মৌলভীবাজারের বড়লেখায় ভূমির ভাঙন ঠেকাতে একটি পরিবারের লোকজন নিজেদের ভূমির সীমানায় বাঁশের বেড়া দিয়েছিলেন। তবে বেড়াটি চলাচলের (সরকারি) রাস্তার ওপর দেওয়া হয়েছে দাবি করে প্রতিপক্ষের লোকজন বেড়াটি উপড়ে ফেলেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এমনকি তারা ওই পরিবারের লোকজনের ওপর হামলাও চালিয়েছে। এতে ওই পরিবারের ৫ জন গুরতর আহত হয়েছেন। গত মঙ্গলবার (১২ জুলাই) দুপুরে উপজেলার উত্তর শাহবাজপুর ইউপির বড়াইল গ্রামে এই ঘটনা ঘটে।

হামলায় আহতরা হলেন, আবুল হোসেন বলু তার ভাতিজা আহমদ উল্ল্যাহ, ভাইয়ের স্ত্রী ছালেহা বেগম, তার স্ত্রী মিলন আক্তার ও মেয়ে হানি বেগম। আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে একজনকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

এই ঘটনায় আহত আবুল হোসেন বলু’র বড় ভাই সোহরাব হোসেন বাদি হয়ে বড়লেখা থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এতে উত্তর শাহবাজপুর ইউপির বড়াইল গ্রামের মৃত চেরাগ আলীর ছেলে সাইদুল ইসলাম সাজু ও তার ভাই তাজুল ইসলামসহ নয়জনের নামোল্লেখ করা হয়েছে।

এদিকে অভিযোগে সাইদুল ইসলাম সাজু ও তার ভাই তাজুল ইসলামের নাম থাকায় তিনি বিস্ময় প্রকাশ করেছে দাবি করছেন, সামাজিকভাবে হেয় করতে পরিকল্পিতভাবে অভিযোগে তাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

লিখিত অভিযোগ ও ভুক্তভোগী পরিবার সূত্রে জানা গেছে, বিবাদিদের সাথে বাদি পক্ষের লোকজনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছে। সম্প্রতি আবুল হোসেন বলু গংরা ভারি বর্ষণে মাটির ভাঙন ঠেকাতে নিজেদের ভূমির সীমানায় কয়েকটি বাঁশের কয়েকটি খুঁটি গাড়েন। আর এই খুঁটিগুলো সরকারি রাস্তার ওপর গাড়া হয়েছে দাবি করে গত মঙ্গলবার দুপুরে বিবাদিরা আবুল হোসেন বলুকে গালাগালি শুরু করেন। এসময় তিনি প্রতিবাদ করায় বিবাদিরা তার ওপর দা দিয়ে হামলা চালায়। এতে তিনি বাম হাতের কনুইয়ে আঘাত পান। বলুকে বাঁচাতে তার ভাতিজা আহমদ উল্ল্যাহ এগিয়ে এলে বিবাদিদের দায়ের কুপে আহমদ মাথায় আঘাত পান। তাদের বাঁচাতে এগিয়ে এসে বলুর ভাইয়ের স্ত্রী ছালেহা বেগম, তার স্ত্রী মিলন আক্তার এবং মেয়ে হানি বেগমও আহত হয়েছেন। বিবাদিরা তাদের ব্যাপক মারধর করেছে। এতে তারা শরীরের বিভিন্নস্থানে আঘাত পেয়েছেন। পরে তাদের চিৎকারে অন্যরা এগিয়ে এসে বিবাদিদের কবল থেকে তাদের উদ্ধার করে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। পরে আহতদের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করেন।

এদিকে অভিযোগের বিষয়ে সাইদুল ইসলাম সাজু বলেন, যে রাস্তায় তারা (আবুল হোসেন বলু) বেড়া দিয়েছেন সেটা সরকারি রাস্তা। এলাকার মানুষজন চলাচল করেন। তারা অনেকটা জোরপূর্বক রাস্তায় বেড়াটি দিয়েছেন। এতে মানুষের চলাচলের সমস্যা হচ্ছে। ঘটনার দিন আমাদের প্রতিবেশি আবুল কাশেম রাস্তার বেড়াটি তুলে ফেলেন। পরে তারা আবার (আবুল হোসেন বলু গংরা) বেড়াটি আবার বসিয়ে দেন। এখানেই ঘটনাটি শেষ হয়ে যেতে পারতো। কিন্তু তারা আবুল কাশেমকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি শুরু করেন। পরে সে প্রতিবাদ করলে তারা তাকে মারধর করেন। একপর্যায়ে সেখানে উভয়পক্ষের মধ্যে কিছুটা মারামারি হয়েছে। এসময় আবুল হোসেন বলুসহ কয়েকজন আহত হয়েছেন। ঘটনা শুরুর কিছু পর আমি সেখানে গিয়েছি। পরে আহতদের দেখতে হাসপাতালে গিয়েছি। তাদের খোঁজ-খবর নিয়েছি। এখন তারা উল্টো আমার ও আমার ভাইয়ের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দিয়েছেন। বিষয়টি দেখে অবাক হয়েছি। তারা পরিকল্পিতভাবে আমাদের সামাজিকভাবে হেয় করতে এই কাজটা করেছেন। যা দু:খজনক।

অভিযোগকারী সোহরাব হোসেন বলেন, ভারি বৃষ্টিতে যাতে মাটি ধসে না যায় সেজন্য মাটি আটকাতে আমাদের নিজেদের ভূমির সীমানায় বাঁশের বেড়া দেওয়া হয়েছিল। বেড়াটি নাকি সরকারি রাস্তার ওপর দেওয়া হয়েছে। এসব কথা বলে বিবাদিরা বেড়াটি উপড়ে ফেলেছে। এমনকি তারা আমার ভাই, ভাবি, ভাতিজা-ভাতিজিকে মেরে রক্তাক্ত করেছে। তাদের অবস্থা গুরুতর। তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আমরা এই ঘটনার ন্যায় বিচার চাই।

উত্তর শাহবাজপুর ইউপির চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন আহমদ বলেন, সরকারি রাস্তায় বেড়া দেওয়ার কোনো নিয়ম নেই। এরপরও আমরা উভয়পক্ষকে বলেছি বিষয়টি দেখবো। এরমধ্যেও তারা মারামারিতে জড়িয়েছে। একপক্ষ থানায় অভিযোগ দিয়েছে বলে শুনেছি। বিষয়টি খোঁজ নিচ্ছি।