প্রতিবেশি ও সাবেক গৃহশিক্ষক, তার মা ও নানী তিনজন মিলেই হত্যা করেছেন সিলেটের কানাইঘাটের ৫ বছরের শিশু মুনতাহাকে। হত্যার পর মরদেহ প্রথমে মাটিতে পুঁতে ফেলেন তারা। রোববার মরদেহ তুলে মুনতাহার চাচার বাড়ির পুকুরে ফেলার সময় বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। এসময় মুনতাহার মরদেহ উদ্ধার করেন স্থানীয়রা। এ ঘটনায় হাতেনাতে আলিফজান নামে এক নারীকে আটক করে পুলিশে দেওয়া হয়েছে।

মুনতাহার স্বজন ও পুলিশ সূত্রে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় শিশু মুনতাহার সাবেক গৃহশিক্ষক শামীমা বেগম মার্জিয়া, তার মা আলিফজান বিবি ও নানী কুতুবজান বিবিকে আটক করেছে পুলিশ।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রোববার রাতে সন্দেহজনকভাবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শিশু মুনতাহার গৃহশিক্ষক শামীমা বেগম মার্জিয়াকে থানায় নেয় পুলিশ। এসময় তার আচরণ সন্দেহজনক মনে হলে মার্জিয়ার বাড়িতে মুনতাহার সন্ধানে তল্লাশী চালান স্থানীয়রা। রাত সাড়ে তিনটার দিকে মার্জিয়ার বাড়ির আশেপাশে তল্লাশী চালানোর এক পর্যায়ে মার্জিয়ার মা আলিফজান বিবিকে অন্ধকারের মধ্যে রাস্তা পার হতে দেখেন মুনতাহার স্বজনরা। এসময় তাকে আটকাতে চাইলে সে দৌড়ে পালানোর চেষ্ঠা করে। পরে স্থানীয়রা গিয়ে কাদামাটি মাখা মুনতাহার মরদেহ দেখতে পান। এসময় মার্জিয়ার মাকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করা হয়।

কানাইঘাট সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আফসার উদ্দিন আহমদ বলেন, মুনতাহার নিখোঁজের পর থেকে পুলিশ আন্তরিকভাবে চেষ্ঠা করছিল। কিন্তু কোনো ক্ল্যু পাচ্ছিল না। গতকাল স্থানীয় সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে গেলে মার্জিয়ার আচরণ সন্দেহজনক মনে করে। পরে রাতে পুলিশ তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে যায়। এরপর স্থানীয় ইউপি সদস্যকে মার্জিয়ার বাড়ির আশেপাশে মাটি খোড়া আছে কী না খোঁজ নিতে বলেন।

তিনি বলেন, পুলিশের তথ্যমতে মুনতাহার স্বজনসহ স্থানীয়রা রোববার রাতভর মাটিখোড়া কোনো জায়গা আছে কী না খুঁজতে থাকেন। ফজরের আজানের আগ মুহুর্তে মার্জিয়ার মা আলিফজান বিবিকে হঠাৎ অন্ধাকারের মধ্যে রাস্তা পার হতে দেখে আটকানো চেষ্টা করেন। এসময় সে দৌড়ে পালানোর চেষ্ঠা করলে স্থানীয়রা তাকে আটক করেন। পরে কাদামাটি মাখা মুনতাহার মরদেহ দেখতে পান।

আটকের পর সে জানিয়েছে, মরদেহ প্রথমে মাটিতে পুঁতে ফেলেছিল। রাতে সেখান থেকে মরদেহ তুলে মুনতাহার চাচার বাড়ির পুকুরে ফেলতে চেয়েছিল।

ইউপি চেয়ারম্যান আফসার উদ্দিন বলেন, মার্জিয়া মুনতাহার প্রতিবেশি ছিল। একসময় ভিক্ষা করে মার্জিয়ার মা ও নানি। একসময় মুনতাহাকে বাড়িতে পড়াতো মার্জিয়া। মার্জিয়া স্বামী পরিত্যাক্তা হওয়ায় বাড়ির বাইরে গেলে মুনতাহাকে সঙ্গে নিতো। সবাই তাকে বিশ্বাসও করতেন।

কোন কারণে তাকে হত্যা করা হয়েছে তা জানা যায়নি। তবে সম্প্রতি মার্জিয়ার পরিবারের সঙ্গে তাদের বিরোধ চলছিল বলে জানতে পেরেছেন চেয়ারম্যান আফসার।

এর আগে গত ৩ নভেম্বর সকালে বাবার সঙ্গে স্থানীয় একটি ওয়াজ মাহফিল থেকে বাড়ি ফিরে শিশু মুনতাহা। পরে আশপাশের বাড়িতে শিশুদের সঙ্গে খেলাধুলা করতে যায়। কিন্তু বিকেলে হলে বাড়ি না ফিরলে খোঁজাখুঁজি শুরু হয়। তারপর তাকে আর কোথাও পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় মুনতাহার বাবা কানাইঘাট থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মুনতাহা নিখোঁজের বিষয়টি ছড়িয়ে পড়ে। তার সন্ধানে ঘোষণা করা পুরস্কারও। তবুও হদিস মিলছিল না শিশুটির।