দোহায় এসে নিরিবিলিই থাকছেন তিনি। কিন্তু তাঁকে সেই অবকাশ দিচ্ছেটা কে? একবার মেসিদের অনুশীলনে তাঁকে ঢুকতে বাধা দেওয়ায় আর কাতার বিশ্ববিদ্যালয়মুখো হননি। তবে এই বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার প্রতিটি ম্যাচের আগে এখন তিনিই ‘অক্টোপাস পল’। সাত মাস আগের এক ভিডিওতে সৌদি আরবের বিপক্ষে বিশেষভাবে সাবধান করে দিয়েছিলেন আগুয়েরো। আজ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেও কি কোনো ভবিতব্য আছে তাঁর? সৌদির কাছে চুন খেয়ে মুখে পুড়েছে। তাই শেষ ষোলোর নকআউটে অস্ট্রেলিয়া নিয়েও চাপা আতঙ্ক সে দেশের মিডিয়ায়। গতকাল আগুয়েরোর হোটেল থেকে তিন মিনিটের এক ভিডিও নিয়ে এসে বুয়েন্সআয়ার্সের এক সাংবাদিক জানালেন- অস্ট্রেলিয়া নিয়ে কিছু নয়, আগুয়েরো শুভেচ্ছা জানিয়েছেন মেসির হাজারতম ম্যাচ নিয়ে।
হ্যাঁ, ১৯ বছর আগে যে কিশোরটি পেশাদার ফুটবলে প্রথম ম্যাচে নেমেছিলেন, আজ তাঁর হাজার ম্যাচের (ক্লাব ও জাতীয় দল মিলিয়ে) মাইলফলক স্পর্শ করার ম্যাচ। দলের সবাই নাকি ম্যাচের পর কিছু একটা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু মেসিই বলেছেন, এসব পরে হবে। আগে ম্যাচটি হয়ে যাক। আসলে বিশ্বকাপে ওই সৌদি ম্যাচের পর রূঢ় বাস্তবতা আর্জেন্টাইনদের এতটা আহত করেছে, ঘরপোড়া গরুর মতো এখন সিঁদুরে মেঘ দেখলেও ভয় তাঁদের!
অন্তত গতকাল সাংবাদিকদের সামনে এসে কোচ স্কালোনি যেভাবে বললেন, তাতে অস্ট্রেলিয়ার প্রতি তাঁদের গভীর শ্রদ্ধাবোধই প্রকাশ পায়। ‘এটা ফুটবল, এখানে ১১ জনের বিপক্ষে ১১ জনের খেলা হয়। অস্ট্রেলিয়া ভালো দল। এখানে ফেভারিট বলে কিছু নেই।’ সামনে অস্ট্রেলিয়া এসেছে বলে পুরো ব্যাপারটি সহজ হয়ে গেছে; যাঁরা ধরে নিয়েছেন, তাঁদের উদ্দেশেও সে দিন মেসির স্পষ্ট বার্তা ছিল এমন- ‘বিশ্বকাপে যে কোনো দল যে কোনো সময় যে কাউকে হারিয়ে দিতে পারে। আমরা সৌদি আরবের বিপক্ষে সেটা দেখেছি। আর নকআউট স্টেজে সামান্যতম ভুল করার সুযোগ নেই আমাদের।’ এমনিতে র্যাঙ্কিংয়ে অস্ট্রেলিয়া ৩৮ নম্বরে। তবে এটাও ঠিক, ডেনমার্ককে অবাক করে দিয়েই তারা তাদের ১৬ বছরের বিশ্বকাপ ইতিহাসে প্রথমবার এই মঞ্চে এসেছে। দলের অন্তত ৯ জন ফুটবলার ইউরোপে নিয়মিত খেলেন।
