যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশীদের আঞ্চলিক সংগঠনগুলোর মধ্যে অন্যতম বৃহৎ সংগঠন বাংলাদেশ বিয়ানীবাজার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সমিতি ইউএসএ ইনক এর আসন্ন নির্বাচন ঘিরে বাংলাদেশী কমিউনিটি এখন সরগরম।
নির্বাচনের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্যানেল মিসবাহ-অপু পরিষদ গত ৩০ আগস্ট ১৫১ সদস্য বিশিষ্ট নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করেছে। ওজন পার্কের আল-মদিনা পার্টি হলে অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিপুল সংখ্যক বিয়ানীবাজারবাসীর উপস্থিতিতে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠিত হয়। এতে আহ্বায়ক হিসেবে সমিতির সাবেক সভাপতি ও উপদেষ্টা মোস্তফা কামালকে এবং সদস্য সচিব হিসেবে সমিতির সাবেক কর্মকর্তা আমিনুল হোসেনকে মনোনীত করা হয়।

হলভর্তি মিসবাহ-অপু পরিষদের সমর্থক ও সচেতন বিয়ানীবাজারবাসী মুহুর্মুহু করতালিতে আহবায়ক কমিটিকে স্বাগত জানান। এসময় তারা আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, এই আহবায়ক কমিটির দীর্ঘদিনের নির্বাচন পরিচালনার দক্ষতা ও কৌশল কাজে লাগিয়ে বিয়ানীবাজারবাসীর মন জয় করে আগামী ১০ অক্টোবর মিসবাহ-অপু পরিষদকে বিজয়ী করে নিয়ে আসবে।
আহবায়ক কমিটির মনোনীত হওয়ার পরে নবনিযুক্ত সদস্য সচিব আমিনুল হোসেনের পরিচালনায় এবং আহবায়ক মোস্তফা কামালের সভাপতিত্বে এক নির্বাচনী সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রবীণ বাসিন্দা কমিউনিটির বিশিষ্ট মুরব্বি আজির উদ্দিন।
বিশেষ অতিথি হিসেবে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জলিল, আফতাব আলী, আব্দুল জলিল (চেয়ারম্যান), বীর মুক্তিযোদ্ধা হাজী জয়াদ আলী, হাজী আব্দুল বারী, ফয়জুল আলম মাস্টার, ময়নুল ইসলাম, হাজী মোস্তফা উদ্দিন, হাজী শামছ উদ্দিন, বীর মুক্তিযোদ্ধা আহমদ মস্তফা বাবুল, আব্দুল কাদির, ফখর উদ্দিন, হাজী আজমল হোসেন, আতিকুল হক বেলাল, ফখরুল ইসলাম বেলাল, নাজিম উদ্দিন, রিয়াজ উদ্দিন, হাজী মুক্তাদির হোসেন, হাজী আকদ্দছ আলী, গাজী আজমল হোসেন, সাইফুল ইসলাম, গিয়াস উদ্দিন মঞ্জু, আব্দুল মুকিত চৌধুরী, কমর উদ্দিন, আব্দুল জব্বার প্রমূখ।
পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত এর মাধ্যমে শুরু হয় সভার কার্যক্রম। বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত পরিবেশন করেন বিশিষ্ট কণ্ঠ শিল্পী আব্দুল আলিম এবং আমেরিকার জাতীয় সংগীতও পরিবেশিত হয়। এ সময় দাঁড়িয়ে সবাই বাংলাদেশ এবং আমেরিকার জাতীয় সংগীতের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
এরপর শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন তরুণ সংগঠক বিশিষ্ট কমিউনিটি অ্যাক্টিভিস্ট শামীম আহমদ। এছাড়া অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন হেলিম উদ্দিন, সফর উদ্দিন লোদী, শহিদুল ইসলাম, ফজলে রাব্বী সেবুল, আনোয়ার হোসেন, মোহাম্মদ আলিম, কমর উদ্দিন, আবুল ফজল লিটন, কমর উদ্দিন, কাউসার মারুফ, আল আমিন, হাফছা হেলান, শহিদুল আহমদ সপুসহ আরো অনেকে।
সভায় আগত অতিথিরা তাদের বক্তব্য যোগ্যতার বিবেচনায় এবং তরুণ নেতৃত্বকে উৎসাহিত করতে বিয়ানীবাজারবাসীর আগামী দিনের আশা আকাঙ্ক্ষা পূরণে তরুণ এবং অভিজ্ঞ মিসবাহ-অপু পরিষদকে নির্বাচিত করতে বিয়ানীবাজারবাসীর প্রতি আহ্বান জানান। এ সময় তারা বলেন, অনেকেই ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছেন তাদের ব্যাপারে বিয়ানীবাজারবাসিকে সতর্ক থাকতে হবে। বক্তারা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী বিয়ানীবাজারবাসীর স্বপ্নের বিয়ানীবাজার ভবন আজ ঋণমুক্ত। তাই ভবনের রক্ষণাবেক্ষণসহ অন্য নানা কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে একটি দক্ষ এবং পরীক্ষিত নেতৃত্বের হাতে সমিতিকে তুলে দেয়া সকল বিয়ানীবাজারবাসীর পবিত্র দায়িত্ব। যেকোনো সময়ের চেয়ে বিয়ানীবাজার সমিতি এখন অনেক বেশি স্বয়ংসম্পূর্ণ। তাই সামনের দিনে সমিতিকে আরো গতিশীল করতে মিসবাহ-অপু পরিষদের বিকল্প নেই বলে বক্তারা তাদের বক্তব্য উল্লেখ করেন।
