অর্থায়ন জটিলতায় বিলম্বিত হচ্ছে দেশের গুরুত্বপূর্ণ রুট ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণের উদ্যোগ। এতে কাজ শুরুর আগেই বেড়েছে এ প্রকল্পের ব্যয় ও মেয়াদ। প্রথমে চীন সরকারের অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত হয়েছিল। পরে সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে সরকার।

গুরুত্ব বিবেচনা করে সরকারের নিজস্ব তহবিলের অর্থেই এটি বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু চীনের একটি কোম্পানি অর্থায়নের প্রস্তাব দেয়ায় বিষয়টি নিয়ে নতুন করে ভাবা শুরু হলেও শেষ পর্যন্ত সে প্রস্তাবটিও গ্রহণ করা হয়নি। এবার এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে সড়কটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এদিকে বারবার সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের কারণে আগামী দিনে আরও ব্যয় ও সময় বৃদ্ধির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, টাইম ইজ মানি। সময়ের মূল্য কেউ দিতে পারবে না। যে কোনো কাজ দেরি হলেই ব্যয় বাড়ে। এমনকি নামাজও কাজা হলে পূর্ণ সওয়াব মেলে না। উন্নয়ন কাজ তো হচ্ছে বেসিক্যালি দুটি জিনিসের সমন্বয়ে- টাকা ও মানুষের পরিশ্রম। এমনিতেই তো ব্যয় বাড়ার প্রবণতা থাকে। জিনিসপত্রের দাম বাড়ে, মূল্যস্ফীতি হয় ইত্যাদি কারণে। তার ওপর যদি কাজ শুরু করতেই দেরি হয়, তাহলে ব্যয় অবধারিত বাড়বে। তাই যে কোনো প্রকল্পই হোক দ্রুত কাজ শুরু করা উচিত।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) দায়িত্বশীল একাধিক কর্মকর্তা জানান, চীনের অর্থায়ন না নেয়ার বিষয়টি এখন চূড়ান্ত হয়ে গেছে। এছাড়া এডিবির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে তারা অর্থায়ন করতে রাজি। এখন তাদের মিশন আসবে, পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে। ইআরডি সচিব মনোয়ার আহমেদ জানান, এ প্রকল্পটি এডিবির অর্থায়নেই বাস্তবায়ন হবে বলে আশা করছি। এরই মধ্যে সংস্থাটি অর্থায়নের সম্মতি জানিয়ে ইআরডিকে চিঠি দিয়েছে।

সূত্র জানায়, ‘ঢাকা (কাঁচপুর)-সিলেট মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ এবং উভয় পাশে পৃথক সার্ভিস লেন নির্মাণ’ বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয় সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। ঢাকা (কাঁচপুর) থেকে সিলেটের মোগলবাজার রোডের হাবিবুর রহমান চত্বরের প্রায় এক কিলোমিটার আগ পর্যন্ত মহাসড়কটির দূরত্ব ২২৮ দশমিক ৩৪ কিলোমিটার। কিন্তু ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ থেকে বিশ্বরোড পর্যন্ত ১১ দশমিক ৫৬ কিলোমিটার সড়ক ‘আশুগঞ্জ (নদীবন্দর)-সরাইল-দরখার-আখাউড়া (স্থলবন্দর) সড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ’ প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়িত হচ্ছে।

এছাড়া ২ দশমিক ৩৪ কিলোমিটার দীর্ঘ ভৈরব ব্রিজ চার লেনবিশিষ্ট হওয়ায় তা বাদ দেয়া হয়েছে। ফলে সড়কটির দৈর্ঘ্য দাঁড়িয়েছে ২১৪ দশমিক ৪৪ কিলোমিটার। এছাড়া হুমায়ুন রশীদ চত্বর থেকে সুরমা ব্রিজের নির্মাণকাজ এ প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সব মিলিয়ে ১১ হাজার ৪১১ কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ এ প্রকল্পটি প্রস্তাব করে পরিকল্পনা কমিশনে।
বাস্তবায়ন কাল ধরা হয় ২০১৮ সালের এপ্রিল থেকে ২০২২ সালের ডিসেম্বর। প্রকল্প প্রস্তাবটি নিয়ে গত বছরের ৮ আগস্ট প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভার সিদ্ধান্তের আলোকে প্রকল্পটির ব্যয় ১২ হাজার ৬৮৬ কোটি ৯৬ লাখ টাকা এবং বাস্তবায়ন কাল ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত নির্ধারণ করে ডিপিপি পুনর্গঠন করা হয়েছে।

সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, এরই মধ্যে প্রকল্পটির ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ১৪০ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। এছাড়া বাস্তবায়নকাল চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়েছে। এরই মধ্যে এ ব্যয় ধরে প্রাথমিক প্রকল্প প্রস্তাবটি নীতিগত অনুমোদন দিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী।

