আজ ১৮ আগস্ট, ঐতিহাসিক নানকার দিবস। নানকার প্রথা এবং জমিদারী ব্যবস্থা বিলুপ্তির দাবীতে আন্দোলন, সংগ্রাম ভাল চোখে দেখেনি তৎকালীন পাকিস্তান সরকার। ১৯৪৯ সালে ইস্ট পাকিস্তান রেজিমেন্টের সিপাহীদের গুলিতে শহীদ হন ছয় কৃষক। কৃষকদের নানকার আন্দোলনে মূল ভূমিকা পালন করেন কমরেড অজয় ভট্টাচার্য্য।

ঐতিহাসিক নানকার বিদ্রোহের সুতিকাগার ছিল বিয়ানীবাজার থানা। সামন্তবাদী শোষণ নিপিড়নের বিরুদ্ধে বিয়ানীবাজার অঞ্চলের নানকার কৃষকরা সর্বপ্রথম বীরত্বপূর্ণ সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েন। পাকিস্তান সরকারের সাথে বাঙ্গালী জাতির প্রথম বিজয় নানকার বিদ্রোহ আন্দোলন। যা রচিত হয়েছিল সুনাই নদের তীরে। ঐতিহাসিক ঐ স্থানে বিয়ানীবাজার সাংস্কৃতিক কমান্ড ২০০৯ সালে শহীদ ছয় কৃষকদের স্মরণে নির্মাণ করে স্মৃতি সৌধ।

নানকার আন্দোলন ঠেকাতে জমিদারদের লাঠিয়াল বাহিনীর সাথে ইস্ট পাকিস্তান রেজিমেন্টের সিপাহীরা ঝাঁপিয়ে পড়ে আন্দোলনকারীদের উপর। ইপিআরের গুলিতে ঘটনাস্থলে শহীদ হন কৃষক ব্রজনাথ দাস (৫০), কুটুমনি দাস (৪৭), প্রসন্ন কুমার দাস (৫০), পবিত্র কুমার দাস (৪৫) ও অমূল্য কুমার দাস (১৭) নামের ৫ জন কৃষক। একই স্থানে ৩ আগস্ট ১৯৪৯ সালে জমিদারের লাঠিয়ালদের হাতে শহীদ হন কৃষক রজনি দাস।

নানকার আন্দোলনের সংগঠক কমরেড অজয় ভট্টাচার্য্য’র লেখা ‘নানকার বিদ্রোহ’ বইয়ে উল্লেখ রয়েছে ‘সে সময় বৃহত্তর সিলেটের ৩০ লাখ জনসংখ্যার মধ্যে ১০ ভাগ মানুষ ছিলেন নানকার। নানকার প্রথা বৃহত্তর সিলেট জেলায় চালু ছিল। ১৯২২ সাল থেকে ১৯৪৯ সাল পর্যন্ত কমিউনিষ্ট পার্টি ও কৃষক সমিতির সহযোগিতায় বিয়ানীবাজার, গোলাপগঞ্জ, বড়লেখা, কুলাউড়া, বালাগঞ্জ, ধর্মপাশা থানায় নানকার আন্দোলন গড়ে ওঠে।

ঐতিহাসিক নানকার দিবস উপলক্ষে উপজেলার তিলপারা ইউনিয়নের ঐতিহাসিক নানকার স্মৃতি বিজড়িত সানেশ্বর-উলুউরি গ্রামের মধ্যবর্তী স্থানে নানকার স্মৃতি সৌধে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন পুষ্প শ্রদ্ধা নিবেদন করবে। সকাল ১০টায় পুষ্প শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বিয়ানীবাজার সাংস্কৃতিক কমান্ড এর আয়োজনে অনুষ্ঠিত হবে আলোচনা সভা। সন্ধ্যা ৭টায় বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজ মিলনায়তনে নানকার আন্দোলনের উপর নির্মিত মঞ্চ নাটক ‘হদবেগারি’ প্রদর্শিত হবে। আব্দুল ওয়াদুদের রচনা ও নির্দেশনায় নাটকটিতে উঠে এসেছে জমিদারদের শোষণ নিপীড়নের গল্প।