‘বুলেট’ খালেদ। সামনে-পিছনে আর কোনো বিশেষণ যোগ না করলেও সিলেটের মানুষ চেনে নেবেন কার কথা বলা হচ্ছে। বোলিংয়ে দুরন্ত গতির কারণেই পেসার সৈয়দ খালেদ আহমেদের নামের আগে ‘বুলেট’ শব্দটা সেঁটে গেছে।

খালেদ এখন অন্য এক জগতের ঘোরে আছেন। জাতীয় দলে প্রথমবারের মতো ডাক পাওয়া, তাও ক্রিকেটের অভিজাত সংস্করণে এবং সামনে অভিষেকের হাতছানি। ঘোরে না থাকাটাই অস্বাভাবিক!

জাতীয় দল ভিন্ন এক অনুভূতির জায়গা। সেই অনুভূতি কাজ করছে খালেদের মনেও। কিন্তু পা মাটিতেই রাখছেন সিলেট থেকে এখন পুরো বাংলাদেশের হয়ে যাওয়া এই পেসার। ৩ নভেম্বর থেকে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচ। এই প্রথম টেস্ট ক্রিকেট সিলেটের মাঠে গড়াচ্ছে। নিজের ঘরের মাঠের সাথে সাথে খালেদ আহমেদের সামনেও তাই অভিষেকের হাতছানি।

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশ টেস্ট দলে পেসার মোস্তাফিজুর রহমান, শফিউল ইসলাম ছাড়াও আছেন সিলেটের আরেক ছেলে আবু জায়েদ রাহী। একাদশে মোস্তাফিজের জায়গা নিয়ে প্রশ্ন নেই। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে টেস্টে অভিষিক্ত হওয়া রাহীর বোলিং খারাপ ছিল না মোটেও। তবে শফিউল বেশ কিছুদিন পর ফিরেছেন দলে। একাদশে জায়গা পেতে তাদের সাথে লড়তে হচ্ছে খালেদ আহমেদকে।

যদি সুযোগ পান, তবে ঘরের মাঠে অভিষেকটা রাঙাতে প্রস্তুত ৬ ফুট ২ ইঞ্চি উচ্চতার এই পেসার, ‘এতোদিন পর এই জায়গায় আসতে পেরেছি। জাতীয় দলে ডাক পাওয়ার অনুভূতিটা অন্যরকম। আমি গর্বিত।’

‘সিলেটে এটা প্রথম টেস্ট। আমি একাদশে থাকলেও আমারও অভিষেক হবে। সুযোগ পেলে অভিষেক ম্যাচটা স্মরণীয় করে রাখতে চাই। ভালো কিছু করতে আমি প্রস্তুত।’

সৈয়দ খালেদ আহমেদের জাতীয় দলে ডাক পাওয়াটা খুব বেশি বিস্ময়ের সৃষ্টি করছে না। খালেদ নিজেও অবাক নন ততোটা, ‘অবাক হইনি। গত কিছুদিন যেভাবে খেলছিলাম, তাতে

গেল কিছুদিন ধরেই লাইমলাইট ছিল তার ওপর। বাংলাদেশের হাইপারফরম্যান্স দলে ছিলেন, অস্ট্রেলিয়া সফরও করেছেন। সম্প্রতি শ্রীলঙ্কা ও আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশ ‘এ’ দলেও খেলেছেন খালেদ। গেল এশিয়া কাপের প্রাথমিক দলেও ছিলেন। মাশরাফি-সাকিবদের গুরু স্টিভ রোডসের চোখেও ছিলেন দীর্ঘদেহী খালেদ। বোলিংয়ে বৈচিত্র বাড়াতে এবং নিজের প্রতি যত্ন নিতে খালেদকে পরামর্শ দিয়েছিলেন রোডস। তাই ফিট থেকে পারফর্ম করতে থাকলে জাতীয় দলে ডাক পাবেন-এমনটাই ছিল অনুমিত।

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজের দল ঘোষণার প্রাক্কালে জাতীয় লিগে সিলেট বিভাগের হয়ে তার বিষাক্ত বোলিংয়ে এলোমেলো হয়ে গেল ঢাকা মেট্রো। উভয় ইনিংসে পাঁচটি করে ম্যাচে শিকার করলেন ১০ উইকেট। সাথে বোলিং বৈচিত্রতা নজর কাড়লো নির্বাচকদের। জাতীয় লিগে সিলেট-ঢাকা মেট্রো ম্যাচ চলাকালেই ঘোষিত হয় বাংলাদেশ টেস্ট দল। সিলেটকে ৩ রানের এক নাটকীয় জয় পাইয়ে মাঠ থেকে বেরিয়েই সুখবরটা পান খালেদ।

প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ২০ ম্যাচে ৪৮ উইকেট আর লিস্ট এ-তে ২২ ম্যাচে ৩৪ উইকেটের ক্যারিয়ার নিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রাখার অপেক্ষায় থাকা খালেদ আহমেদ বাংলাদেশ দলের হয়ে খেলতে চান দীর্ঘদিন।

খালেদ বলছিলেন, ‘বাংলাদেশকে অনেক দিন সার্ভিস দিতে চাই। আমার বোলিংয়ের যে স্ট্রেংথ, সেটা কাজে লাগাতে চাই।’

বাংলাদেশ দলে এখন সিলেটের দুই ছেলে-রাহী আর খালেদ। দলে খালেদ সুযোগ পাওয়ায় রাহীর প্রতিক্রিয়া কী ‘রাহী খুব খুশি যে আমি জাতীয় দলে এসেছি। আমরা দুজন একসাথে আছি। ও চাইছে আমি পারফর্ম করি, আমি চাইছি ও পারফর্ম করুক।’-বলছিলেন খালেদ।

রাহী খুশি, খালেদও খুশি। সিলেটের শীর্ষস্থানীয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী এই দুজন। আগে থেকেই নিজেদের মধ্যে জানাশোনা, বোঝাপড়া চমৎকার। দুজনেরই চাওয়া ম্যাচে যেন সুযোগ মেলে এবং ভালো পারফর্ম যেন করতে পারেন।