ব্যয় বৃদ্ধি প্রসঙ্গে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব মো. নজরুল ইসলাম বলেন, প্রকল্প প্রস্তাবটি যখন তৈরি করা হয়, তখন এটিতে ২০১৫ সালের রেট সিডিউল অনুসরণ করা হয়েছিল। স্বাভাবিক কারণে এখন ২০১৮ সালের রেট সিডিউল অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এ কারণেও ব্যয় বাড়তে পারে। তাছাড়া রাস্তার স্ট্রাকচার দেখতে হবে।

আগে কী ছিল আর এখন কী হচ্ছে। যদি এমন হয়- আগে একদিকে ধীরগতির যানবাহন চলাচলের জন্য লেন ছিল, এখন যদি দুইদিকে করা হয়, তাহলে কি ব্যয় বাড়বে না? আগে যেমন বাজার এলাকায় ফ্লাইওভার করার চিন্তা ছিল না, এখন যদি ফ্লাইওভারের সংখ্যা বেড়ে যায়, তাহলে ব্যয়ও বাড়বে। এরকম নতুন কাজ অন্তর্ভুক্ত হলে যৌক্তিক কারণেই ব্যয় বাড়বে। বিষয়টি এমন নয় যে, কাজ আগের মতোই আছে, কিন্তু ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। তাছাড়া এডিবি এখন আবার নতুন করে স্টাডিও করতে পারে।

সূত্র জানায়, ‘ঢাকা (কাঁচপুর)-সিলেট মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পটি ২০১৬ সালে ১৪ অক্টোবর চীনের প্রেসিডেন্ট সি জিনপিংয়ের ঢাকা সফরের সময় উভয় দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত ‘স্ট্রেনদেনিং ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড প্রডাকশন ক্যাপাসিটি কো-অপারেশন’ নামক সমঝোতা স্মারকে (এমওইউ) অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এটি বাস্তবায়নের জন্য চীন সরকার এম/এস চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেডকে মনোনয়ন দেয়।

কিন্তু প্রক্রিয়াকরণে বিলম্বসহ নানা কারণে পরবর্তী সময়ে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ ২০১৮ সালের ২৯ মে একটি চিঠির মাধ্যমে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগকে জানায়, আলোচ্য প্রকল্পটি জি টু জি ভিত্তিতে চীন সরকারের অর্থায়নে বাস্তবায়নের পরিবর্তে সরকারি অর্থায়নে বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের গুরুত্ব বিবেচনা করে দ্রুত বাস্তবায়নের লক্ষ্যে জিওবি (সরকারি) অর্থায়নে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) প্রণয়ন করে অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে অর্থমন্ত্রীর সম্মতিতে প্রকল্পটি চীনা অর্থায়নের পরিবর্তে জিওবি অর্থায়নে বাস্তবায়নের জন্য চীনা কর্তৃপক্ষের কাছে গত বছরের ২৯ জুলাই ঢাকাস্থ চীনা দূতাবাসে চিঠি পাঠানো হয়।

ওই চিঠিতে এর আগে ২০১৭ সালের ২৩ মে পাঠানো চীনের লেটার অব ইন্টারেস্ট প্রত্যাহার এবং চীনা অর্থায়ন প্রক্রিয়া বাতিল করার অনুরোধ জানায় ইআরডি। এরপর পরিকল্পনা কমিশন ও সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগ এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে নতুনভাবে বৈদেশিক সহায়তা অনুসন্ধানের জন্য ইআরডিকে অনুরোধ করে। এরই মধ্যে চায়না রোড এন্ড ব্রিজ কর্পোরেশন নামে অপর একটি চীনা রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান প্রকল্পটি বাস্তবায়নে আগ্রহের কথা জানিয়ে অর্থমন্ত্রীকে চিঠি পাঠায়। এ নিয়ে ইআরডি থেকে অর্থমন্ত্রীর কাছে একটি সারসংক্ষেপ দেয়া হয়। অর্থমন্ত্রী সিদ্ধান্ত দিয়ে বলেন, নতুন প্রস্তাবটি পরবর্তী প্রক্রিয়াকরণের জন্য সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে পাঠানো যেতে পারে। ইআরডির পক্ষ থেকে গত বছরের ২০ ডিসেম্বর সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে চিঠি পাঠানো হয়। তবে শেষ পর্যন্ত এ প্রস্তাব গ্রহণ না করে এডিবির অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

 



“বিয়ানীবাজার উপজেলার প্রথম ২৪ ঘন্টার টেলিভিশন ABtv’ র অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেল, সাবস্ক্রাইব করে দেখতে থাকুন প্রতিদিনকার বিয়ানীবাজারের ঘটনাপ্রবাহ”নিচের লিঙ্কটি ক্লিকের মাধ্যমে সহজেই সাবস্ক্রাইব করতে পারবেন ABtv
Subscribe: http://bit.ly/2OOvJad