অবশেষে জবর দখলের আট দিন পর মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার খাসি সম্প্রদায়ের বনাখলা পানপুঞ্জির ভূমি উদ্ধার করেছে প্রশাসন। আজ শুক্রবার দুপুরে বড়লেখা উপজেলার নির্বাহী অফিসার খন্দকার মুদাচ্ছির বিন আলীর নেতৃত্বে প্রশাসন ও পুলিশ যৌথ অভিযান চালিয়ে ছোটলেখা চা বাগানের অন্তর্গত বনাখালা পানপুঞ্জিতে অভিযান পরিচালনা করে অবৈধ ভাবে নির্মিত ঘর উচ্ছেদসহ ভূমি উদ্ধার করেন।

এ সময় জবরদখলকারীদের কাউকে পাওয়া যায়নি। অভিযানের সময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (কুলাউড়া সার্কেল) সাদেক কাউসার দস্তগীর, বড়লেখার সহকারী কমিশনার (ভূমি) নূসরাত লায়লা নীরা, বড়লেখা থানার ওসি জাহাঙ্গীর হোসেন সরদারসহ জনপ্রতিনিধিরা উপস্হিত ছিলেন।

সূত্র জানায়, ছোটলেখা চা-বাগান কর্তৃপক্ষ চা চাষের জন্য এক হাজার ৯৬৪ দশমিক ৫০ একর টিলাভূমি সরকারের কাছ থেকে ইজারা নেয়। পরে তারা ২৭২ একর জমি খাসিয়াদের কাছে উপ-ইজারা দেয়। ২০০৭ সালে খাসিয়ারা ওই জমিতে বনাখলাপুঞ্জি নামে বসতি স্থাপন করে। এরপর সেখানে পান চাষ শুরু করেন। পুঞ্জিতে বর্তমানে প্রায় ৩৬টি খাসিয়া পরিবারের দেড় শতাধিক সদস্য থাকে। প্রতিটি পরিবারের আলাদা পানের জুম আছে। গত ২৮ মে বোবারথল এলাকার আব্দুল বাছিত, পিচ্চি আমির, লেছই মিয়ার নেতৃত্বে ৪০-৫০ জনের একদল লোক দেশীয় অস্ত্র নিয়ে পুঞ্জিতে ঢুকে তিনটি পানের জুমের দখল করে নেন। এ সময় তারা সেখানে একটি অস্থায়ী ঘরও নির্মাণ করে। তখন জুমে থাকা খাসিয়াদের তারা তাড়িয়ে দিয়ে বলে এক সপ্তাহের মধ্যে তাদেরকে ১০ লাখ চাঁদা না দিলে তারা জুমে প্রবেশ করতে পারবে না। প্রাণের ভয়ে খাসিয়ারা ছোটলেখা চা বাগানের ডাকবাংলোয় আশ্রয় নেন।

এ ব্যাপারে গত রবিবার (৩০ মে) পুঞ্জির নারী মন্ত্রী (পুঞ্জি প্রধান) নরা ধার ও ছোটলেখা বাগানের প্রধান টিলা করণিক মো. দেওয়ান মাসুদ থানায় পৃথকভাবে দুটি মামলা করেন। এ ঘটনায় ২ জুন পুলিশ মুখলেছ আলী (৪০) ও মহরম আলী ওরফে কুটুন মিয়াকে (২২) গ্রেপ্তার কর পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতরা বড়লেখা সদর ইউনিয়নের উত্তর ডিমাই গ্রামের বাসিন্দা।

পুঞ্জির নারী মন্ত্রী (পুঞ্জি প্রধান) নরা ধার প্রতিকুল আবহাওয়ার মাঝে পাহাড় ডিঙ্গিয়ে উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ জীবন জীবিকার অবলম্বন জুম উদ্ধার করায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। একই সঙ্গে দুষ্কৃতকারীদের গ্রেপ্তারসহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।

বনাখলাপুঞ্জি ছাড়াও গত ২৯ মে রাতে ছোটলেখা বাগানের আওতাধীন আগারপুঞ্জির খাসিয়াদের সহস্রাধিক পানগাছ কেটে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় গত সোমবার (৩১ মে) দুপুরে পুঞ্জির মান্ত্রী (পুঞ্জি প্রধান) সুখমন আমসে বাদী হয়ে বড়লেখা থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।

বড়লেখা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহাঙ্গীর হোসেন সরদার আগার পুঞ্জির খাসিয়াদের সহস্রাধিক পানগাছ কাটার ঘটনায় জড়িতদের খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার খন্দকার মুদাচ্ছির বিন আলী সাংবাদিকদের জানান, খাসিয়াদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিতকরণে ও তাদের অধিকার রক্ষায় উপজেলা প্রশাসন দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।

৮ জুন চালু হচ্ছে বিয়ানীবাজারের প্রথম বাস টার্মিনাল!