দীর্ঘদিন পর বিয়ানীবাজার উপজেলা ও পৌর যুবলীগের কমিটি গঠনের লক্ষ্যে পদপ্রত্যাশীদের জীবনবৃত্তান্ত সংগ্রহ করেছে জেলা যুবলীগ। এতে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরেছে স্থানীয় যুবলীগের নেতাকর্মীদের মাঝে। কমিটিতে স্থান পেতে জেলায় জীবন বৃত্তান্ত জমা দেয়া শতাধিক নেতাকর্মীর মধ্য থেকে যাচাই-বাছাই শেষে অনুমোদনের জন্য কমিটির দুটোর রূপরেখা চূড়ান্ত করা হবে। তবে সহসাই বিয়ানীবাজার যুবলীগের দুই কমিটির ঘোষণা আসছে না এটা প্রায় নিশ্চিত। ‍মুঠোফোনে মঙ্গলবার (৪ অক্টোবর) রাতে একথা জানিয়েছেন সিলেট জেলা যুবলীগের সভাপতি শামীম আহমদ (ভিপি)।

জানা গেছে, আগামী ২ নভেম্বর অনুষ্ঠেয় ওসমানীনগর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের দলীয় প্রার্থী মনোনীত হয়েছেন জেলা যুবলীগের সভাপতি শামীম আহমদ (ভিপি)। পাশাপাশি তার স্ত্রী আগামী ১৭ অক্টোবর অনুষ্ঠেয় সিলেট জেলা পরিষদ নির্বাচনে সংরক্ষিত ২নং ওয়ার্ড সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। অন্যদিকে, জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমদ সিলেট জেলা পরিষদ নির্বাচনে ১২নং ওয়ার্ড থেকে সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন। সে হিসেবে বলা যেতেই পারে মাস দুয়েকের মধ্যে বিয়ানীবাজার উপজেলা ও পৌর যুবলীগের কমিটি ঘোষণার কোন সুযোগ নেই। আর এমন খবরে অনেকটা হতাশা ব্যক্ত করেছেন স্থানীয় যুবলীগের পদপ্রত্যাশী নেতাকর্মীরা।

জেলা যুবলীগ সূত্রে জানা গেছে, পদপ্রত্যাশী শতাধিক নেতাকর্মী জেলা যুবলীগের কাছে জীবনবৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন। পদপ্রত্যাশী তালিকায় রয়েছেন- সাইফুল ইসলাম নিপু, সুহেল আহমদ রাশেদ, রফিকুল হক চেীধুরী, হানিফ ইফতেখার, মাছুম কবির, ওয়াহিদুজ্জামান টিটন, ইকবাল হোসেন একন, ‍সরোয়ার হোসেন, সাজু আহমদ, আশীষ চক্রবর্তী, ইমরুল কায়েস, ছায়দুল ইসলাম, আল আমিন, কেএইচ সুমন, কামরান হোসেন, শহিদুর রহমান, রায়হান খান, অনির্বাণ চন্দ পল্লব, আব্দুল মুনিম সাব্বির, ‍সাঈদ আহমদ, জাবেদ আহমদ, রুমেল আহমদ প্রমুখ।

মঙ্গলবার রাতে মুঠোফোনে আলাপকালে জেলা যুবলীগের সভাপতি শামীম আহমদ জানান, ’মাস দুয়েকের মধ্যে কমিটি ঘোষণা করা সম্ভব হচ্ছে না। সিলেট জেলা পরিষদ ও ওসমানীনগর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের কারণে কমিটি ঘোষণা স্থগিত রাখা হয়েছে। তবে আমরা উপজেলা ও পৌর কমিটির গঠনের লক্ষ্যে প্রায় শতাধিক পদপ্রত্যাশীদের জীবনবৃত্তান্ত সংগ্রহ করেছি। ইউনিট প্রতি একজন আহবায়ক, দুইজন যুগ্ম আহবায়ক ও কয়েকজন সদস্যের সমন্বয়ে কমিটি দেয়া হবে। পরবর্তীতে ঘোষিত কমিটির নেতৃবৃন্দ ৫১ সদস্যের আহবায়ক কমিটি পূর্ণাঙ্গ করবেন।’

জানা গেছে, যুবলীগের ত্যাগী নেতাকর্মীদের নিয়ে কমিটি গঠন হচ্ছে-এতোদিন এমন আলোচনা ছিল বিয়ানীবাজারের টক আব দ্য টাউন। কিন্তু সম্প্রতি কতিপয় ধূর্ত প্রকৃতির ‘আগন্তুক’ কর্মী নিজেদেরকে আহবায়ক, যুগ্ম আহবায়ক দাবি করে বেড়াচ্ছে। অথচ খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ‘বিএনপি-জামাত কানেকশন’ আছে এমন কেউ আহবায়ক হওয়া তো দূরের কথা, তাদের নাম কমিটিতে থাকবে কি-না সন্দেহ রয়েছে।

