গ্লোবাল এডুকেশন নেটওয়ার্কিংয়ে অন্যতম নাম শামসুল ইসলাম সাগর। প্ররিশ্রমী, কর্মদক্ষ, দূরদর্শী ও বিচক্ষণতার সাথে সেবাদানকারী হিসেবে তার খ্যাতি এরইমধ্যে এই সেক্টরের সর্বত্র ছড়িয়ে আছে। বর্তমানে বিএসবি গ্লোবাল নেটওয়ার্ক-এ এডমিনেস্ট্রেশন ও মার্কেটিং ডাইরেক্টর হিসেবে কাজ করছেন। শামসুল ইসলাম সাগর এসএসসি ও এইচ এসসিতে বোর্ড স্ট্যান্ড করা মেধাবী ছাত্র। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে সমাজ কল্যাণ ও গভেষণা ইনস্টিটিউট থেকে সাফল্যের সঙ্গে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন। এডুকেশন গ্লোবাল নেটওয়ার্কিংয়ে দীর্ঘ ১৬ বছরের অভিজ্ঞতার রয়েছে তার। এ দীর্ঘ সময়ে বহি:বিশ্বে গমনেচ্ছুক শিক্ষার্থীদের পাশে থেকে তাদের যথাযথ প্রক্রিয়ায় সুনামের সাথে সাহায্য করে আসছেন তিনি। এডুকেশন গ্লোবাল নেটওয়ার্কিংয়ের অন্যতম এ পাইওনিয়ারের সাথে আমাদের বিশেষ প্রতিনিধি কথা বলছেন।

প্রশ্ন: গ্লোবাল এডুকেশন নেটওয়ার্কিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থান কেমন?
শামসুল ইসলাম সাগর: বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর বহু শিক্ষার্থী বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণে গমন করে থাকে। দেশের শিক্ষার্থী ও অভিবাবকদের মধ্যে বাইরে লেখাপড়া শেষ করে ভালো কিছু করার মনোভাব উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়া বাইরের দেশ থেকে বহু সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রী বাংলাদেশে পড়াশোনা করার জন্য আসছে। সেই হিসেবে উন্নয়নশীল অন্যান্য দেশ থেকে বাংলাদেশের অবস্থা অনেক ভালো।

প্রশ্ন: আপনি কি কি পদ্মতিতে শিক্ষার্থীদের সাহায্য করে থাকেন?

শামসুল ইসলাম সাগর: বিদেশে পড়াশোনা করতে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের জন্য আমাদের বিশ্ব বিস্তৃত নেটওয়ার্ক বিদ্যমান আছে। শিক্ষার্থীরা যেখানে যেতে চায় সেখানেই আমরা তাদের সাহায্য করার চেষ্টা করে থাকি। এরপরও আমরা তিনটি বিষয় খেয়াল রেখে স্টুডেন্টদেরকে পরামর্শ দিয়ে থাকি। তা হলো স্টুডেন্টের একাডেমিক বা শিক্ষাগত রেজাল্ট, আর্থিক সামর্থ ও স্পন্সরশীপ। এসব দিক বিবেচনা করে আমরা যে দেশ বা যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সে ভর্তির উপযুক্ত সেখানে সহায়তা করে থাকি।

[image link=”http://beanibazarnews24.com/wp-content/uploads/2018/04/7-768×487.jpg” img=”http://beanibazarnews24.com/wp-content/uploads/2018/04/7-768×487.jpg” caption=”অষ্ট্রেলিয়ার Curtin University’র কমকর্তাদের সাথে একটি সফল প্রোগ্রাম শেষে”]

এরপর আসে ভিসা প্রসেস। সঠিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আমরা এই প্রসেস সুসম্পন্ন করে থাকি। শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে ভিসা পরবর্তী কার্যক্রমের সাথেও আমাদের থাকতে হয়। তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের টিউশন ফি, আবাসন সুবিধাদি প্রদান, বিমানের টিকেট, উক্ত দেশে গমনের পর এয়ারপোর্ট থেকে তাদের গন্তব্যে পৌঁছানো এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ে তার উপস্থিতি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের আমরা সহায়তা করে থাকি।

কোন কারণে কারো ভিসা রিফিউজ হলে তাকে পুনর্বার আবেদন করার ব্যবস্থা করে থাকি। এসব ক্ষেত্রে কোন কারনে রিফিউজ হলে সেখানকার বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রেরিত অর্থ শিক্ষার্থীর একাউন্টে রিফান্ড আসার আগ পর্যন্ত আমরা তাদের সাহায্য প্রদান করে থাকি।

প্রশ্ন: বিশ্বের কয়টি দেশে আপনাদের নেটওয়ার্কিং বিস্তৃত আছে?

