‘প্রতিবছর কোরবানির পশুর চামড়া মুরাদগঞ্জ দারুসসুন্নাহ টাইটেল মাদ্রাসার এতিমখানায় দান করতাম। কিন্তু ঈদের দিন সকালেই মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ চামড়া সংগ্রহ করছে না জানিয়ে মাইকে প্রচারণা করেছে। পরে বাধ্য হয়ে কোরবানির গরুর চামড়া মাটিতে পুঁতে ফেলেছি।’- এই কথাগুলো বলছিলেন বিয়ানীবাজার পৌরসভার সুপাতলা গ্রামের বাসিন্দা আরমান হোসেন আমান।
আজ বুধবার বিয়ানীবাজারসহ সারাদেশে উদযাপিত হচ্ছে পবিত্র ঈদ-উল-আজহা। এদিন সকালে প্রবাসী অধ্যুষিত বিয়ানীবাজার উপজেলায় ১৫ হাজারেরও পশু কোরবানি হয়েছে। কিন্তু গেল বারের মতো এবারও কোরবানির পশুর চামড়া নিয়ে মানুষ এবারও বিপাকে। পানির দরেই বিক্রি হয়েছে পশুর চামড়া। প্রকারভেদে প্রতিটি গরুর চামড়া ২০ থেকে ৫০ টাকা ও ছাগলের চামড়া ৫ টাকায় কেনা হয়েছে। তবে বড় গরুর চামড়া সর্বোচ্চ ৪০ থেকে ৫০ টাকায় নেয়া হয়।
ঈদের দিন দুপুরের পর থেকে বিভিন্ন এলাকা থেকে চামড়া সংগ্রহ করেন মৌসুমি বিক্রেতারা। প্রায় প্রতিটি বাড়ি থেকেই গরুর চামড়া একেবারে পানির দামে বিক্রি হচ্ছে। আর খাসি বা বকরির চামড়া কিনতে তাদের মধ্যে অনাগ্রহ রয়েছে। এ ছাড়া যেখানে আগে বিভিন্ন মাদ্রাসার এতিমখানা কর্তৃপক্ষ ঈদে চামড়া সংগ্রহ করতো, সেখানে তাঁদের সংখ্যাও একেবারে হাতেগোনা। অনেক প্রতিষ্ঠান মাইকিং প্রচারণা করে চামড়া সংগ্রহ করছে না বলে ঈদের আগেই প্রচারণায় জানিয়ে দিয়েছে। চামড়ার বাজারে ধস নামায় দুস্থরা বঞ্চিত হওয়ায় আলেম সমাজ ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন।
জানা গেছে, এ বছর সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সারাদেশে লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম প্রতি বর্গফুট ৩৩ থেকে ৩৭ টাকা নির্ধারণ করেছে। সারা দেশে প্রতি বর্গফুট খাসির কাঁচা চামড়া ১৫ থেকে ১৭ টাকা এবং বকরির চামড়া ১২ থেকে ১৪ টাকা মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিয়ানীবাজারে এলাকা ভেদে ৬০ হাজার থেকে লাখ টাকার ওপরে কেনা গরুর চামড়া বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৫০ টাকায়। ৪০ হাজার থেকে ৬০ হাজার টাকার গরুর চামড়া বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ টাকায়। পানির দামের চেয়েও কম দামে বিক্রি হচ্ছে ছাগলের চামড়া। ১০ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকার ছাগলের চামড়া বিক্রি হচ্ছে ৫ থেকে ১০ টাকায়। সরকার যে দর নির্ধারণ করে দিয়েছে, সে দরে চামড়া বিক্রি হতে দেখা যায়নি।
খুচরো পর্যায়ের চামড়া ব্যবসায়ীরা বলছেন, পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে কম দামে চামড়া বিক্রি করতে হয়। সেকারণে পানির দরেই প্রতি পিস চামড়া সংগ্রহ করছেন। ইসলাম উদ্দিন ও আব্দুস সাত্তার নামের এক চামড়া মৌসুমি বিক্রেতা বলেন, কোরবানির পশু মালিকদের কাছ থেকে বড় সাইজের গরুর চামড়া ৪০ টাকা আর ছোট সাইজের গরুর চামড়া ২০ টাকা দরে ক্রয় করেছি। এখন পাইকারি ব্যবসায়ীরা এখন আমাদের কাছ থেকে গরুর আকারভেদে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা দরে কিনতে চাইছে। তারা বলেন, গত বছরও চামড়া ব্যবসায় আমরা কয়েক হাজার টাকা লস খেয়েছি। এবার লস খেলে উপায় নাই। চামড়ার দাম একেবারেই নাই এখন, গরীবের যেন মরার পথ!
চামড়া ব্যবসায়ীদের দাবি, গত কয়েক বছরে ব্যবসায়ীরা ট্যানারি মালিকদের কাছে যে চামড়া বিক্রি করেছেন, তা বাবদ প্রায় ৫০ কোটি টাকা বকেয়া পড়ে আছে। ট্যানারি মালিকরা ঈদের আগে কিছু টাকা পরিশোধ করেছেন। কিন্তু বিপুল অঙ্কের টাকা তাদের কাছে এখনো বকেয়া রয়ে গেছে।
সিলেটের শাহজালাল চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সহ সভাপতি শাহিন আহমদ বলেন, কয়েক বছর ধরেই চামড়া ব্যবসায়ীদের দুর্দিন চলছে। তিন বছর ধরে আড়তদার বকেয়া টাকা দিচ্ছেন না। এবার চামড়ার দাম খুবই কম। চামড়া কিনে লবণজাত করে বিক্রি করে অনেক ক্ষেত্রে লোকসান হচ্ছে। সিলেটের অন্তত ৩০০ চামড়া ব্যবসায়ীর মধ্যে বেশির ভাগই এবার ক্ষতির আশঙ্কায় চামড়া সংগ্রহ না করার কথা ভাবছেন।