ব্যাংকের শহর হিসেবে সিলেট জুড়ে বিয়ানীবাজার উপজেলার ব্যাপক সুনাম রয়েছে। প্রবাস থেকে রেমিট্যান্স আসায় সিলেটের অন্যান্য উপজেলার তুলনায় এই উপজেলাটি অনেকটা এগিয়ে। প্রবাসীদের বৈধ পথে পাঠানোর রেমিটেন্স এর উপর ভর করে এ উপজেলায় ২৯ ব্যাংকের ৪৪ শাখা রয়েছে। কিন্তু দেশের অর্থ নৈতিক অবস্থা ও ৫ আগস্টের পট পরিবর্তনের পর দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মতো ব্যাংকের শহর খ্যাত বিয়ানীবাজারে আটটি ব্যাংকের শাখায় তারুল্য সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। গ্রাহককে টাকা দিতে না পারায় ব্যাংকের ভেতরে ঘটছে কর্মকর্তাদের সাথে বাগবিতণ্ডা।
দেউলিয়ার পথে থাকা দেশের ১০টি ব্যাংকের মধ্যে বেশ কয়েকটি ব্যাংকের শাখা বিয়ানীবাজারে রয়েছে। এসব ব্যাংকে নগদ অর্থের যোগান দিতে হিমশিম খাচ্ছে দায়িত্বশীলরা। বিশেষ করে বিয়ানীবাজারের ন্যাশনাল ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, আইসিবি ব্যাংক ও ফাস্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে গ্রাহকরা চটছেন ব্যাংকের কর্মরতদের উপর। রোববার ও সোমবার গ্রাহকদের সাথে বার বার বাগবিতণ্ডার পর কয়েকটি ব্যাংক সপ্তাহের দুইবার ৫হাজার টাকা করে নগদ অর্থ
দিতে সম্মত হয়েছে। তারুল্যের প্রকট আকার দেখা দেয়ায় ব্যাংকগুলোর দায়িত্বশীলরা গ্রাহকদের আশ্বাস দেয়া টাকাও কিভাবে দেবেন সেটিও ভাবিয়ে তুলেছে।
সরেজমিন বিয়ানীবাজার পৌরশহরের বেশ কয়েকটি ব্যাংক ঘুরে দেখা যায় ,সকাল থেকে নগদ অর্থ উত্তোলনের জন্য ব্যাংক গুলোর প্রবেশ মুখে গ্রাহকদের বিশাল লাইন। প্রয়োজন মত টাকা না পেয়ে হতাশ অনেকেই। যুবক থেকে শুরু করে নানা বয়সের গ্রাহকের অভিযোগ প্রতিদিনই তাদের সাথে একই ঘটনা ঘটছে। গ্রাহক ও ব্যাংক কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর আগস্ট মাস থেকে গ্রাহকদের চাহিদামতো সঞ্চয় করা টাকা দিতে পারছেন না এসব ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। গ্রাহককে ২ থেকে ১০ হাজার টাকা দিয়ে কোনো রকমে সন্তোষ্ট করছেন। গ্রাহকরা চাহিদামতো টাকা না পেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
ব্যবসায়ী নাজিম উদ্দিন বলেন ফাস্ট সিকিউরিটি ও স্যোসাল ইসলামি ব্যাংকে টাকা তুলতে গিয়ে পারছি না। তিনদিন যাওয়ার পর আজ (সোমবার) ৫ টাকা পেয়েছি। তারা বলেছে সপ্তাহে দুইদিন ৫ হাজার করে টাকা গ্রাহকদের দেবে। তিনি বলেন, ব্যাংকে রাখা আমার টাকা, অথচ আমি টাকা পাচ্ছি না। এর চেয়ে কষ্ট ও আর হতাশার কি হতে পারে।
ব্যবসায়ী আলম হোসেন বলেন, গ্রাহকদের টাকা দিতে পারছে না ব্যাংক। ব্যাংকে টাকা নেই এ খবর ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে প্রতিদিন শত শত গ্রাহক টাকা নিতে আসছেন ফলে বেকায়দা পড়েছে ব্যাংকগুলো। না পারছে টাকা দিতে না পারছে গ্রাহকদের সন্তুষ্ট করতে।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে জনৈক ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, আগে প্রতিদিন লেনদেন হতো। গ্রাহকদের নগদ যত টাকা দেয়া হতো তার চেয়ে বেশি নগদ টাকা জমা হতো। নগদ টাকা উত্তোলন করতে গ্রাহক আসতেন ৬০ থেকে ৭০জনের মতো। কিন্তু ব্যাংকের টাকা নেই বা ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছে এসব খবর চাউর হওয়ার পর থেকে প্রতিদিন শত শত গ্রাহক টাকা তুলতে আসছেন যার কারণে ব্যাংক এ সীমাহীন সংকটের মধ্যে পড়েছে।