এ ব্যাপারে কথা হয় উপজেলা যুবলীগের পদপ্রত্যাশী সুহেল আহমদ রাশেদ, হানিফ ইফতেখার, কামরান হোসেন ও শহিদুর রহমানের সাথে। তারা জানান, এমনিতে কমিটিহীন অবস্থায় এক যুগ পার করে দেয়ায় স্থানীয় যুবলীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম অনেকটাই স্থবির হয়ে পড়েছে। এখন যদি কেন্দ্রীয় নেতার মদদপুষ্ট, পদ বানিজ্যের সাথে সম্পৃক্ত কিংবা বিএনপি-জামাত কানেকশন আছে এমন কাউকে যুবলীগের দায়িত্ব দেয়া হয়, তাহলে ত্যাগীদের অবমূল্যায়ন করা হবে। যুবলীগের হাজারো নেতাকর্মীদের সাথে বেইমানি করা হবে। তাছাড়া এমন ব্যক্তিদের নিয়ে কমিটি গঠন করা হলে সেই কমিটি থেকে তারা নিজেদের প্রত্যাহার করে নেবার কথাও জানান।

বিয়ানীবাজারের দুটি শাখার আহবায়ক কমিটিতে কারা স্থান পাচ্ছেন এমন প্রশ্নের জবাবে এই প্রতিবেদককে জেলা যুবলীগের সভাপতি শামীম আহমদ জানান, ‘জীবনবৃত্তান্ত যাচাই-বাছাই শেষে অবশ্যই ত্যাগী, রাজনীতির মাঠে জনপ্রিয় ও কর্মীবান্ধব নেতৃবৃন্দকে কমিটিতে মূল্যায়ন করা হবে।’

দলের মূল সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের আশীর্বাদ তুষ্ট কিংবা বিএনপি-জামাত সংশ্লিষ্টতা রয়েছে এমন নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করা হবে কি না জানতে চাইলে তিনি জানান, দীর্ঘ অপেক্ষার পর আমরা বিয়ানীবাজার যুবলীগের কমিটি গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। মূলত যুবলীগকে ঢেলে সাজাতেই এমন উদ্যোগ। এখানে অন্য দল থেকে আসা, বিতর্কিত কিংবা আমাদের বৃহৎ সংগঠন আওয়ামী লীগের কোন নেতার মদদপুষ্ট নেতাকর্মীকে এই কমিটিতে স্থান দেয়া হবে না এটা নিশ্চিত।

উল্লেখ্য, বিয়ানীবাজার উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের কমিটি এক যুগ পূর্বে কমিটি হয়েছিল। আব্দুল কুদ্দুছ টিটুকে আহবায়ক এবং ছফর উদ্দিন লোদী ও জুবের আহমদকে যুগ্ম আহবায়ক করে উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক কমিটির এক যুগের বেশি সময় অতিক্রম করলেও পূর্নাঙ্গ কমিটি গঠন করতে পারেননি এ তিন দায়িত্বশীল। একই সাথে এক যুগেরও বেশি সময় থেকে নেই ইউনিয়ন যুবলীগের কমিটি। ফলে সংগঠনের কার্যক্রম ঝিমিয়ে পড়ে। আহবায়ক কমিটির তিন দায়িত্বশীলদের মধ্যে শুধুমাত্র যুগ্ম আহবায়ক জুবের আহমদ দেশে অবস্থান করছেন, আর অন্য দুইজন বিদেশের মাটিতে। এ পর্যায়ে আওয়ামী যুবলীগকে চাঙ্গা করতে গতিশীল নেতৃত্বের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠনের চিন্তা করছেন দায়িত্বশীলরা। তাছাড়া বিয়ানীবাজার উপজেলা ও পৌর যুবলীগের আহবায়ক কমিটি রাজপথে সরকারবিরোধী আন্দোলন মোকাবেলা করতে হবে- এ বিষয়টি মাথায় রেখেই সামনে অগ্রসর হচ্ছে সিলেট জেলা যুবলীগ। তারা কেন্দ্রের নির্দেশনানুযায়ী উপজেলা ও পৌর যুবলীগকে অনেকটা শক্তিশালী এবং ঢেলে সাজাতে কাজ করছেন।

এদিকে, উপজেলা ও পৌর আওয়ামী যুবলীগের নেতৃত্বে আসতে সাবেক ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। বিশেষ করে দীর্ঘদিন ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত থাকা নেতাকর্মীরা যুবলীগের দায়িত্বে আসতে চেষ্টা-তদবীর করছেন। তবে গত এক যুগ থেকে যুবলীগের ক্ষীণ অবস্থান গতিশীল ও সক্রিয় করতে রাজনীতির মাঠে সক্রিয় এবং ত্যাগী নেতৃত্ব চাইছেন সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

‌বিয়ানীবাজারের শামীম দম্পতির স্বপ্ন ভাঙছে কুশিয়ারা, আতঙ্কে কাটছে দিবারাত্রি