শামসুল ইসলাম সাগর: অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ইউকে, কানাডা, আমেরিকা, জার্মানি, ফ্রান্স, অষ্ট্রিয়া, মালয়েশিয়া, চায়না, পর্তুগাল, সাইপ্রাস, চেক রিপাবলিক, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়াসহ উন্নত বিশ্বের প্রায় ৩০টি দেশের চার শতাধিক বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে আমাদের সরাসরি নেটওয়ার্ক আছে। এছাড়াও বিশ্বের অনেক দেশের সাথে আমরা শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনে কাজ করে থাকি।

[image link=”http://beanibazarnews24.com/wp-content/uploads/2018/04/9.jpg” img=”http://beanibazarnews24.com/wp-content/uploads/2018/04/9.jpg” caption=”অস্কলারশিপ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব মিশিগানের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের সাথে সাক্ষাত”]

প্রশ্ন: কমবয়সী শিক্ষার্থীদের জন্য আপনারা কিভাবে সহায়তা করে থাকেন?

শামসুল ইসলাম সাগর: কমবয়সী বলতে আমরা টিনেজার স্টুডেন্টদের বলে থাকি। ‘এ’ লেভেল সম্পন্ন করার আগ পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের সাধারণত শারীরিক ও মানসিকভাবে পূর্ণতা প্রাপ্তির বয়স থাকে। তারপরও তাদের বাবা-মা কিংবা আত্মীয়স্বজন ঐসব দেশে থাকার কারণে তাদের ভিসা এপ্লিকেশন নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। এক্ষেত্রে পেরেন্টস ও কাস্টডিয়ানশীপ পরিপূর্ণ হলেই আমরা সংশ্লিষ্ট দেশের স্কুল কলেজগুলোতে তাদের ভর্তির জন্য আবেদন করি। এসব ক্ষেত্রে আমাদের সফলতার হারও সন্তোষজনক।

প্রশ্ন: বিদেশে স্কলারশীপের ব্যাপারে অনেক শিক্ষার্থী জানতে চান।

শামসুল ইসলাম সাগর: স্টুডেন্ট স্কলারশীপ বিষয়টা যে দেশ থেকেই আহবান করা হয় তার সাথে স্টুডেন্টের স্কিল বিষয়টা জড়িত থাকে। স্টুডেন্টের ভাষাগত যোগ্যতা ও লিডারশীপ স্কিল স্কলারশীপ পাওয়ার ক্ষেত্রে সহায়তা করে। এছাড়া মেধা যাচাইয়ের বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানদন্ডের পরীক্ষায় ভালো করলেও এক্ষেত্রে সহায়তা পাওয়া যায়। স্টুডেন্ট স্কলারশীপ দুই ধরণের হতে পারে। এক, গভমেন্ট স্কলারশীপ। দুই, বিশ্ববিদ্যালয় স্কলারশীপ। সবক্ষেত্রেই শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় ভালো করার পাশাপাশি বাড়তি যোগ্যাতা ও দক্ষতাগুলো স্কলারশীপ পেতে সহযোগিতা করে থাকে। তাই আমার পরামর্শ থাকবে, শুধু বই পোকা না হয়ে শিক্ষার্থীদের আনুসাঙ্গিক বিষয়েও দক্ষতা অর্জন করা প্রয়োজন।

[image link=”http://beanibazarnews24.com/wp-content/uploads/2018/04/10.jpg” img=”http://beanibazarnews24.com/wp-content/uploads/2018/04/10.jpg” caption=”রাশিয়ান ইউনিভার্সিটির কর্মকর্তার সাথে বৈঠক”]

প্রশ্ন: বিদেশে পড়তে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের সহায়তা করার দায় সরকারের কতটুকু ?

