বর্তমানে শুষ্ক মৌসুম চলছে। এ মৌসুমে কৃষিকাজে সেচের জন্য ডিজেল অপরিহার্য। অন্যদিকে পণ্যবাহী ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহনেও ডিজেল ব্যবহার করা হয়। কিন্তু সিলেটে সম্প্রতি আচমকাই ডিজেল সংকট দেখা দেয়। শুষ্ক মৌসুম হওয়ায় নদীপথে নাব্য সংকটে জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ। অন্যদিকে রেলপথে তেলবাহী ওয়াগন না আসায় ডিজেল সরবরাহ বন্ধ ছিল। এতে সিলেটের পরিবহন খাতে অস্থিরতা সৃষ্টি হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছিল। তবে অবশেষে সংকট কাটছে, ডিজেলের সরবরাহ স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে।

জানা গেছে, সিলেটে জ্বালানি সরবরাহের প্রধান মাধ্যম রেলপথ। কিন্তু প্রায় সময়ই ইঞ্জিন সংকটের কথা বলে জ্বালানিবাহী ওয়াগন পরিবহনের ক্ষেত্রে গড়িমসি করে রেল কর্তৃপক্ষ।

সংশ্লিষ্টরা জানান, গত ৯ নভেম্বর সিলেটে ডিজেলবাহী রেল ওয়াগন এসেছিল। এর মধ্যে ১১ নভেম্বর রাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটে। এ দুর্ঘটনার পর থেকে সিলেটে ডিজেলবাহী ওয়াগন আসা বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ১৫ নভেম্বর সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় দুর্ঘটনায় পড়ে রেলে। এতে পরিস্থিতি আরো শোচনীয় হয়ে পড়ে। সিলেটে ডিজেল সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।

গেল ৯ নভেম্বর যে ডিজেল এসেছিল, সেসব ডিজেল আনলোডের পর ১২ নভেম্বর বিভিন্ন পাম্পে সরবরাহ করা হয়। এরপর আর কোনো ডিজেল না আসায় বিভিন্ন পাম্পে সংকট দেখা দিতে শুরু করে। পরিস্থিতির উত্তরণে পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা অয়েল তাদের ডিপোর বিশেষ মজুদ থেকে ১৪ নভেম্বর বিভিন্ন পাম্পে সীমিত পরিমাণে ডিজেল সররবাহ করে। কিন্তু এরপর থেকে ডিজেল সরবরাহ বন্ধ থাকায় সংকট দেখা দেয় চরমে। পাম্প মালিকরা বিভিন্ন ডিপোতে ধরনা দিয়েও ডিজেল পাননি। ডিজেল না পেয়ে গেল রবিবার (১৭ নভেম্বর) বিক্ষোভে নামেন পরিবহন শ্রমিকরা।

এরপর টনক নড়ে সংশ্লিষ্টদের। সিলেটে ডিজেল সংকট কাটাতে উদ্যোগ নেওয়া হয়। ইঞ্জিন সংকটে আখাউড়া স্টেশনে আটকা পড়েছিল ডিজেলবাহী ওয়াগন। গেল সোমবার (১৮ নভেম্বর) এই ওয়াগন নিয়ে আসা হয় সিলেটে। এরপর ধীরে ধীরে কাটতে থাকে সংকট।

সিলেট পেট্রল পাম্প মালিক সমিতির সভাপতি মোস্তফা কামাল জানান, গত ১৮ নভেম্বর, ১৯ নভেম্বর সিলেটে ডিজেল এসেছে। এরপর বৃহস্পতিবারও (২১ নভেম্বর) ডিজেলবাহী ওয়াগন এসেছে। তিনি বলেন, ‘ডিজেল আসতে শুরু করায় সংকট আগের চেয়ে কমতে শুরু করেছে। বিভিন্ন পাম্পে ডিজেল সরবরাহ করা হচ্ছে।’

মোস্তফা কামাল বলেন, ‘ডিজেলবাহী ওয়াগন পরিবহনে রেল কর্তৃপক্ষের অনীহা কাজ করে। শুধু এবারই নয়, প্রায় সময়ই দেখা যায়, আখাউড়া, কুলাউড়া প্রভৃতি স্টেশনে ওয়াগন ফেলে রাখা হচ্ছে।’ পেট্রল পাম্প মালিক সমিতির এই নেতা জানান, নদীতে পানি থাকলে নৌপথে ডিজেল আনে যমুনা অয়েল কোম্পানি। তবে পানি কমে গেলে, নাব্য দেখা দিলে নৌপথে ডিজেল পরিবহন বন্ধ হয়ে যায়। তখন রেলপথই একমাত্র ভরসা।

পদ্মা অয়েল কোম্পানির সিলেট ডিপোর ডিএমও মো. সালাহ উদ্দিন বলেন, ‘রেল দুর্ঘটনার কারণে চট্টগ্রাম থেকে ডিজেল আসা বন্ধ হয়ে পড়েছিল। তবে বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সড়কপথে চট্টগ্রাম থেকে সিলেটে ডিজেল আনা সম্ভব। কিন্তু সেক্ষেত্রে কস্ট (ব্যয়) অনেকটাই বেড়ে যাবে। কাছাকাছি হলে সড়কপথে আনা সম্ভব।’

তথ্যসূত্র- সিলেটভিউ২৪।