‘চারতলা বিশিষ্ট সুউচ্চ ভবন। ভবনের বাইরে শোভা পাচ্ছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দর্শনীয় ম্যুরাল। পৌরশহরের ব্যস্ততম রাস্তার একপাশ ঘেষে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে মুক্তিযোদ্ধাদের স্বপ্নের স্থাপনা। এই ভবন একাত্তরের চেতনা ও দেশপ্রেমের দ্যুতি ছড়াচ্ছে। কিন্তু সেই দ্যুতিতে এবার ছেদ পড়েছে; মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমপ্লেক্স প্রাঙ্গণে অল্প খোলায় জায়গায় দূরপাল্লার বাস ঘন্টার পর ঘন্টা রেখে ‘মিনি পার্কিংলটে’ পরিণত করা হয়েছে।’
এমন দৃশ্য যেন বিয়ানীবাজার উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমপ্লেক্স ভবনের প্রতিদিনকার। দীর্ঘদিন ধরে এমন দৃশ্য দেখা গেলেও সেদিকে যেন দৃষ্টি নেই স্থানীয় প্রশাসনের। আর এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তানরা।
![](https://beanibazarnews24.com/wp-content/uploads/2023/07/1st-Aide-Rezu-2.jpg)
মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমপ্লেক্স প্রাঙ্গনে গাড়ির পার্কিংলট গড়ে উঠায় ক্ষোভ প্রকাশ করে সাবেক কমাণ্ডার আতাউর রহমান খান বলেন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমাণ্ডের নির্বাচিত কমিটি না থাকায় এই ভবনটি যথাযথভাবে ব্যবহার করা যাচ্ছে না। সেই সুযোগে একটি চক্র মুক্তিযোদ্ধাদের এই সম্পত্তিকে বিনষ্ট করার পাঁয়তারা করছে।
সরেজমিনে পৌরশহরের উত্তরবাজার এলাকাকায় নির্মিত মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমপ্লেক্স প্রাঙ্গনে গিয়ে দেখা যায়, ভবনের বাম পাশের একটি মার্কেটে রয়েছে দূরপাল্লার বাস সার্ভিস এনার বাস কাউন্টার। কিন্তু কাউন্টারের সামনে খালি জায়গা পড়ে থাকলেও প্রতিদিন এনার দুটো বাস মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স প্রাঙ্গনে পার্কিং করে রাখা রয়েছে। শুধু তাই নয়, পার্ক করে রাখা গাড়িগুলোতে সময়সূচি অনুযায়ী নিয়মিতই চলে যাত্রী উঠানামার কাজও।
জানা গেছে, প্রায় ৮ শতক জমিতে প্রায় আড়াই কোটি টাকা ব্যয়ে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তর। নির্মাণের পর ২০১৭ সালের ২৪ মে পাঁচতলা নকশাভিত্তিক নবনির্মিত ভবনটির উদ্বোধন করেন সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ও স্থানীয় সাংসদ নুরুল ইসলাম নাহিদ এমপি। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনাসহ একসাথে বসার একটি স্থান হিসেবে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের উপহারস্বরুপ এই ভবন নির্মাণ করে দেয়া হয়।
বিয়ানীবাজার পৌর মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমাণ্ডের সাংগঠনিক সম্পাদক আজাদুর রহমান আজাদ বলেন, যেহেতু মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমাণ্ডের চলতি দায়িত্বে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রয়েছেন, সেহেতু আমরা বিষয়টি সমাধানে প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ কামনা করছি। তিনি বলেন, তবে আমরা চাই যে বা যারাই মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমপ্লেক্স প্রাঙ্গনকে পার্কিংলটে পরিণত করেছেন তারা যেন সাবধান হয়ে যান। তিনি অবিলম্বে গাড়িগুলো সেখান থেকে সরিয়ে নিতে গাড়ির মালিকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা আতাউর রহমান খান বলেন, নিজস্ব একটি ভবন নির্মাণে স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের দীর্ঘদিনের দাবী ছিলো। অবশেষে প্রশাসন তা বাস্তবায়ন করতে পেরেছে। এ জন্যে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের নিজস্ব এই ভবন রক্ষার জন্য আমি স্থানীয় প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
এ ব্যাপারে জানতে মুঠোফোনে কথা হয় বিয়ানীবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আশিক নূরের সাথে। তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমপ্লেক্স প্রাঙ্গনের সামনে কোন গাড়ি রাখা যাবে না। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে। গাড়ি রাখার নির্দিষ্ট জায়গা আছে সেখানেই গাড়ি রাখতে হবে।