বিয়ানীবাজারের ভূমিপুত্র শাকুর মজিদ। তিনি স্থপতি, নাট্যকার, তথ্যচিত্র নির্মাতা ও চিত্রগ্রাহক। ভ্রমণকাহিনী ও জীবনী সাহিত্যে অবদানের জন্য তিনি ২০১৮ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন। আজ তার ৫৬ তম জন্মবার্ষিকী।
১৯৬৫ সালের ২২ই নভেম্বর তৎকালীন সিলেট জেলার বিয়ানীবাজার উপজেলার মাথিউরা গ্রামে শাকুর মজিদ জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা আবদুল মজিদ ও মাতা ফরিদা খাতুন। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে তিনি সকলের বড়। তার ২০ বছর বয়সে তার পিতা মারা যান।
শাকুর মাথিউরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অর্জন করেন। পরে তিনি ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজ থেকে ১৯৮২ সালে মাধ্যমিক ও ১৯৮৪ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন। ১৯৯৩ সালে তিনি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থাপত্যে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। ছাত্রজীবনে তিনি কয়েকটি সংবাদপত্রে সাংবাদিক হিসেবে কাজ করেছেন।
মাত্র ২০ বছর বয়সে সিলেট বেতারে যে যাহা করোরে বান্দা আপনার লাগিয়া নাটক দিয়ে নাট্যকার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। লন্ডনী কইন্যা টেলিভিশন নাটক দিয়ে তিনি প্রশংসিত ও আলোচিত হয়েছেন। এই নাটকের সাফল্যের পর তিনি টেলিভিশন নাটকে মনোযোগ দেন। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, “টেলিভিশনের দর্শক সংখ্যা।” টেলিভিশন নাটকের পাশাপাশি তিনি মঞ্চনাটকও লিখেছেন। ১৯৯২ সালে তিনি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগ ফটোগ্রাফিক সোসাইটির সভাপতি নির্বাচিত হন।
১৯৯৩ সালে তিনি আরও দুজন স্থপতিকে নিয়ে ট্রায়াঙ্গেল কনসাল্ট্যান্ট নামে একটি ফার্ম প্রতিষ্ঠা করেন। ফার্মটি এখনো বিদ্যমান রয়েছে। এছাড়া তিনি ট্রাই-স্পেস লিমিটেড, ব্রিটানিয়া প্রপার্টিজ লিমিটেড, ভিউ ফাইন্ডারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ২০০৪ সাল থেকে আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন।
শাকুর মজিদ ডঃ হোসনে আরা জলির সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন ১৯৯৩ সালে। তাদের দুই পুত্র, ইশমাম ইনতিসার মজিদ ও ইবন ইবতেশাম মজিদ। তারা ঢাকায় বসবাস করেন।
শাকুর মজিদ তার অবদানের জন্য বিভিন্ন পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন-
১৯৯০ সালে ইউনিসেফ আয়োজিত মেয়ে শিশু বিষয়ক আলোকচিত্র প্রতিযোগিতায় ও খেলাঘর আয়োজিত বাংলাদেশের শিশু বিষয়ক আলোকচিত্র পুরস্কার। ১৯৯১ সালে বাংলাদেশ ফটোগ্রাফিক সোসাইটির আলোকচিত্র পুরস্কার ও নিউইয়র্কের লেন্সভিউ ফটোগ্রাফিক সোসাইটির পুরস্কার। ২০০৬ সালে “পৃথিবীর পথে পথে”-এর জন্য কলকাতার রেনেসাঁ বাংলা পদক পান তিনি।
এরপর ২০১৬ সালে ‘ফেরাউনের গ্রাম’ শীর্ষক ভ্রমণকাহিনীর জন্য আইএফআইসি ব্যাংক সাহিত্য পুরস্কার পান। ২০১৭ সালে ভ্রমন সাহিত্যে সমরেশ বসু সাহিত্য স্মৃতি পদক ২০১৬ পেয়েছন তিনি। একই বছর সিলেট শিল্পকলা একাডেমি পদক (চলচ্চিত্র) ২০১৬ পেয়েছেন তিনি। ২০১৭: ফেরাউনের গ্রাম বইয়ের জন্য “আইএফআইসি ব্যাংক সাহিত্য পুরস্কার ২০১৬” পান তিনি। ২০১৮ ভ্রমণকাহিনী ও জীবনী সাহিত্যের জন্য “বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০১৭”।