অস্ট্রেলিয়ার কোচ গ্রাহাম আর্নল্ড সকারুদের জানিয়ে দিয়েছেন, সবাইকে ফিট থেকে সেরাটা দিতে হবে সেরা দলের বিপক্ষে। ‘মেসির সঙ্গে সেলফি তুলতে তোমরা মাঠে নামছো না। তোমাদের সঙ্গে মেসি তখনই সেলফি তুলবে, যখন তোমরা তাঁকে হারাতে পারবে।’ সৌদি আরবের কোচের এই ‘পেপটক’ ভাইরাল হয়েছিল ম্যাচের পর। সকারু কোচ আর্নল্ড অবশ্য অতটা যাচ্ছেন না। ইতিহাস বলে আর্জেন্টিনা-অস্ট্রেলিয়া এ পর্যন্ত যে সাতবার মুখোমুখি হয়েছিল, তার প্রথমটিতে জিতেছিল কিন্তু অস্ট্রেলিয়া। সিডনিতে সেই ১৯৮৮ সালে। এর পর ১৯৯৩ সালে ম্যারাডোনার আর্জেন্টিনার সঙ্গেও ড্র করেছিল সকারুরা। তবে কিনা শেষবার দু’দলের দেখা ২০০৭ সালে।
আর্জেন্টিনা আর অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ফুটবলের বাইরেও একটা অন্য সম্পর্ক রয়েছে। প্রশান্ত মহাসাগর পাড়ি দিলেই মেলবোর্ন বন্দর থেকে বুয়েন্সআয়ার্স। জীবিকার খোঁজে একসময় মেসির বাবা-মা ছেলেকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি দিতে চেয়েছিলেন। মেসির আত্মজীবনীর লেখক জিম বালাজির ভাষায়- আশির দশকের শেষ দিকে আর্জেন্টিনায় যখন অর্থনৈতিক মন্দা চরমে, তখন প্রতিবেশী অনেকের সঙ্গে মেসির বাবা-মাও অস্ট্রেলিয়া যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাঁরা আর যেতে পারেননি। ফুটবলের বাইরে রাগবি নিয়ে দু’দেশের জোর লড়াই চলে। এই অস্ট্রেলিয়ার ফুটবল সম্পর্কে কতটা জানে বর্তমান দল, সকারুরা কি শারীরিক শক্তি ব্যবহার করতে পারে? সংবাদ সম্মেলনে আসা ডি পলের কাছে জানার ছিল এক স্বদেশির। ‘অস্ট্রেলিয়ার খেলোয়াড়দের অনেক ভিডিও দেখেছি এই দু’দিনে। তা ছাড়া বিশ্বকাপে তাদের কিছু ম্যাচ দেখেছি পরে। আমার মনে হয়, তারা মাঠে বেশ দ্রুতগতিতে আক্রমণ করতে পারে। আমাদের ডিফেন্সকে সতর্ক থাকতে হবে। পোল্যান্ড ম্যাচেও এমনটা হয়েছিল। আমরা সেভাবেই তৈরি হয়ে থাকব।’
যেহেতু নকআউট ম্যাচ, অস্ট্রেলিয়ার কৌশল হতে পারে অতিরিক্ত সময়ে ম্যাচ নিয়ে টাইব্রেকারে যাওয়া। সে জন্য প্রস্তুতও রয়েছে আর্জেন্টিনা। আজকের একাদশও ৪-২-২-১ ফরমেটে সাজাতে পারেন স্কালোনি। আক্রমণে জুলিয়ান আলভারেজ, ডি মারিয়া আর লিওনেল মেসি। মাঝমাঠে অ্যালেক্সি অ্যালেস্তার, ডি পল আর অ্যাঞ্জেলো ফার্নান্দেজ। শুধু ডি মারিয়ার চোট নিয়ে খানিকটা শঙ্কা রয়েছে দলের মধ্যে। এর পরও সর্বশক্তি নিয়েই আজ মাঠে নামবে আর্জেন্টিনা। অস্ট্রেলিয়া বলে মনের অজান্তেও কোনো ধরনের গা ছাড়া ভাব আনতে দেবেন না কোচ।