মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার বর্নি ইউনিয়নে বর্নির ধুছনির দই স্বাদে অতুলনীয় । এই বিশেষ দইয়ের তৈরি হয় হাকালুকি হাওর পাড়ের রিষ্টপুষ্ট গরু ও মহিষের দুধ দিয়ে। কিন্তু প্রচার প্রচারণা না থাকায় এই বর্নি ধুছনির দইয়ের বাজার চাহিদা তেমনটা হচ্ছেনা। যারা জানেন তারাই শুধু এই ধুছনি দই এর ক্রেতা। তবে দিনদিন এই দইয়ের চাহিদা বাড়ছে বলে জানান দই এর কারিগর গৌরাঙ্গ দাস। গোল বাঁশের তৈরি ঝুড়ি (ধুছনি)তে এ দই পাতা হয় বলে এ দইয়ের নাম দেয়া হয়েছে ধুছনির দই।

গত বুধবার মৌলভীবাজারের বড়লেখার বর্নি ইউনিয়নের নিহারী ফড়িঙ্গা গ্রামের গৌরাঙ্গ দাসের (৫৫) বাড়িতে গেলে দেখা যায় বাঁশ-বেতের তৈরি ছোট-বড় বাঁশের ঝুড়িতে গরম ও ঘনো গরু ও মহিষের দুধ দিয়ে বাড়ির বউরা ধুছনির দই তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। ওই গ্রামের গৃহিণী বাসন্তি দাস বলেন, এই ধুছনি (বাঁশের ঝুড়ি)এর গায়ে ক্ষীরের মতো ময়দার প্রলেপ দিয়ে ঝুড়ির ছিদ্রগুলো বন্ধ করে তা শুকিয়ে সেই ধুছনিতে গরু- মহিষের দুধ ঢেলে এই বিশেষ দই পাতা হয়।

গ্রামের প্রবীণ দই তারিগর গৌরাঙ্গ দাস বলেন, আমাদের বাপ-দাদা এই দই তৈরি করতেন। এ দই খাটি দুধের তৈরি দই। এতে কিছুই মিশাই না। হাওর পাড়ের গ্রামগুলোতে খাটি মহিষের দুধ পাওয়া যায়। আমরা তা সংগ্রহ করে নিজের হাতে ধুছনি দই বানাই। এ দই কাত করলেও পড়ে না। খেতেও বেশ স্বাদ হয় এ দই। এটা তাঁদের পারিবারিক ব্যবসা।

তিনি বলেন হাওর পারের গ্রামগুলোতে এখনোও গরু-মহিষের নির্ভেজাল দুধ পাওয়া যায়। দইয়ের পাত্র ও স্বাদের ভিন্নতার জন্য এ দইয়ের আলাদা চাহিদা রয়েছে। দই এর পাত্রটি বাঁশ-বেত দিয়ে বানানো হয়। ধুছইন বানানোর জন্য কারিগর আছেন, তারাই চাহিদামতো পাত্র বানিয়ে দেন। পাত্রটির স্থানীয় নাম ‘ধুছনি’। ধুছনিতে পাতা হয় বলে এর নাম দেয়া হয়েছে ‘ধুছনির দই’।

দুই কেজি ও পাঁচ কেজি ওজনের ধুছনিতে তাঁরা দই পাতেন (বসান)। এক কেজি দইয়ের দাম তিনশত টাকা। প্রতিদিন কিছু না কিছু দইয়ের অর্ডার থাকে। কাষ্টমারের বাড়িতে দই পৌঁছে দেয়া হয়, কখনো কাষ্টমার এসে আমাদের বাড়ি থেকে দই নিয়ে যান। তবে কোন সময় দইয়ের চাহিদা না থাকলে এ দুধ দিয়ে ছানা তৈরি করে মিষ্টির দোকানে বিক্রি করেন।

যারা জানেন তাদের বিয়ে, অন্য অনুষ্ঠানে এক- দুই মন দই থাকে সরবরাহ করে থাকেন।হাকালুকি হাওর পারে একটি বাজারে সকালবেলা দুধের হাট বসে। গ্রামের গরু-মহিষের মালিক সেই হাটে টাটকা দুধ বিক্রি করেন। সেখান থেকে আমরা দুধ কিনে দই তৈরি করি। বড়লেখা,জুড়ী, ও সিলেটের গোলাপগঞ্জে এ দইয়ের চাহিদা আছে।

বড়লেখার অজমীর গ্রামের সজল দে ও মান্না দে বলেন, আমরা বহু দিন থেকে ধুছনীর দই খেয়ে আসছেন। মহিষের দুধের এ দই স্বাদই অন্য রকম। আমাদের আত্মীয়দের কাছে ধুছনির দই এর চাহিদা রয়েছে। তারাও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এই বিশেষ ধুছনি দই নিয়ে থাকেন। ব্যাপক প্রচার হলে এ দই মৌলভীবাজার জেলার বাইরেও বিক্রি হবে বলে তারা মনে করেন।