ছাত্রাবাস কক্ষ দখল করে বহিরাগতরা অবস্থান করছে- এমন খবরে সিলেটের এমসি (মুরারিচাঁদ) কলেজের ছাত্রাবাসে মধ্যরাতে তল্লাশি চালিয়েছে পুলিশ।

মঙ্গলবার দিবাগত (২০ অক্টোবর) রাত একটা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত টানা দেড় ঘণ্টা এই তল্লাশি চালানো হয়। তবে ছাত্রাবাসে কোনো বহিরাগত পাওয়া যায়নি।

ছাত্রাবাসের তত্ত্বাবধায়ক মো. জামাল উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের কাছে মধ্যরাতে একটি খবর আসে যে ছাত্রাবাসের কয়েকটি কক্ষ দখল করে বহিরাগতরা অবস্থান নিয়েছে। এমন খবর পেয়ে রাত একটার দিকে পুলিশসহ আমরা তল্লাশি শুরু করি। তল্লাশি চালিয়ে কোনো বহিরাগত পাওয়া যায়নি। এরপর আবাসিক শিক্ষার্থীদের বরাদ্দহীন অবস্থায় থাকা ছাত্রাবাস কক্ষ তল্লাশি করেও বহিরাগত কাউকে পাওয়া যায়নি এবং কক্ষ দখল নেওয়ার প্রমাণও মেলেনি।’

কলেজ প্রশাসন সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, ছাত্রলীগের নতুন কমিটি নিয়ে বিবদমান একটি পক্ষ কলেজ প্রশাসনকে ছাত্রাবাস কক্ষ দখল করার খবর দেয়। তারা জানায়, নগরীর বালুচর এলাকা থেকে একদল ছাত্রলীগ কর্মী ছাত্রাবাসে অস্ত্র নিয়ে অবস্থান করছে। রাত একটার দিকে এ খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ নিয়ে তল্লাশি শুরু করা হয়।

তবে এ বিষয়ে ছাত্রাবাস তত্ত্বাবধায়ক জামাল উদ্দিন কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি বলেন, ‘সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করায় খবরটি পেয়ে আমরা প্রশাসনিকভাবে তল্লাশি করি। যেহেতু মধ্যরাতে তল্লাশি ছিল, এ জন্য পুলিশকে সঙ্গে রাখা হয়।’

তল্লাশি চলাকালে ছাত্রাবাসের আবাসিক শিক্ষার্থীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। তাঁদের অনেকেই মধ্যরাতে ফোন করে স্বজনদের কাছে উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেন। তবে তল্লাশি শেষে শিক্ষার্থীরা স্বস্তিবোধ করেন।

উল্লেখ্য, করোনা পরিস্থিতিতে গত বছরের ১৭ মার্চ ছাত্রাবাস অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। বন্ধ থাকার ছয় মাসের মাথায় ছাত্রাবাসের একটি কক্ষ দখল করে ছাত্রলীগ। গত বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর রাতে ছাত্রাবাসের পাশের সড়কে বেড়াতে আসা এক নববধূকে তুলে নিয়ে সেখানে ধর্ষণ করা হয়। এ ঘটনায় দেশে-বিদেশে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। ধর্ষণের ঘটনায় মামলা হলে একে একে গ্রেপ্তার হন ছাত্রলীগের ছয় কর্মী। ছাত্রাবাসের বাইরে থেকে সহযোগিতা করার অভিযোগে ছাত্রলীগের আরও দুই কর্মীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। দখল করা একটি কক্ষ থেকে পাইপগানসহ দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তার আটজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। পরে তাঁদের নামে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। ধর্ষণ মামলাসহ এ ঘটনায় অস্ত্র ও ছিনতাইয়ের অভিযোগে আরও দুটি মামলা হয়। তিনটি মামলা এখনো বিচারাধীন। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে কেবল এক শিক্ষার্থী ছাত্রাবাসের বাসিন্দা ছিলেন। তাঁর ছাত্রত্ব বাতিল করা হয়।

ওই ধর্ষণকাণ্ডের পর ছাত্রাবাস খোলার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিশেষ নজরদারির জন্য সম্প্রতি কলেজের সীমানাপ্রাচীরের ভেতর নগর পুলিশের একটি ‘কনটেইনার বক্স’ (ফাঁড়ি) স্থাপন করা হয়েছে। চলতি মাসের ১ অক্টোবর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্দেশে ছাত্রাবাস খুলে দেওয়া হয়।