ডাক্তারের অভিভাবকসুলভ দায়িত্ব নেয়া- কতটা মহানুভব হলে একজন ডাক্তার হলে দায়িত্বশীল অভিভাবক হয়ে উঠেন। সেকথাই লিখেছেন নিজের ফেসবুক টাইমলাইনে। নিম্নে পাঠকদের জন্য তার হুবহুব তুলে ধরা হলো।

চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের ওঙ্কোলজি বিভাগের প্রফেসর তিনি। শুক্রবারে মাঝে মাঝে ঢাকায় রোগী দেখতে আসেন। সকালের ফ্লাইটে ঢাকা এসে রাতের ফ্লাইটে চট্টগ্রাম ফেরত যান।
গত ৫ জুলাই, শুক্রবার, সকাল ৯টা ১৫তে ইউ এস বাংলার এক ফ্লাইটে তাঁর টিকেট কাটা। ঘুম থেকে উঠে সকাল সাতটায় খবর পেলেন বাস এক্সিডেন্টে দুই কিশোর মারাত্মক যখম নিয়ে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরী বিভাগে আছে। তাদের সাথে তাদের আরো ৮ অসহায় কিশোর।
তিনি হাত ব্যাগ গুছিয়ে বিমানবন্দর যাওয়ার পথে মেডিক্যালের জরুরী বিভাগে গিয়ে তদারকি শুরু করেন। এক কিশোরের অবস্থা বেশী খারাপ। তাঁর মুখে, হাতে, কপালে, গলায়, বুকে অনেকগুলো কাঁচের টুকরা ঢুকে আছে। বাম হাতের আঙ্গুলের কাছ থেকে প্রায় দুই ইঞ্চি মাংস কাটা পড়েছে। দুটো ট্যান্ডন ছিড়ে গেছে।
তাঁর বিমান তাকে ছেড়েই চলে যায় ঢাকায়, তাঁর টিকেট বাতিল হয়।
এর মধ্যে সেলাইসাবুদের কাজ আর কোনমতে ঢাকায় নিয়ে যাবার জন্য হাতের মারাত্মক ইনজুরিতে ড্রেসিং করতে করতে বেজে যায় বেলা দশটা। তিনি নিজের দায়িত্বে দশ কিশোরসহ নিজের টিকেট কাটেন ইউ এস বাংলার সাড়ে এগারোটার ফ্লাইটে। নিজেই ব্যবস্থা করেন সবচে ভালো দুটো এম্বুলেন্স যেটাতে করে দুই আহতকে বিমান বন্দর পর্যন্ত নিয়ে আসা হয়।
বিমানে ওঠার আগে বিড়ম্বনা। তিনি নিজের পরিচয় দেন। তাতেও কাজ হয় না। তাঁর সামনে একটা ফর্ম নিয়ে আসা হয়, সেখানে তাঁর সই করতে হবে। তিনি কোন কিছু না পড়ে সই করে দেন।
আজ, কিছুক্ষণ আগে কথা হলো অধ্যাপক ডঃ সাজ্জাদ ইউসুফের সাথে। বিমান বন্দরে সেদিন এসব কিছু আলাপ হয় নি, শুধু কোথায় কিভাবে কী কী চিকিতসা হবে তার বয়ান দিয়েছেন মাত্র। আজ তিনি নিজেই আমাকে ফোন দিয়ে শুনলেন ইবন হাসপাতাল থেকে রিলিজ হয়েছে। আর বললেন, জানেন, সেদিন আমি কী বন্ডে সই দিয়েছিলাম ?
আমি বলি, জানিনা।
তিনি বলেন- সেখানে নাকি লেখা ছিলো যে এই রোগীয় কারনে যদি বিমানকে চট্টগ্রাম ফেরত আসতে হয়, তবে এর সম্পূর্ণ খরচ আমাকে দিতে হবে ।
তিনি আরও বললেন, আমি চিন্তা করেছি, আমার ছেলের যদি এমন হতো, আমি তো বন্ড দিয়েই নিতাম, তাহলে আপনার ছেলের জন্য দেবো না কেন?
Dr. Sajjad Yusuff আল্লাহ মাঝে মাঝে ডাক্তাররূপে ফেরেস্তাদের পাঠান।

লেখক- সড়ক দুর্ঘটনায় আহত কিশোর ইবনের পিতা। স্থপতি, ভ্রমণ সাহিত্যক ও নাট্যকার।