‘মা তুমি কেমন আছ? খাওয়া-দাওয়া ঠিক মতো করছো তো? আগামীকাল দেশে আসবো মা’। মঙ্গলবার মায়ের সাথে মোবাইল ফোনে কথাগুলো বলছিলেন বিয়ানীবাজারের আমেরিকা প্রবাসী রুহুল আমিন। কিন্তু মায়ের মুখ আর দেখা হলো না তার। গ্রীণকার্ড পেয়ে ২৪ বছর পর দেশে ফিরে বাড়ি পৌছার পথে বুধবার (১৫ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের বিজয়নগর এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান তিনি। ছেলের মৃত্যু সংবাদে বার বার মাটিতে পড়ে মূর্ছা যাচ্ছেন তার মা।

নিহত রুহুল আমিন বিয়ানীবাজার উপজেলার কুড়ারবাজার ইউনিয়নের খশির নামনগর এলাকার আলিম উদ্দিনের বড় ছেলে।

জানা গেছে, বুধবার (১৫ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের বিজয়নগর এলাকায়  মাইক্রোবাস ও ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে আমেরিকা প্রবাসী রুহুল আমিন নিহত হয়েছেন। এ দুর্ঘটনায় চালকসহ রুহুল আমিনের ৪ স্বজন আহত হয়েছেন। আহতদেরকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে প্রথমে বাক্ষণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাদেরকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন।

দুর্ঘটনায় আহতরা হলেন- নিহত রুহুল আমিনের বাবা আলিম উদ্দিন, ছোট ভাই নুরুল আমিন ও ফখরুল আমিন, মামাতো ভাই এমরান আহমদ এবং বিয়ানীবাজার পৌরশহরের পণ্ডিতপাড়া এলাকার বাসিন্দা মাইক্রো চালক বাদশাহ মিয়া। আহতদের মধ্যে নুরুল আমিন ও চালক বাদশাহ মিয়ার অবস্থা আশংকাজনক বলে জানা গেছে।

নিহত রুহুল আমিনের স্বজনরা জানান, পরিবারের ৫ ভাইবোনের মধ্যে রুহুল আমিন সবার বড়। খায়রুল আমিন নামের এক ভাই ব্রাজিল হয়ে দুবছর আগে আমেরিকা পাড়ি দিয়েছে। ছোটভাই নুরুল আমিন ও ফখরুল আমিন এবং ছোটবোন লেখাপড়া করছে। ১৪/১৫ বছর বয়সে আমেরিকায় পাড়ি জমান রুহুল আমিন। কিন্তু গ্রীণকার্ড পেতেই প্রবাসে দীর্ঘ ২৪ বছর সময়ে কেটে গেছে তার। গ্রীণকার্ড পেয়েই ২৪ বছর প্রবাসে কাটানোর পর মাকে দেখতে আর বিয়ে করতে ৬ সপ্তাহের জন্য দেশে আসছিলেন নিহত রুহুল আমিন।

স্বজনরা আরো জানান, মঙ্গলবার সকালে মায়ের সাথে শেষ কথা হয় তার। ঢাকার হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাকে আনতে মাইক্রোবাস নিয়ে সেখানে যান বাবা আলিম উদ্দিন, ছোট দুই ভাই নুরুল আমিন ও ফখরুল আমিন এবং এমরান আহমদ নামের এক মামাতো ভাই। বিমানবন্দর থেকে ফেরার পথে বিপরীতদিক থেকে আসা একটি ট্রাকের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষে এ দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান তিনি।

দীর্ঘদির পর দেশে ফেরার ব্যাপারে রোমাঞ্চিত ছিলেন রুহুল আমিন। আমেরিকার বিমানবন্দরে  বসেই তিনি ফেসবুকে লিখেছিলেন, ‘২৪ বছর পর বাংলাদেশে যাচ্ছি’।

পারিবারিকসূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) ভোরে রুহুল আমিনের মরদেহ তার গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসেন স্বজনরা। রুহুল আমিনের মরদেহ বাড়িতে নিয়ে আসতেই স্বজনরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। ছেলের মরদেহ দেখে তার মা বার বার মুর্ছা যাচ্ছেন। রুহুল আমিনের মরদেহ দেখতে তার বাড়িতে স্থানীয় এলাকার শত শত মানুষ ভিড় জমান।

পরে বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) দুপুর ২টায় বৈরাগীবাজার সিনিয়র আলিম মাদ্রাসা মাঠে তার জানাজার নামাজ শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয়। প্রবাসী রুহুল আমিনের জানাজায় স্থানীয় এলাকাবাসীসহ সর্বস্তরের মানুষের ঢল নামে।

এদিকে, প্রবাসী রুহুল আমিনের মৃত্যুর সংবাদ যেন মেনে নিতে পারছেন না তার পরিবার-পরিজন ও এলাকাবাসী। তার মৃত্যুর খবরে পুরো এলাকাজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।