তাঁর জীবন ও মৃত্যু, মৃত্যুবার্ষিকী ও ছবি আমাকে ষাটের দশকের বাংলার আর্থ-সামাজিক ইতিহাস পড়তে উদ্বুদ্ধ করে, উদ্বুদ্ধ করে জাতির জনককে জানতে, বাংলার সংগ্রামী ইতিহাসকে জানতে, মুক্তিযুদ্ধকে জানতে। তিনি বিয়ানীবাজারের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সন্তান। জীবন-যৌবন বিলিয়ে দিয়েছেন প্রগতিশীল রাজনীতির তরে।

তিনি ছিলেন জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। মুক্তিযুদ্ধকে সংগঠিত করার অপরাধে তাঁর পুরো পরিবারের উপর পাক বাহিনীর নির্যাতনের স্ট্রিমরোলার পরিচালিত হয়েছিলো, তাঁর ভাইকে পাক বাহিনী গুলি করে হত্যা করেছিলো। বাড়ি ঘর হয়েছিলো শত্রুর নিশানা। ৭৫’র বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ড পরবরর্তী দিনে আবার তিনি কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্টে নিক্ষিপ্ত হলেন মোস্তাক-জিয়ার অন্ধকার সময়ে। দীঘর্দিনের কারাবাসের পরে মুক্তিলাভ করেন।

তাঁর সম্মুখে অনেক লোভ ও লাভজনক রাজনৈতিক প্রস্তাব এসেছিলো। কিন্তু আওয়ামী লীগ ছাড়েননী। অথচ তাঁর সহকর্মী অনেকে ‘লোভে’ পা দিয়ে খ্যাতি, প্রতিপত্তি সবই পেয়েছিলো। তিনি ছিলেন বঙ্গবন্ধুর অতি স্নেহের। তাই আজীবন বঙ্গবন্ধুকেই বুকে ধারণ করেছেন। বিয়ানীবাজারে আওয়ামী লীগ আর এম এ আজিজ ছিলেন অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। বঙ্গবন্ধু স্নেহ করে তাঁকে ডাকতেন আজিজ বিয়ানীবাজারী বলে। ‘আজিজ বিয়ানীবাজারী’ ছিলো একটি প্রতিষ্ঠানের নাম। মানুষ আজো এ প্রতিষ্ঠানের নাম সম্মানের সাথে উচ্চারণ করছেন। এটাই তাঁর প্রাপ্য। এ ধারা অব্যাহত থাকুক। আল্লাহ পাক পরকালে তাঁকে জান্নাতের শান্তির পরশে স্পর্শিত রাখুক- এ কামনা করি।

বিয়ানীবাজারে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগ প্রতিষ্ঠায় তাঁর শ্রম, ত্যাগ ও অবদান অনস্বীকার্য। কিন্তু কে করবে এ ‘স্বীকার’। স্বেচ্ছাচারিতা, হিংসা ও পরশ্রীকাতরতার অন্তরালে কখনো  কখনো আমরা যে বড়ই অকৃতজ্ঞতার পরিচয় দিয়ে থাকি।  তথাকথিত অভিযোগে একদা আমরা যে তাঁকে এমনভাবে তিরস্কার করেছি যা একজন আজন্ম রাজনীতিবিদের জীবনের সবচেয়ে করুন দু:খ বটে। অন্তরদৃষ্টিমান হৃদয় তাঁর নেত্রকোনে অশ্রুফোঁটার ধারা দেখে বিহ্বল হয়েছে।  যে সংগঠনকে তিনি নিজের জীবন-যৌবন, পরিবার ও সম্পত্তির মায়া ত্যাগ করে, জাতির জনকের আদর্শকে বুকে ধারণ করে বিন্দু জল থেকে তিলে তিলে ফেনীল সমুদ্রের উত্তাল তরঙ্গে উদ্দেলিত করেছিলেন জীবনের শেষ লগ্নে এসে তাঁরই সৃষ্ট সেই তরঙ্গে উল্লসিত সংগঠনের উদ্দেশ্যমূলক হিংস্রতার শিকার হলেন তিনি স্বয়ং। যা ক্ষমতার কুটচালের রোমান রুপকথাকেও হার মানায়। আমরা কি একটিবার চিন্তা করেছি, এ কোন ব্যক্তি? কি তাঁর ব্যাকগ্রাউন্ড? সংগঠনের জন্য কি তাঁর অবদান? এ জাতির জন্য তাঁর ও তাঁর পরিবারের ত্যাগের পরিমান কতটুকু ? হয়তো করিনি। কখনো কি উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছি কোন সুদুরপ্রসারী উদ্দেশ্যে একজন ত্যাগী ও বর্ষীয়ান নেতাকে তাঁরই সৃষ্ট দল থেকে ছুড়ে ফেলা হচ্ছে? করা হচ্ছে অসম্মান? হয়তো করিনি। প্রতিবাদতো করিইনি বরং সবার সাথে মোসাহেবীসুলভ বাহবা দিয়েছি।

কিন্তু আজ? সেদিন আমরা যারা তার প্রতি সৃষ্ট চরম অসম্মানসূলভ সাংগঠনিক সিদ্ধান্তে প্রত্যক্ষে বা পরোক্ষে বুজে না বুজে পরমানন্দে বিগলীত হয়েছিলাম, উল্লাসে হয়েছিলাম উদ্বেলিত সেই আমরাই আজ তাঁর কীর্তির প্রতি শ্রদ্ধায় নত:শীর। তাঁর স্মৃতি শ্রদ্ধায় বক্তার পর বক্তা টেবিল ভেঙ্গে ফেলতে উদ্বুদ্ধ হই থাপ্পড় মেরে। ফুলের জলসায় তাঁর স্মৃতি ও কীর্তিকে রোমন্থন করি। কেন? কারণ যদি হয় আমরা বিবেকের দংশনের শিকার তাই, তবে আসুন চেতনার সমগ্র শক্তিকে একতাবদ্ধ করে বিনয়ের সাথে বলি ‘আজিজ ভাই, আমাদের ক্ষমা করে দিন’।

লেখক-সভাপতি, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, যুক্তরাষ্ট্র