লিওনেল মেসি। ফুটবলে আন্তর্জাতিক কিংবা ক্লাব ফুটবলে মেসি থাকলে প্রতিপক্ষের রণ কৌশল নিয়ে আলাদা পরিকল্পনা নিতে হয়। নেদারল্যান্ডের কোচ ফন গালও কোয়ার্টার ফাইনালে মেসিকে নিয়ে আলাদা পরিকল্পনা এঁকেছেন। আগামী কাল সেই ম্যাচে ফন গালের সেই পরিকল্পনার বাস্তবায়ন কতটুকু করতে পারে তাঁর শিষ্যরা এটাই এখন দেখার বিষয়।
গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচে সেনেগালকে ২-০ গোলে হারানোর পর দ্বিতীয় ম্যাচে ইকুয়েডরের সঙ্গে ১-১ ড্র করে। শেষ ম্যাচে হালকা ঢংয়ে খেলে কাতারের বিপক্ষে ২-০ গোলের জয়ে শেষ ষোলোয় ওঠে ডাচরা। শেষ ষোলোতে যুক্তরাষ্ট্রকে ৩-১ গোলে উড়িয়ে তিনবারের বিশ্বকাপ রানার্সআপরা এখন কোয়ার্টার ফাইনালে লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনার মুখোমুখি হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এখন পর্যন্ত এটাই হতে যাচ্ছে কাতার বিশ্বকাপে ডাচদের জন্য সবচেয়ে কঠিন ম্যাচ—এ নিয়ে কারও মনে সন্দেহ থাকার কোনো কারণ নেই।
অন্যদিকে আর্জেন্টিনার শুরুটা ছিল যাচ্ছেতাই। প্রথম ম্যাচেই সৌদি আরবের কাছে ২-১ গোলে হেরে নিজেদের অনিশ্চয়তার মধ্যেই ফেলেছিল তারা। শেষ ষোলোতে যেতে মেক্সিকো ও পোল্যান্ডের বিপক্ষে পরের দুটি ম্যাচে জিততেই হতো। দ্বিতীয় ম্যাচ থেকেই ঘুরে দাঁড়িয়ে মেক্সিকো আর পোল্যান্ড—দুই দলের বিপক্ষেই ২-০ গোলে জিতে গ্রুপ শীর্ষে থেকেই দ্বিতীয় রাউন্ড নিশ্চিত করেছে তারা। শেষ ষোলোতে অস্ট্রেলিয়াও বাধা হয়নি মেসিদের। হেরেছে ২-১ গোলে। হ্যাঁ, নেদারল্যান্ডসের মতোই কোয়ার্টার ফাইনালটা হতে যাচ্ছে এখনো পর্যন্ত কাতার বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার সবচেয়ে কঠিন ম্যাচ।
এই দুই দলের লড়াইয়ের অতীত ইতিহাসটা অবশ্য নেদারল্যান্ডসের পক্ষেই। এখনো পর্যন্ত আর্জেন্টিনার সঙ্গে বিশ্বকাপে পাঁচবার মাঠে নেমে দুবার জিতেছে নেদারল্যান্ডস। আর্জেন্টিনা জিতেছে একবার। ড্র হয়েছে দুটি ম্যাচ। এই ড্র হওয়া দুটি ম্যাচের একটি ছিল ২০১৪ বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল। যেটিতে আর্জেন্টিনা টাইব্রেকারে নেদারল্যান্ডসকে হারিয়ে জায়গা করে নিয়েছিল ফাইনালে। ১৯৭৪ সালে পশ্চিম জার্মানির বিশ্বকাপে নেদারল্যান্ডস ৪-০ গোলে হারিয়েছিল আর্জেন্টিনাকে। ১৯৭৮ সালের ম্যাচটি ছিল আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপের ফাইনাল। মারিও কেম্পেসের জাদুতে সে ম্যাচে আর্জেন্টিনা ৩-১ গোলে নেদারল্যান্ডসকে হারিয়ে বিশ্বকাপ জিতেছিল। এর পরের লড়াইটি ১৯৯৮ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল। ডেনিস বার্গক্যাম্পের সেই জাদুকরি গোলের ম্যাচ। ডাচরা জিতেছিল ২-১ গোলে। ২০০৬ সালে জার্মানি বিশ্বকাপে গোলশূন্য ড্রয়ের পর ২০১৪-বিশ্বকাপের সেমিফাইনালও নির্ধারিত ও অতিরিক্ত সময়ে ছিল ০-০। এরপর টাইব্রেকারে সেদিন ডাচদের ভাগ্য-বিপর্যয় ঘটে। এর মানে, নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে আর্জেন্টিনা শেষবার সরাসরি জিতেছিল ৪৪ বছর আগে, ১৯৭৮ বিশ্বকাপের ফাইনালে বুয়েনেস এইরেসে।
মেসি, আলভারেজ, ম্যাক অ্যালিস্টার, দি মারিয়া, লাওতারো মার্তিনেজদের বিপক্ষে নেদারল্যান্ডস জয়ের জন্য ছক কষছেন নেদারল্যান্ডসের কোচ লুই ফন গাল। তবে সেই ছকে যে মেসিকে থামানোর বিষয়টা যে আলাদা করেই থাকবে, তা বলে দেওয়াই যায়। বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার মধ্যমণি হয়েই আছেন মেসি। মেক্সিকো, পোল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া—তিন ম্যাচেই মেসি ছিলেন দুর্দান্ত। মেক্সিকো ও অস্ট্রেলিয়া ম্যাচে নিজে গোল করেছেন, গোল করিয়েছেনও।
মেসি একাই তো ম্যাচ জিতিয়ে দিতে পারেন, এটাই মাথায় রাখছে ডাচরা। নিজেদের রক্ষণে মেসি ঢুকে পড়লে তাঁকে আটকানো বেশ মুশকিল। তাই মেসিকে নিচ থেকেই থামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে ডাচদের।
২০১৪ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে মেসির পেছনে নাইজেল ডি ইয়ংকে লাগিয়েছিলেন ফন গালৈ
২০১৪ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে মেসির পেছনে নাইজেল ডি ইয়ংকে লাগিয়েছিলেন ফন গালৈফাইল ছবি, এএফপি
২০১৪ বিশ্বকাপেও নেদারল্যান্ডসের কোচ ফন গালই ছিলেন। তিনি সেমিফাইনালে সেটিই করেছিলেন। মেসিকে নিচে আটকে রেখেছিলেন। তাঁর পেছনে লাগিয়েছিলেন নাইজেল ডি ইয়ংকে এবং সেটি কার্যকর হয়েছিল। গোটা ম্যাচেই নিষ্প্রভ ছিলেন মেসি। ১২০ মিনিটে মেসি ডাচদের গোলে মাত্র একবার শট নিতে পেরেছিলেন। পরে টাইব্রেকার জিতে ফাইনালে ওঠে আর্জেন্টিনা। কালকের ম্যাচে নাইজেল ডি ইয়ংয়ের সেই কাজটা খুব সম্ভবত করতে হবে মার্টেন ডি রুন।
মেসিকে পাহাড়া দিয়ে রাখার পাশাপাশি তাঁর পাসিং লাইনগুলোও বন্ধ করে দিতে হবে। এটা করতে হবে নিচে থেকেই। তিনি মার্কারকে ছিটকে বেরিয়ে যেতে পারেন অবলীলায়। ডাচ রক্ষণকে সেই মুহূর্তের জন্য সার্বক্ষণিক প্রস্তুত থাকতে হবে। সেই দায়িত্ব ভার্জিল ফন ডাইকের। এ ক্ষেত্রে তাঁর আদর্শ রন ভ্লার। ব্রাজিল বিশ্বকাপে ভ্লারের ট্যাকলগুলো নিশ্চয়ই ভুলে যাননি মেসি।