শামসুল ইসলাম সাগর: দেশের বাইরে ও দেশে ভেতরে সরকার জনগণের একমাত্র মুখপাত্র। ভালো দেশগুলোতে পড়তে যাওয়া শিক্ষার্থীদের অনেক সময় সংশ্লিষ্ট দেশের দূতাবাস নানা জটিলতা করে থকে। উপযুক্ত শিক্ষার্থীদের অনেক সময় ঠুনকো কারণ দেখিয়ে রিফিউজ করে দেয়া হয়। যার প্রতিকার আমাদের স্টুডেন্টরা পায় না। কিন্তু সরকারের কূটনৈতিক উইং থেকে বিষয়টার প্রতি লক্ষ্য রাখলে স্টুডেন্টরা উপকৃত হতে পারেন। উদাহরণ স্বরুপ, ইন্ডিয়াতে কোন স্টুডেন্টকে রিফিউজ করতে সংশ্লিষ্ট দেশের দূতাবাস খুবই সতর্কতা অবলম্বন করে থাকে। তারপরও রিফিউজের কারণ যথাযথ না হলে তারা এর প্রতিকার চেয়ে এর উপযুক্ত জবাব পেয়ে থাকে।

প্রশ্ন: এডুকেশন গ্লোবাল নেটওয়ার্কিংয়ের কারণে দেশের মেধা পাচার হচ্ছে কি না?

শামসুল ইসলাম সাগর: যদিও দেশের শিক্ষাব্যাবস্থা এগিয়ে চলেছে, তবুও আমি উদাহরনস্বরুপ বলব, বাংলাদেশে কিছুদিন আগে কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। এতে ঝুকিতে পড়ে অনেক শিক্ষার্থী। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিস্টেমে দোষ থাকলেও শিক্ষার্থীদের কোন দোষ ছিলনা। তারা আর্থিক ও মানসিক ক্ষতির ঝুকিতে পড়েছিলেন। আমাদের একটা লেভেল শেষ করার পর আরেকটা লেভেলে ঝড়ে পড়ছে লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থী। ওয়ার্ল্ড র‌্যাংকিংয়ে আমাদের তেমন ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ও নেই। তাই স্টুডেন্টরা এডুকেশন গ্লোবাল নেটওয়ার্কিংয়ের মাধ্যমে বিশ্বের সেরা সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে পারছে। সেখানে গিয়ে তারা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিশ্বের অন্যান্য শিক্ষার্থীদের সাথে উচ্চতর ডিগ্রী অর্জন করছেন। যারা বাংলাদেশ থেকে যাচ্ছেন তারা ঐ জায়গায়ই থেকে যাচ্ছেন তা মনে করার কারণ নেই। বরং দেশে ফিরে তারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে নতুন নতুন কনসেপ্ট ইমপ্লিমেন্ট করছেন। এসব বিষয়ে শিক্ষালাভ করা বাংলাদেশে হয়তো তেমন কোন প্রতিষ্ঠান নেই, কোন কোন ক্ষেত্রে থাকলেও সেখানে ভর্তির ক্ষেত্র থাকে সীমিত। এটাতে দেশই উপকৃত হচ্ছে। তাই এডুকেশন গ্লোবাল নেটওয়ার্কিংয়ের মাধ্যমে মূলত দেশই এগিয়ে যাচ্ছে।

প্রশ্ন: ব্যবসার চেয়ে সুনামের প্রতি আপনাদের আগ্রহটা বেশী কেন?

শামসুল ইসলাম সাগর: বিদেশে শিক্ষার জন্য বহু কনসালটেন্সি ফার্ম বাংলাদেশে আছে। অনেক প্রতিষ্ঠান কনসালটেন্সি বিষয়ে পর্যাপ্ত দক্ষতা না থাকা সত্ত্বেও শিক্ষার্থী ও অভিবাবকদের হয়রানি করে থাকেন। ক্ষেত্র বিষয়ে অনেকে অনেক বিষয়ে অসাধু কাজের সাথে জড়িয়ে পড়েন। আমরা নিজদের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার আলোকে শিক্ষার্থীদের সঠিক সেবা প্রদানে সর্বাত্মক চেষ্টা করে থাকি যাতে করে শিক্ষার জন্য বিদেশ গমনের এ জটিল প্রক্রিয়াটা খুব সহজে তারা সম্পন্ন করতে পারে। মূলত এ কারণেই তারা পরামর্শকদের কাছে আসে। এ বিষয়টাই আমরা গুরুত্ব দিয়ে থাকি। যাকে আপনি প্রফেশনালিজম বলতে পারেন।

