বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) পরিস্থিতিতে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে সীমিত যাত্রী নিয়ে চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয় গণপরিবহনগুলোকে। প্রতি দুইটি আসনে একটি আসন ফাঁকা থাকার শর্তে গণপরিবহনের ভাড়া বৃদ্ধি করা হয় ৬০ শতাংশ পর্যন্ত। তবে বাড়তি ভাড়া বহাল থাকলেও স্বাস্থ্যবিধি না মেনেই বিয়ানীবাজারে চলাচল করছে ছোটবড় সকল গণপরিবহন।

গণপরিবহনগুলো স্ট্যান্ড ছেড়ে যাওয়ার পর পরই নিয়মিত বিরতিতে চলে যাত্রী ওঠানামার কাজ। আসনে একজনের পরিবর্তে দুইজন বসানোর পাশাপাশি ইঞ্জিন কাভারেও বসিয়ে যাত্রী বহন করা হচ্ছে। স্বাস্থ্যবিধির দোহাই দিয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করলেও কার্যত তা মানছেনা পরিবহণ সংশ্লিষ্টরা।

পরিবহন মালিকরা বলছেন, যানবাহনে স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে তারা প্রতিনিয়ত চালক-শ্রমিক ও যাত্রীদের সচেতন করার কার্যক্রম চলমান রেখেছেন। আর চালক-শ্রমিকরা বলছেন, তারা সরকারি নির্দেশনা মেনে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়ে যেমন নজর রাখছেন, তেমন যাত্রীদের প্রতি মাস্ক ব্যবহারেরও পরামর্শ দিচ্ছেন। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই যাত্রীরা সচেতন নন।

অপরদিকে যাত্রিদের অভিযোগ, করোনাকালে ভাড়তি ভাড়া তাদের কাছ থেকে আদায় করা হলেও শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়টি নিয়ে এখন আর কারো মাথাব্যাথা নেই। বরং লাঞ্ছিত হওয়ার শঙ্কায় গণপরিবহনগুলোতে এ নিয়ে প্রতিবাদ করতে রাজি নন তারা।

রোববার (১৬ আগস্ট) বিয়ানীবাজার-বড়লেখা-সিলেটসহ বিভিন্ন রুটে চলাচলরত গণপরিবহনের স্ট্যান্ডগুলোতে গিয়ে দেখা গেছে, সবধরনের পরিবহণে যাত্রী বোঝাই করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কোন ক্ষেত্রে সচেতন যাত্রী এসবের প্রতিবাদ করলে তাকে পরিবহণ শ্রমিকদের হাতে নিগৃহিত হতে হয়। যানবাহনে যাত্রীদের নিজেদের যেমন স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো বালাই নেই, তেমনি স্টেশনে থাকা শ্রমিক-চালক কেউই এ বিষয়ে নজর দিচ্ছেন না। এমনকি এসব ক্ষেত্রে নেই কোনো স্বাস্থ্য কিংবা প্রশাসনিক দফতরের তৎপরতাও। যানবাহনের পাশাপাশি দুটি আসন যেখানে একা ব্যবহার করার কথা সেখানে বাড়তি ভাড়া দিয়েও দুটি সিটে দুইজন বসেই যাত্রা করছেন।

একইচিত্র দেখা গেছে পৌরশহরের কলেজ রোড-চন্দরপুর-বিবিরাই রুট, মোকাম রোড-সারপার বাজার রুট,  উত্তরবাজার-কসবা ত্রিমুখী রুট, উত্তরবাজার-চারখাই-দুবাগ রুট ও দক্ষিণবাজার-বারইগ্রাম-দাসেরবাজার-শাহবাজপুর-বড়লেখা রুটে চলাচলরত সিএনজি অটোরিকশাগুলোতেও। এসব অটোরিকশায় নির্দেশনা কিংবা স্বাস্থ্যবিধি মানার কোন দৃশ্যই চোখে পড়েনি। তার ওপর সঙ্গী অতিরিক্ত যাত্রীর পরিবহনের সাথে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়টিও।

পৌরশহরের উত্তরবাজারস্থ বাস টার্মিনালের চালক আব্দুল আলীম বলেন, যাত্রীদের মাস্ক ব্যবহারের জন্য বলা হলেও কেউ পরেন, কেউ পরেন না। চাপ দিলে কেউ বলেন ব্যাগের মধ্যে, নয়তো সাথে আনতে ভুলে গেছেন। আবার কেউ কানে শোনেন না এমন ভাবও করেন। বাসের এক হেল্পার জানান, এমনও যাত্রী ওঠেন যাদের মাস্ক পরার কথা বললে তেড়ে আসেন।

বাস মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ জানান, ভাড়া যেহেতু কমানোর কোনো নির্দেশনা এখনো পাননি, তাই বাড়তি ভাড়ায় নিয়ম মেনে যাত্রী পরিবহণ করা হচ্ছে বাসগুলোতে। তবে যাত্রীদের মধ্যে একই পরিবারের সদস্য হলে তারা আলাদা আসনে বসতে নারাজ থাকেন।

যদিও ভিন্ন কথা জানিয়েছেন বিয়ানীবাজার-সিলেট নিয়মিত যাত্রী জামাল হাওলাদার। তিনি জানান, টার্মিনাল থেকে বাসগুলো অনেকটা সাজিয়ে-গুছিয়ে সরকারি নির্দেশনা মেনে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়। কিন্তু মাঝপথ থেকে যাত্রী তুলতে তুলতে বাসের ভেতরে শারীরিক দূরত্ব বজায় থাকে না। অপর যাত্রী জুয়েল জানান, তিনি বড়লেখা থেকে বিয়ানীবাজার আসার সময় বাস ফাঁকা থাকলেও পথে যাত্রী তুলতে তুলতে বাসটি যাত্রীতে পরিপূর্ণ হয়ে যায়। মাঝপথে কোথাও কোনো বাধা না থাকায় এসব যাত্রী নিয়েই সিলেট পৌছে বাসটি।

বিয়ানীবাজার কলেজ রোড-চন্দরপুর সড়কের নিয়মিত যাত্রী জয়নাল আহমেদ জানান, গণপরিবহন চালু করার ঘোষণা আসার পর প্রথম দিকে সিএনজি অটরিকশাগুলো ২/৩জন যাত্রী পরিবহন করলেও এখন ৫জন কখনোবা আবার ৬/৭জন যাত্রীও পরিবহন করছে। তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ভাড়তি নেয়ার ব্যাপারটা চালকরা এখনো বলবৎ রেখেছেন। এসব বিষয় নিয়ে তাদের সাথে অনেক সময় তর্ক-বিতর্ক করতে হয়, এতে অনেক চালকই যাত্রীদের ওপর তেড়ে আসেন।

বিয়ানীবাজারের অটোরিকশা সিএনজি চালক সমিতির নেতৃবৃন্দরা জানান, বাড়তি ভাড়া লোকাল গাড়ির জন্য কোনো সুবিধা বয়ে আনেনি। করোনার জন্য এমনিতেই বাসের যাত্রী কমে গেছে। উপজেলার অভ্যন্তরীণ রুটগুলোতে বাসের চেয়ে থ্রি-হুইলারেই যাত্রীদের চাপ বেশি।

ভিক্ষা করে সংসার চালান প্রতিবন্ধী নিজাম