প্রসূতি বিভাগে ঈর্ষণীয় সাফল্যের কারণে সিলেট বিভাগের সেরা উপজেলা হাসপাতালের স্বীকৃতি পাচ্ছে বিয়ানীবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমেপ্লেক্স। টানা ৮বারের মতো বিভাগ সেরা হওয়া ৫০ শয্যার এ হাসপাতাল নানা সমস্যায় জর্জরিত রয়েছে। লোকবল সংসকট, ঔষধপত্রের অপ্রতুলতা, পরীক্ষণ যন্ত্র বিকল থাকায় সেবা গ্রহিতারা প্রতিনিয়ত বিড়ম্বনায় পড়ছেন। হাসপাতালের দায়িত্বশীলদের উদ্যোগে প্রসূতিদের সহজ সেবা দানের জন্য স্থাপন করা হেল্পডেস্কটিও অকার্যকর রয়েছে হেল্পারের অভাবে। হাসপাতালের দায়িত্বশীলরা জানান, পর্যাপ্ত লোকবল না থাকায় হেল্পডেক্স চালু করা যাচ্ছে না।

জানা যায়, বিয়ানীবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ২০০৭ সালে বিভাগ সেরা হয়েছিল। নিরাপদ জন্মদানের ক্ষেত্রে অভাবনীয় সাফল্যের কারণে টানা ৮বারের মতো সেরার হাসপাতালের স্বীকৃতি অর্জন করে। গত ১৯ অক্টোবর স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে বিভাগ সেরার স্মারক গ্রহণ করেন বিয়ানীবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স টিএইচও। প্রসূতি সেবা প্রদানের জন্য জাতীয়ভাবে সেরা হওয়ায় এ হাসপাতালের দায়িত্বশীলারা গর্ভবর্তী ও প্রসূতিদের সেবাদান আরও সহজ করতে হাসপাতালের প্রবেশ মূখে হেল্পডেস্ক স্থাপন করেন। এ হেল্পডেস্কের মাধ্যমের প্রসূতিদের দ্রুত সেবা দেয়া এবং তার সাথে ডাটাবেজ সংরক্ষণ করে প্রসূতিদের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ স্থাপন হওয়ার লক্ষ্য ছিল। কিন্তু লোকবল সংকটের কারণে হেল্পডেস্কটি অকার্যকর পড়ে আছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতাল ভবনের প্রবেশ মূখের বামপাশে শূন্য হেল্পডেস্কটি পড়ে আছে। বর্হিঃবিভাগের সাধারণ রোগীদের সাথে জটলা পাকিয়ে কিংবা সারিবদ্ধভাবে দাড়িয়ে গর্ভবর্তী ও প্রসূতি মায়েরা সেবা নিচ্ছেন। লাইনের দাড়িয়ে টিকেট কাটা ও ঔষধ নিতে গিয়ে তাদের শারিরীক সমস্যাও পড়তে হচ্ছে। অনেক সময় পা ফুলে যায়, শরীরে ব্যথা করে। শরীর দুর্বল থাকায় বেশীক্ষণ দাড়িয়ে থাকতে না পেরে মেঝেতে বসে পড়েন মোল্লাপুর ইউনিয়নের লাসাইতলা এলাকার মরিয়ম বেগম। ছয়মাসের অন্তঃসত্তা মরিয়ম এ নিয়ে দুইবার হাসপাতাল এসেছেন। তিনি বলেন, এই শরীর নিয়ে এসব জটলায় দাড়িয়ে থাকতে পারি না। পা ফুলে যায়, মাথায় কেমন করে।

বিয়ানীবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আরএমও ডা. মাছুম আহমদ বলেন, প্রসূতিদের সাধারণ রোগী থেকে আলাদা করতে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (টিএইচও) ডা. মোয়াজ্জেল আলী খান হেল্পডেস্ক স্থাপনের উদ্যোগ নেন। এটি কার্যকর হলে গর্ভবর্তী ও প্রসূতি মায়েদের আরও দ্রুত সেবা প্রদান করা যেত- এমনকি তাদের শারীরিক পরীক্ষা-নিরিক্ষার ডাটাবেজ সংরক্ষণ করার পরিকল্পনা থেকে এ হেল্পডেস্ক স্থাপন করা হয়। স্বাভাবিক অবস্থায় রুটিন মেনে চারবার চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়ার বিষয়টি ডাটাবেজ থেকে স্বয়ংক্রীয়ভাবে গর্ভবর্তী মায়ের মোবাইল নম্বরে প্রেরণ করা, নির্দিষ্ট দিনে হাসপাতালে এসে সেবা নেয়ার সময় জানিয়ে দেয়ার লক্ষ্য ছিল। এটি কার্যকর হলে গর্ভবর্তী মায়েরা এক সাথে সবাই না এসে যার যার সময় দেখে হাসপাতালে আসতে পারতেন। তিনি জানান, বর্তমানে দায়িত্বশীলরা রেজিস্টার দেখে মোবাইল ফোনে গর্ভবতী ও প্রসূতিদের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করা হচ্ছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (টিএইচও) ডা. মোয়াজ্জেম আলী খান বলেন, হেল্পডেস্কটি মূলত প্রসূতিদের সহজ সেবা দানের জন্য স্থাপন করা হয়। কিন্তু লোকবল সংকটের কারণে হেল্পডেস্কে লোক বসাতে পারছি না। আমরা এ নিয়ে স্থানীয় জন প্রতিনিধি, রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠনের দায়িত্বশীলদের সাথে আলোচনা করার চিন্তা করছি। সরকারের পাশাপাশি হাসপাতালের সেবাদানে সবাইকে সম্পৃক্ত করতে পারলে এসব সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে এবং আমরা আরও ভাল সেবা দিতে পারবো। তিনি বলেন, লোকবল সংকটের বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।