‘ইন্নালিল্লাহি…রাজিউন’ প্রতিদিন সকাল, বিকাল কিংবা সন্ধ্যা, প্রায় প্রতিক্ষণেই বিয়ানীবাজার উপজেলায় এই বাক্যেই মৃত্যুর সংবাদ প্রচার হচ্ছে। এসব মৃত্যুর অধিকাংশেরই বেশি আদতে করোনায় মৃত্যু- এমনটাই ধারণা স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বশীলদের। মৃত্যু সংবাদ শোনার পরই একজন অপরজনের কাছে জানতে চান মৃত্যুর কারণ। কেউ এসব মৃত্যুর কারণ গোপন করেন আবার কেউ সরাসরি বলে দেন ‘করোনায় মৃত্যু কিংবা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু’। অনেকে আবার করোনার ভয়ে আগাম সতর্কতার অংশ হিসেবে দাফন কাজেও অংশ নেননা। স্বেচ্ছাসেবীদের ডেকে এনে দাফন-কাফনের ব্যবস্থা করান। অথচ করোনা রোগীদের চিকিৎসার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত চিকিৎসক ছাড়াও স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টদের অনেকে একে ‘শুভঙ্করের ফাঁকি’ হিসেবে অভিহিত করে বলছেন, উপসর্গের রোগীদের বেশিরভাগই প্রকৃতপক্ষে মারা যাচ্ছেন করোনাতেই।

দিনের ব্যস্ততার কোলাহল, রাতের নীরবতায় বিয়ানীবাজারের মন-মস্তিকে ছেদ করে সাইরেন বাজিয়ে দ্রুতবেগে অ্যাম্বুলেন্সের ছুটেচলার শব্দ। তখন সৃষ্টিকর্তার কৃপা কামনা করে অসহায়ত্ব প্রকাশ করেন বিয়ানীবাজারের হাজারো মানুষ। গত দুই সপ্তাহে বিয়ানীবাজার উপজেলায় মৃত্যুর হিসেব যেন পাল্টে দিয়েছে সকল স্বাভাবিকতা। মারা যাওয়াদের কেউ বার্ধক্যজনিত, অসূস্থতা, হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে অথবা অন্য কোন কারণে গত ক’দিনে মুত্যুবরণ করেছেন প্রায় শতাধিক মানুষ। তবে এদের মধ্যে বায়োজেষ্ঠ্যদের সংখ্যাই বেশি।

উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, বিয়ানীবাজারে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৯৪৯জন। এর মধ্যে মারা গেছেন ৫২জন এবং বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৩০৩জন করোনা রোগী। তবে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের হিসেবে এমন তথ্য ওঠে আসলেও উপজেলায় আক্রান্ত ও মৃত রোগীর সংখ্যা আরও অনেক বেশী হতে পারে বলে মনে করছেন সচেতন মহলের নাগরিকরা।

একদিকে, বিয়ানীবাজার উপজেলায় যখন করোনার ভয়বহতা আশঙ্কাজনক হারে বাড়তে শুরু করেছে এই পরিস্থিতিতে চলমান কঠোর লকডাউনের শেষ দিকে এসেও এখানকার জনজীবন অনেকটা স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। জীবিকার তাগিদে প্রতিদিনই বাইরে বের হচ্ছেন বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ।  স্বল্প পরিসরে জীবিকা সচল রাখার প্রানান্তর চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে তাদের।

অন্যদিকে, চলমান কঠোর লকডাউনেও বিয়ানীবাজারের করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে উপজেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের চেষ্টায়ও যেন ব্যর্থ হওয়ার পথে। সরকারি বিধিনিষেধ উপেক্ষা কিংবা স্বাস্থ্যবিধি অমান্যের কারণে মামলা দায়ের ছাড়াও প্রতিনিয়ত গুনতে হচ্ছে অর্থদণ্ড। তবুও মানুষের মধ্যে যেন সচেতনতার শতভাগ ঘাটতি রয়েছে। মানুষের এমন অসচেতনতার জন্য কি বলি দিতে হবে কাছের মানুষদের? এমন প্রশ্ন এখন সচেতন মহলের।

বিয়ানীবাজারে গণটিকার সূচি পরিবর্তন, যখন যেভাবে আর যারা পাবেন