সমিতির সাবেক কর্মকর্তা রিজু মোহাম্মদ মিসবাহ-অপু পরিষদের ১৫ দফা স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি নির্বাচনী অঙ্গীকারের খসড়া তুলে ধরেন। নির্বাচনী অঙ্গীকারে প্রাধান্য পায় যুক্তরাষ্ট্রে বেড়ে ওঠা বিয়ানীবাজারে তরুণ প্রজন্ম নিয়ে মিসবাহ-অপু পরিষদের পরিকল্পনা। বয়োবৃদ্ধদের নিয়ে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের প্রতিশ্রুতি। এছাড়া ফেলে আসা জন্মভূমির মেধাবী শিক্ষার্থী এবং তরুণদের নিয়ে কল্যাণমূখী অনেক পরিকল্পনা রয়েছে।
অনুষ্ঠানে মিসবাহ-অপু পরিষদের সভাপতি পদপ্রার্থী মিসবাহ আহমেদ তাকে আবারো বিয়ানীবাজারবাসীর সেবা করার সুযোগ দেয়ার জন্য তার বক্তব্যে সকলের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, আমাকে অনেকবার সুযোগ দিয়েছেন কৃতজ্ঞতার বন্ধনে আবদ্ধ করেছেন আমি সেই ঋণ এখনো শোধ করতে পারিনি। আবারো আপনারা আমার ওপরে আস্থা এবং বিশ্বাস রেখেছেন তার জন্য আমি এবং আমার পরিবারের পক্ষ থেকে আমার অন্তরের অন্তস্থল থেকে আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা এবং ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আপনাদের সকলের সহযোগিতায় আপনাদের চাওয়া অনুযায়ী বিয়ানীবাজার সমিতি আগামী দিনে দেশ এবং প্রবাসের বিয়ানীবাজারবাসীর কল্যাণে আরো বেশি ভূমিকা রাখতে পারে- সেই প্রচেষ্টা আমি নির্বাচিত হলে করবো ইনশাআল্লাহ। নানা কারণে অনেকটা দেরিতে নির্বাচনী মাঠে আমি নেমেছি তবে আমি বিশ্বাস করি বিগত দিনের মতো আপনাদের দোয়া এবং ভালোবাসা পেলে যোগ্যতার বিবেচনায় আগামী ১০ অক্টোবর মিসবাহ-অপু পরিষদ সফলকাম হবে ইনশাআল্লাহ।
সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী রেজাউল আলম অপু তার বক্তব্যে বলেন, আজকের এই সভায় নিজেকে অনেক সৌভাগ্যবান মনে হচ্ছে। এতো এতো গুণী মানুষদের সামনে আমি ক্ষুদ্র একজন মানুষ বক্তব্য রাখার সুযোগ পেয়েছি। তারচেয়ে বড় কথা আপনারা আমাকে তিন দশকেরও পুরনো স্বনামধন্য একটি সংগঠনের আগামী নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করেছেন। আমি এর কোনো কিছুরই যোগ্য নই- তবে আপনাদের আস্থা এবং বিশ্বাসের প্রতি অবিচল থেকে সব সময় আমার সবটুকু দিয়ে বিয়ানীবাজার সমিতির কল্যাণে কাজ করে যাব ইনশাআল্লাহ। আমি বিশ্বাস করি আপনাদের সকলের সহযোগিতা পেলে এবং বিয়ানীবাজারবাসীর দোয়া ও ভালোবাসা পেলে যোগ্যতার বিবেচনায় তরুণ এই পরিষদকে ১০ অক্টোবর বিয়ানীবাজারবাসী নির্বাচিত করে তাদের সেবা করার সুযোগ দেবেন।
প্রধান অতিথি আজির উদ্দিন তার বক্তব্যে পরীক্ষিত এবং তরুণ নেতৃত্বকে বিয়ানীবাজার সমিতির আগামী নির্বাচনে নির্বাচিত করতে সকলের প্রতি অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, মিসবাহ আহমেদ একজন পরীক্ষিত কমিউনিটি সংগঠক। এই সমিতির প্রায় জন্মলগ্ন থেকে সে আমাদের সেবা করে যাচ্ছে। বিগত দিনের কর্মকান্ড মূল্যায়ন করলে আমি বিশ্বাস করি মিসবাহ অতি যোগ্যতম সভাপতি পদপ্রার্থী। রেজাউল আলাম অপু বয়সে তরুণ, তবে অত্যন্ত দক্ষ একজন সংগঠক। তাই আমি বিশ্বাস করি দুজন মিলে তাদের পরিষদ নিয়ে আমাদের আগামী দিনের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণে নিরলসভাবে কাজ করবে।
সভা শেষে দেশ ও প্রবাসের মৃত্যুবরণকারী সকলের রুহের মাগফেরাত কামনায় বিশেষ দোয়া মোনাজাত করা হয়। এ সময় সবাই শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন বিয়ানীবাজার সমিতির অন্যতম স্বপ্নদ্রষ্টা সাবেক সভাপতি সদ্যপ্রয়াত কামাল আহমেদকে। এছাড়া সদ্যপ্রয়াত সমিতির সাবেক কর্মকর্তা একলুমুজ্জামান নুনুসহ প্রয়াত সকল কর্মকর্তাদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করা হয় এবং একই সাথে অসুস্থ সমিতির সাবেক সভাপতি আজিজুর রহমান সাবু ও বদরুল খানের আশু রোগমুক্তি কামনা করা হয়।
সভার সভাপতি মিসবাহ-অপু পরিষদের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক মোস্তফা কামাল আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা এবং সমাপনী বক্তব্যের মধ্য দিয়ে সভার সমাপ্তি হয়।