ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে ২০০৭ সনে চিটাগাং পলিটেকনিক্যাল ইন্সটিটিউট-এ ভর্তি হন মোঃ আল ইমরান। সকলের কাছে ইমরান নামে তিনি সমধিক পরিচিত। কলেজে দুই সেমিস্টার শেষ হবার পর মেধাবি ইমরানের পারিবারিক জীবনে দেখা দেয় আর্থিক অনটন। ফলে মেসভাড়া, লেখাপড়ার খরচ নিয়ে বিপাকে পড়েন তিনি।

বাবা একটি শিপিং কোম্পানিতে চাকুরি করতেন; সেখানকার বেতন দিয়ে ৫ জনের সংসারের পাশাপাশি ইমরানদের তিন-ভাইবোনের পড়াশোনার খরচ চালিয়ে যাওয়া তার পক্ষে দুস্কর হয়ে ওঠে। ফলশ্রুতিতে ইঞ্জিয়ার হওয়ার অলীক স্বপ্নের চাকা থেমে যায় ইমরানের। পরবর্তীতে মা-বাবা, ভাই-বোনের মুখে হাসি ফোটাতে ২০১২ সালের ৩ মার্চ ইমরান চলে আসেন সংযুক্ত আরব-আমিরাতের (দুবাই)। অতঃপর নতুন দিনে নতুন ভোরের স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে যেতে থাকেন তিনি। প্রবাস জীবনের নানা প্রতিকূলতা ও প্রতিন্ধকতা অতিক্রম করে জীবন সংগ্রামী হয়ে ওঠেন এই উদ্যমী তরুণ।

বর্তমানে তিনি আবুধাবির মোসাফফা শহরের একটি ক্যাটারিং কোম্পানিতে ফুড ওয়ার্কার হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। পরিশ্রম আর ধৈর্যের সঙ্গে বসবাস ইমরানের বাড়ি ফেনীর দাগন ভূইয়া উপজেলার মেহেদীপুর। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে ইমরান দ্বিতীয়। বর্তমানে তার উপরই পরিবারের সকল দায়িত্ব অর্পিত রয়েছে। আগামী জুলাই মাসে ইমরান এর ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে, এদিকে ভিসা ট্রান্সপারও বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে যে কোম্পানিতে আছেন সেখানেও ভিসা লাগানো সম্ভব হবে না তার।

কেবল ইমরান নয় এখানকার বেশিভাগ মানুষের একই সমস্যা। ভিসা জটিলতা ছাড়াও এখানে বাংলাদেশীদের চলাফেরায় রয়েছে মারাত্মক গোয়েন্দা নজরধারি।  এ নিয়ে এখানকার বৈধ-অবৈধ প্রবাসীদের মাঝে এক অন্যরকম আতংক বিরাজ করছে।

চলমান এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে হয়তো সংযুক্ত আরব আমিরাতে শীঘ্রই বিশাল শ্রমবাজার হারাবে বাংলাদেশ; প্রভাব পড়বে বৈদেশিক রেমিটেন্সের। অন্যদিকে হাজার হাজার পরিবারে নেমে আসবে অমানিশার অন্ধকার।

বিয়ানীবাজার নিউজ২৪.কম’র সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় ইমরান জানান, ‘খুব ইচ্ছে ছিল লেখাপড়া করে ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার কিন্তু তা আর হলো না। এখন একটাই প্রত্যাশা ভালো কোনো কোম্পানিতে কয়েক বছর চাকুরি করে কিছু টাকা সঞ্চয় করে দেশে গিয়ে ব্যবসা করবো।’ তিনি বলেন, পরবাসের জীবন খুব কষ্টের, দেশে দু’বেলা দু’মুঠো খেয়েও মা, মাটি ও সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে থাকা অনেক আনন্দ এবং গৌরবের।