শেষ পর্যন্ত কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মরণোৎসব পালনে কতটুকু সফল হয় সিটি কর্পেোরেশন- সেটা নিয়ে সংস্কৃতি কর্মীদের মধ্যে সন্দেহের দানা বেঁধেছে। উদযাপন পর্ষদ নিয়ে বিতর্ক জের শুরু থেকে। এ বিতর্ক নিরসন করতে সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত হস্তক্ষেপ করলেও সংস্কৃতি কর্মীদের উস্মা প্রশমিত হয়নি। উল্টো শনিবার রাতে উদযাপন পর্ষদের দুই দায়িত্বশীল কামরান ও ফাত্তাহ্ পদত্যাগ করেছেন।
রবীন্দ্র শতবর্ষ স্মরণোৎসব নিয়ে গত কয়েকদিন থেকে তোলপাড় চলছে সিলেটের সংস্কৃতি অঙ্গনে। উদযাপন পর্ষদে বিতর্কিত ব্যক্তিদের নাম থাকায় এ নিয়ে আন্দোলনমুখী সিলেটের সংস্কৃতিকর্মীরা। আন্দোলনের অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার শহীদ মিনারে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে সিলেটের বিক্ষুব্ধ সংস্কৃতিক কর্মীরা।
গত ২১ অক্টোবর পরিষদের আহবায়ক ও সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত নিজ বাসভবনে সিলেটের সাংবাদিকদের সাথে মত বিনিময় করেন। মত বিনিময়কালে তিনি সিলেটের রবীন্দ্র স্মরনোৎসবের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে অনুষ্ঠান সফলে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন। তবে, মত বিনিময় সভায় এতোবড় আয়োজনের বাজেটের উৎস এবং ব্যায়ের খাত সম্পর্কে তিনি উপস্থিত সংবাদকর্মীদের কিছুই জানাননি। তাছাড়া, পরিষদের আহবায়ক কমিটির নাম জানালেও এতোবড় আয়োজন সফলভাবে সম্পন্ন করার জন্য কোনো উপ-পরিষদ গঠনের বিষয়টিও নিশ্চিত করেননি। তাছাড়া, সভায় উপস্থিত কোনো সংবাদকর্মীই সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কোনোরকম প্রশ্ন করার সুযোগ পাননি। এ নিয়ে উপস্থিত সংবাদকর্মীদের মধ্যে বিরাজ করছে প্রচণ্ড ক্ষোভ।
সবকিছু অন্ধকারে রেখেই চলছে সিলেটে রবীন্দ্র শতবর্ষ স্মরনোৎসবের মহা আয়োজন। মতবিনিময় সভায় কর্মসূচির বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরেন পরিষদের যুগ্ম সদস্যসচিব আমিনুল ইসলাম লিটন। তিনি কর্মসূচি বিবরণ বর্ণনার এক পর্যায়ে বলেন, ‘উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কে আসছেন, এই মুহূর্তে না জানালেও এটা নিশ্চিত করছি যে, সমাপনী অনুষ্ঠানে থাকছেন-বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী দেশ নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া’।
লিটনের এমন বক্তব্যের পর সভাস্থলে শুরু হয় তুমুল হট্টগোল। উপস্থিত অনেক নেতাই এ সময় লিটনকে জাসাস নেতা আখ্যা দিয়ে পরিষদ থেকে বহিস্কারের দাবি জানান। অবশেষে ক্ষোভের মুখে সোমবার রাতেই আমিনুল ইসলাম লিটন পরিষদের আহবায়ক আবুল মাল আবদুল মুহিতের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন। পরদিন মঙ্গলবার রাতে পরিষদের সভায় উপস্থিত হননি যুগ্ম আহবায়ক ড. আবুল ফতেহ ফাত্তাহ। তিনি গঠিত কমিটির প্রতি বিদ্বেষাগার পোষণ করে সভায় উপস্থিত হওয়া থেকে বিরত থাকেন। এ ব্যাপারে তিনি জানান, ‘ আমি পদত্যাগ করিনি, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। পদত্যাগ করলে নিশ্চয়ই আপনাদের অবগত করা হবে’। অনুষ্ঠানে যোগ দেননি অপর যুগ্ম আহবায়ক নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরানও। এদিকে, উদযাপন পরিষদের সদস্য সচিব পদ থেকে সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর অপসারন দাবি এবং প্রতিনিধিত্বশীল রবীন্দ্র অনুরাগী সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দকে অন্তর্ভূক্ত করার দাবিতে রোববার বিক্ষোভ মিছিল করবে সিলেটের কয়েকটি সাংস্কৃতিক সংগঠন। বিক্ষোভ মিছিল থেকে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করে হবে বলে জানিয়েছেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাদশাহ গাজি।