দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-৫ (জকিগঞ্জ-কানাইঘাট) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ড. আহমদ আল কবিরকে নির্বাচনে জেতাতে গোপন আঁতাতের অভিযোগে জকিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাবেদ মাসুদকে ক্লোজড করা হয়েছে।

ড. আহমদ আল কবিরের সাথে গোপন আঁতাত সম্পর্কে জকিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা বরাবরে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদের লিখিত অভিযোগ দায়েরের পর এর সত্যতা পাওয়ায় আজ শনিবার ওসির বিরুদ্ধে এমন ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হয়।

এর আগে গত ২৭ ডিসেম্বর সিলেট-৫ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ উপজেলা নির্বাহী অফিসার জকিগঞ্জ ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা বরাবরে জকিগঞ্জ থানার ওসি জাবেদ মাসুদ সম্পর্কে লিখিত অভিযোগ দেন।

অভিযোগে মাসুক উদ্দিন উল্লেখ করেন, ‘জকিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জাবেদ মাসুদ নির্বাচনে পক্ষপাতিত্বমূলক আচরণ করছেন। তিনি স্বতন্ত্র (আওয়ামী লীগ) প্রার্থীর পক্ষ নিয়ে বিতর্কিত কর্মকাণ্ড করছেন যা নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে।’

অভিযোগে তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘গত ১৮ ডিসেম্বর ২০২৩ তারিখ ওসির বাস ভবনে স্বতন্ত্র (আওয়ামী লীগ) প্রার্থী আহমদ আল কবিরের পক্ষে সিলেট জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমদ (সীমান্তিক শামীম) ও জকিগঞ্জ উপজেলা যুবলীগের আহ্ববায়ক কামরুজ্জামান ওসির সাথে গোপন বৈঠক করেন বলে গুঞ্জন রয়েছে। উক্ত বৈঠকে স্বতন্ত্র (আওয়ামী লীগ) প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য ওসির সাথে আর্থিক চুক্তি হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। ওসির এমন বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে সাধারণ ভোটারদের মনে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর নিরপেক্ষ ভূমিকা নিয়ে সন্দেহ তৈরী হয়েছে।

অতএব, উপরোক্ত অভিযোগ সমূহ যাচাই বাচাই পূর্বক ওসি মো. জাবেদ মাসুদের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আপনার হস্তক্ষেপ একান্ত প্রয়োজন।’

প্রচুর অর্থবিত্ত পাওয়া ও নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে জকিগঞ্জ থানার ওসি মো. জাবেদ মাসুদ ড. আহমদ আল কবিরের সাথে এমন আঁতাত করছেন বলে তার বিরুদ্ধে ওঠা এমন অভিযোগের সত্যতা পাওয়ার পর শুক্রবার (৬ জানুয়ারি) রাতে তাকে ক্লোজড করা হয়।

এদিকে ওসি মো. জাবেদ মাসুদ ক্লোজড হওয়ার পর স্থানীয় ভোটারদের মধ্যে কিছুটা স্বস্থি ফিরে এসেছে। তার বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেওয়ায় সুষ্ঠু, গ্রহনযোগ্য ও চাপমুক্ত নির্বাচন হবে বলে মনে করছেন তারা।

দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে স্বতন্ত্র প্রার্থী ড. আহমদ আল কবির জকিগঞ্জ ও কানাইঘাট উপজেলায় ভোট কিনতে ভোটারদের মাঝে দেদারছে টাকা ঢালছেন। মনোনয়ন বৈধ ঘোষণার দিন থেকে এ পর্যন্ত দুই উপজেলায় অন্তত ৬ থেকে ৭ কোটি কালো টাকা বিতরণ করেছেন বলে তার ঘনিষ্ঠজনরা জানিয়েছে। কিন্তু এ টাকা কোন উৎস থেকে আসছে তা এখনো পরিষ্কার নয়।

সূত্র জানায়, জকিগঞ্জ ও কানাইঘাট উপজেলায় ডিসেম্বরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত ৫ কোটি টাকার কাছাকাছি ব্যয় করেছেন ড. আহমদ আল কবির। প্রতিদিন ১০ লাখ টাকা করে দুই উপজেলায় বিতরণ করছেন তিনি। নির্বাচনের আগের রাতে ভোট কিনতে প্রতিটি কেন্দ্রভিত্তিক এলাকায় ৫ লাখ টাকা করে বিতরণের পরিকল্পনা রয়েছে তার।

এ ক্ষেত্রে তিনি কাজে তার আস্থাভাজন শামিম আহমদ, ছোট ভাই আহমদ আল ওয়ালী সহ ঘনিষ্ঠজনদের কাজে লাগাচ্ছেন। তাদের হাত দিয়েই ভোটারদের হাতে টাকা পৌছে দেওয়া হচ্ছে। সেন্টার খরচের নামে প্রতিদিন আলাদাভাবে বিতরণ করা হচ্ছে ৫ লাখ টাকা।

এ আসনের শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী কেটলি প্রতীকের মাওলানা হুছামুদ্দীন চৌধুরী ফুলতলী ও নৌকার প্রার্থী মাসুক উদ্দিন আহমদকে টেক্কা দিতে আহমদ আল কবির কাছে টানছেন কওমী ঘরানার আলেম সমাজকে। হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের সাথে একাধিক বৈঠকও করেছেন তিনি।

আহমদ আল কবির প্রকাশ্যে ও গোপনে এভাবে টাকা ছড়ালেও তা নজরে আসছে না নির্বাচন কমিশনের। এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে জনমনে।