[image link=”http://beanibazarnews24.com/wp-content/uploads/2018/04/30595058_1870370549922380_872230419557253120_n.jpg” img=”http://beanibazarnews24.com/wp-content/uploads/2018/04/30595058_1870370549922380_872230419557253120_n.jpg” caption=””]

প্রশ্ন: আপনার ভবিষ্যত পরিকল্পনায় কি আছে?

শামসুল ইসলাম সাগর: আমাদের এ প্রতিষ্ঠানের চিন্তাভাবনা ছাত্র-ছাত্রীদের কিভাবে সহজে আরো ভালো সার্ভিস দেয়া যায়। বিএসবি গ্লোবার নেটওয়ার্ক বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় কনসালটেন্সি ফার্ম। যা বাংলাদেশের সর্বপ্রথম ISO সনদপ্রাপ্ত। আমরা ভবিষ্যতে আরো অনেক দেশকে শিক্ষার্থীদের হাতের মুঠোয় এনে দিতে চাই। স্কলারশীপ যেখানেই থাকুক না কেন আমাদের স্টুডেন্টরা যেনো সেখানেই আবেদন করতে পারে।

প্রশ্ন: বাইরে পড়তে যাওয়া ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতি আপনার উপদেশ কি?

শামসুল ইসলাম সাগর: ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতি আমার উপদেশ থাকবে প্রথমত: আমাদের দেশের সব শিক্ষার্থী ইংরেজি মাধ্যমে অধ্যয়ন করতে বিদেশে গমন করে থাকেন। তাদের আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইংরেজি ভাষায় পরীক্ষাসহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে হয়। তাই দেশে থাকতেই তাদের ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা অর্জনে আরো বেশীকরে মনোযোগী হতে হবে।

দ্বিতীয়ত: শিক্ষার্থীরা যে দেশে যাওয়ার মন:স্থির করেছে সে দেশের মানুষ, কালচার, খাদ্যাভ্যাস ইত্যাদির উপর দেশে থাকতেই যথেষ্ট জানা ও প্রস্তুতি নিতে হবে। তা না হলে বাংলাদেশ থেকে অন্যদেশে যাওয়ার পর প্রস্তুতি না থাকার কারণে তাদের কিছুটা শারিরিক ও মানসিক ভোগান্তি হয়ে থাকে।

আমার তৃতীয় উপদেশটি অভিবাবকদের প্রতি: সেটা হল অভিবাবকরা যেনো বিদেশে গিয়ে লেখাপড়া করে সেখানকার প্রতিষ্ঠানের সার্টিফিকেট অর্জন পর্যন্ত অর্থিক সহযোগিতা প্রদানে অব্যাহত রাখেন। তাহলেই প্রবাসে অধ্যয়নে তার কাংখিত অবস্থানে পৌঁছানো সম্ভব।

চতুর্থ বিষয়টি আমার উপদেশ ও অনুরোধ: শিক্ষার্থীরা যে যে দেশেই উচ্চশিক্ষায় গমন করেন না কেন, তারা যেন আমাদের বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের সংস্কৃতিকে সেখানে সুউচ্চে তুলে ধরেন।

বিশেষ প্রতিনিধি: আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

শামসুল ইসলাম সাগর: আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ। সেইসাথে বর্তমানে বিদেশে অধ্যয়নরত সকল শিক্ষার্থী ও বিদেশে গমনেচ্ছুক সকল শিক্ষার্থীদের প্রতি আমার শুভেচ্ছা রইল।

শামসুল ইসলাম সাগরের সাথে যোগাযোগ: মোবাইল নাম্বার : ০১৭২০ ৫৫৭১১২

ই-মেইল: [email protected]

www.bdesh24.com